Advertisement
E-Paper

টক্কর জোর, বুঝছে দু’পক্ষ

শাসকের আস্থা উন্নয়ন আর শক্তিশালী সংগঠনে। বিরোধীরা সরব শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর বেনিয়মের অভিযোগে। এই লড়াইয়ে ভর করেই কালনা বিধানসভা কেন্দ্রে ভাল ফলের আশা করছে দু’পক্ষ।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪০

শাসকের আস্থা উন্নয়ন আর শক্তিশালী সংগঠনে। বিরোধীরা সরব শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর বেনিয়মের অভিযোগে। এই লড়াইয়ে ভর করেই কালনা বিধানসভা কেন্দ্রে ভাল ফলের আশা করছে দু’পক্ষ।

২০০৬ সাল পর্যন্ত বামেদের দুর্গ ছিল এই বিধানসভা এলাকা। সে বার সিপিএম প্রার্থী অঞ্জলি মণ্ডল জয়লাভ করেছিলেন প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে। তবে তারপর থেকেই ধসতে থাকে বামেদের ভোট ব্যাঙ্ক। ২০১১সালে তৃণমূল জয়লাভ করে ১২ হাজার ৬৩৭ ভোটে। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ব্যবধান বেড়ে হয় ১৯ হাজার ৭৫১। শাসকদল ছাড়াও নির্বাচনে ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ায় বিজেপি। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপি যেখানে পেয়েছিল ৬,০২১টি ভোট, লোকসভায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৯৬১ ভোটে।

কালনা বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার প্রায় দু’লক্ষ। যার মধ্যে রয়েছে কালনা পুরসভা, কালনা১ ব্লকের তিনটি এবং কালনা ২ ব্লকের আটটি পঞ্চায়েত। অর্থাৎ ভোট ব্যাঙ্কের বেশিটাই কালনা ২ ব্লকে। সেখানকার সাতটি পঞ্চায়েতে শাসকদল ক্ষমতায় রয়েছে। একমাত্র বড়ধামাস পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম।

গত বিধানসভায় অবশ্য প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ভোটে সিপিএম প্রার্থী সুকুল শিকদার হেরেছিলেন তৃণমূলের বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর কাছে। প্রায় ৮৫ হাজার ভোট পান বিশ্বজিৎবাবু। তৃণমূল মোট ভোট পায় প্রায় ৫০ শতাংশ। সেখানে সিপিএম ৪৩ শতাংশ ভোট পায়। বিজেপির ভোট ছিল সাড়ে তিন শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আবার তৃণমূল ৪৬ শতাংশ, সিপিএম ৩৫ শতাংশ ভোট পায়। বিজেপির ভোট ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। এ বার অবশ্য দু’দলেরই নজর ওই ভোটে।

প্রার্থীরাও এ বার দু’দলেই চেনা মুখ। তৃণমূলের প্রার্থী বিদায়ী বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। সিপিএমের প্রার্থীও দলের কালনা জোনালের সম্পাদক সুকুল শিকদার। আর বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পেশায় শিক্ষক নিউটন মজুমদার। ইতিমধ্যেই প্রচার চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছে গিয়েছে। শাসক-বিরোধী দু’দলই দেওয়াল লিখনে হাতিয়ার করেছে ছড়াকে। কার্টুন এঁকে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজসাথীর মতো প্রকল্পগুলিও তুলে ধরছে শাসকদল। প্রার্থী বিশ্বজিৎবাবুও নদী বক্ষে নৌকায় চড়ে, দোলের দিন আবীর খেলে, দুপুরের চড়া রোদে মাঠে নেমে প্রচার শুরু করে দিয়েচেন। তাঁর অনুগামীরাও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভোট চেয়ে সরব। প্রতিদিনই সেখানে প্রচারে প্রার্থী কোথায়, কিভাবে কাটাচ্ছেন তার ছবি এবং তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। শুরু হয়ে গিয়েছে হেবিওয়েট নেতাদের নিয়ে জনসভাও। কালনা ২ ব্লকের তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা বিশ্বজিৎবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট প্রণব রায়ের দাবি, উন্নয়নের পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক শক্তিও অন্যদের থেকে বেশি। লোকসভা ভোটের থেকেও বিধানসভায় ভাল ফল করবে দল।

বামেরাও সমানে টক্কর দিয়ে ছড়া এবং কার্টুনে দেওয়াল ভরিয়েছে। শাসকদলকে কড়া আক্রমণও রয়েছে। তাতে কোথাও তুলে ধরা হয়েছে নারদ স্টিং অপারেশন, সারদা-কাণ্ড কোথাও আবার টেট কেলেঙ্কারি হাতিয়ার বামেদের। তৃণমূলের চেয়ে প্রচার কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও গোড়া থেকেই বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দিয়েছে বামেরা। তাদের মূল স্লোগান, ‘নিজের ভোট নিজে দিন। ভোট লুঠ রুখে দিন।’ সঙ্গে গ্রামে গ্রামে মিছিল, পথসভা করে তৃণমূলের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও সরব হয়েছে তারা। সিপিএমের অভিযোগ, একশো দিনের কাজ নিয়ে বহু পঞ্চায়েতে দুর্নীতি হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অজস্র জায়গায় কাজ না করেই টাকা তুলে নিয়েছেন। দুর্নীতি হয়েছে ইন্দিরা আবাস যোজনাতেও। এ ছাড়া অতিবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ার পরে যে ক্ষতিপূরণ বিলি হয়েছে, তা নিয়েও বামেরা তোপ দাগতে শুরু করেছে শাসক দলকে। তাদের অভিযোগ, সাধারণ চাষিরা কেউ জমির তুলনায় স্বল্প টাকা পেয়েছেন। আবার কোনও কোনও চাষি জমি থাকা সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণ পাননি। পূর্বসাতগাছিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় ভাগীরথীর পাড়ের মাটি চুরি নিয়েও বামেরা কাঠগড়ায় তুলেছে তৃণমূলকে।

সিপিএম কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে তৃণমূলের অজস্র দুর্নীতি দেখে সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ। এ বার সাধারণ মানুষ যদি ভোট দেওয়ার মতো পরিবেশ পায়, তাহলে ফল অন্যরকম হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, আগের নির্বাচনে নিয়ে দল চিন্তিত নয়। কারণ সেখানে দেদার ভোট লুঠের ঘটনা ঘটেছিল।

assembly election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy