E-Paper

অসহায়ের সেবায় অক্লান্ত টোটোচালক

শহর ঘেঁষা হাটকালনা পঞ্চায়েতের গোয়ারা মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা ৫৫ বছর তারক বিশ্বাসের টোটোতে উঠলে ভাড়া দিতে হয় না অসহায় মানুষকে।রাস্তায় অসুস্থ, ভবঘুরে দেখলে টোটোয় তুলে তিনি পৌঁছে দেন হাসপাতালে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৩০
টোটো নিয়ে তারক।

টোটো নিয়ে তারক। —নিজস্ব চিত্র।

কয়েকশো যানবাহনেকর ভিড়ে তাঁর টোটোকে চেনা যায়। টোটোর সামনে, পিছনে ঝোলে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা ‘অন্ধ, বিকলাঙ্গ, অনাথ আশ্রমে থাকা ভাইবোন, বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মানুষদের জন্য বিনামূল্যে টোটো।’

শহর ঘেঁষা হাটকালনা পঞ্চায়েতের গোয়ারা মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা ৫৫ বছর তারক বিশ্বাসের টোটোতে উঠলে ভাড়া দিতে হয় না অসহায় মানুষকে।রাস্তায় অসুস্থ, ভবঘুরে দেখলে টোটোয় তুলে তিনি পৌঁছে দেন হাসপাতালে। মল্লিকপাড়ায় টিনের পুরনো ঘরে স্ত্রী সবিতা এবং বছর সাতেকের ছেলে রত্নদীপকে নিয়ে তারকের সংসার। শুরুতে অবশ্য তিনি টোটো চালাতেন না। দমদম ক্যান্টনমেন্টে একটি সংস্থায় কাজ করতেন। করোনা-কালে কাজ হারিয়ে টোটো কিনে যাত্রী পরিবহণ শুরু করেন তিনি। ছেলেকে সকাল ১০টা নাগাদ স্কুলে পৌঁছে দিয়ে টোটোয় যাত্রী পরিবহন শুরু করেন তিনি। রাতে যখন ঘরে ফেরেন, তখন তাঁর পকেটে কোনও দিন থাকে ২৫০ টাকা, কোনও দিন তারও কম।

তারকের পরিচিতরা জানান, রাস্তায় অন্ধ, ক্লান্ত ভিখারি, বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়া কাউকে দেখলে নিজের টোটোয় বিনা ভাড়ায় তাঁদের পৌঁছে দিয়ে আসেন গন্তব্যে। কিনে দেন খাবার। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মা-বাবা বলে সম্বোধন করে তাঁদের পা স্পর্শ করে প্রণামও করেন অনেককে। শনিবার কালনার লিচুতলা এলাকায় অসুস্থ এক ভবঘুরেকে ঘোরাফেরা করতে দেখে টোটো থামান তারক। তাঁকে টোটোয় চাপিয়ে পৌঁছে দেন কালনা মহকুমা হাসপাতালে। এখানেই তাঁর দায়িত্ব শেষ হয়নি। বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে থালা, বাটি, গ্লাস তুলে দেন ওই ভবঘুরের হাতে।

কালনা শহরের বাসিন্দা লক্ষ্মণ পাল তিনি বলেন, ‘‘ওই ভবঘুরের দেহের পচা গন্ধে যখন তাঁর ধারেকাছে কেউ ঘেঁষছিলেন না, তখন ওই টোটো চালকের আন্তরিকতা দেখে আমি হতবাক হয়েছি। জেনেছি, বহু অসহায় মানুষকে প্রতিদিন বিনা ভাড়ায় টোটোতে চাপিয়ে উনি গন্তব্যে পৌঁছে দেন।আজকাল এমন মানুষ সচরাচর দেখা যায় না।’’ শহরের এক টোটো চালক গোপাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিনা পয়সায় অসহায় মানুষকে টোটোয় তুলতে গিয়ে ওর রোজকার কমে যায়।’’ কয়েক দিন আগে কৃষ্ণদেবপুর পঞ্চায়েত এলাকার একটি ইটভাটার কর্মীদের খিচুড়ি খাওয়ান তারক।

টোটো চালানোর পাশাপাশি তারকের নেশা গান বাজনা। বিভিন্ন আসরে বাউল, লোকগীতি গাইতেও দেখা যায় তাকে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত। তাঁকে নিয়ে ২০১৪ সালে ‘গর্বের রত্ন দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’ নামে অ্যালবাম প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও কোনও দিন টোটোয় প্রচুর অসহায় মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কারণে আয় কমে যায়। তবে তাতে আমার আক্ষেপ নেই। যতদিন বাঁচব, অসহায় মানুষের সেবা করে যাব।’’ তাঁর এই কাজকে কী চোখে দেখেন শহরের মানুষ? তারকের কথায়, ‘‘প্রথমে বাড়ি থেকে মৃদু আপত্তি এসেছিল। পথে ঘাটে অনেকে টিটকিরিও দিয়েছিলেন। এখন অবশ্য তাঁদের পাশে পেয়েছি।’’

হাটকালনা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রঞ্জিত সেন বলেন, ‘‘অসহায় মানুষের থেকে ভাড়া নেন না ওই টোটো টালক। কেউ বিপদে পড়লে এগিয়ে আসেন। পঞ্চায়েত ওঁর পাশে রয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Toto Help

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy