Advertisement
E-Paper

পোস্তবাটা, পান্তাভাতের ভোগ

বন্যায় ভেসে গিয়েছিল ঘর গৃহস্থালি। ভোগ রান্নার সুযোগটুকু পর্যন্ত ছিল না। থাকার মধ্যে জমিদার বাড়িতে ছিল পান্তাভাত। কলাই-পোস্ত বাঁটা সহযোগে সেই পান্তাভাতই ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়েছিল মায়ের পায়ে। সে কোন কালের কথা।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৩১
ময়ূরেশ্বরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের প্রতিমা।— সোমনাথ মুস্তাফি

ময়ূরেশ্বরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের প্রতিমা।— সোমনাথ মুস্তাফি

বন্যায় ভেসে গিয়েছিল ঘর গৃহস্থালি। ভোগ রান্নার সুযোগটুকু পর্যন্ত ছিল না। থাকার মধ্যে জমিদার বাড়িতে ছিল পান্তাভাত। কলাই-পোস্ত বাঁটা সহযোগে সেই পান্তাভাতই ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়েছিল মায়ের পায়ে। সে কোন কালের কথা। কিন্তু আজও গ্রামের জমিদার বাড়ির পোস্ত-কলাই বাটা-সহ পান্তা ভাতের ভোগ দেওয়ার প্রথা চালু আছে ময়ূরেশ্বরের সেকপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয়। আর সেই ভোগ খাওয়ার পরে পুজো শেষে চারদিনের নিরামিষ ব্রত ভাঙেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা।

প্রচলিত রয়েছে, একসময় নাকি ওই গ্রামে রাখালচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জমিদারী ছিল। চট্টোপাধ্যায়রা ছিলেন বৈষ্ণব। তাঁদের নিজে হাতে মূর্তি পুজোর চল ছিল না। কিন্তু সেসময় তারা ছাড়া গ্রামে অন্য কোনও ব্রাহ্মণ পরিবারের বাস ছিল না। তাই গ্রাম দেবতা-সহ বিভিন্ন পুজো প্রচলনের জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্রাহ্মণদের জায়গা জমি দিয়ে নিয়ে আসেন। তাঁদের একজন ছিলেন নদীয়ার মাটিয়ারির বিষ্ণুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবারে বন্যায় ভাসছে গ্রাম। অষ্টমীর সকালে বন্যায় একটি কাঠামো আসে বিষ্ণুবাবুর দরজায়। তিনি সেই কাঠামো তুলে খবর দেন জমিদারবাবুকে। সে সময় গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো ছিল না। তাই জমিদারবাবু পুজো প্রচলনের নির্দেশ দেন।

সেই মতো নিজের বাড়িতেই নবমীর কাঠামো পুজো শুরু করেন। পুজো তো চালু হল। কিন্তু ভোগের কী হবে?

শোনা যায়, জমিদারবাবু বলেছিলেন, ‘‘আমরা তো মায়েরই সন্তান। আমরা যদি পান্তা খেয়ে থাকতে পারি তাহলে মা’ও তাই খাবেন।’’ জমিদারবাড়ি থেকেই আসে কলাই, পোস্ত বাঁটা-সহ পান্তাভাত। ভোগ হিসাবে তা দেবীকে দেওয়া হয়। সেই প্রথা আজও চলছে। আজও ওই ভোগ-প্রসাদ খাওয়ার পরই চার দিনের নিরামিষ খাওয়ার ব্রত ভাঙেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা।

কর্মসূত্রে আজ উভয় পরিবারের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। কিন্তু সেদিনের সেই পুজো দুই পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে যোগসূত্র রক্ষা করে চলেছে। কর্মসূত্রে সাঁইথিয়ায় থাকেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজস্থানের কোটাতে থাকেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। মহম্মদবাজারের বিষ্ণুপুরে থাকেন রামজীবন চট্টোপাধ্যায়। নারায়ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থাকেন সাঁইথিয়ায়। তাঁরা জানান, যে যেখানেই থাকুক না কেন, পুজো উপলক্ষ্যে গ্রামে ফেরা চাই-ই চাই। পুজো চারদিন দুই পরিবার একাত্ম হয়ে যায়।

গৃহবধু মনিকা চট্টোপাধ্যায়, রেবতী বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান, পুজো চারদিন আমরা দুই পরিবারের গৃহবধূরা চুটিয়ে গল্প করি। এ জন্য সারা বছর গল্প জমিয়ে রাখি।

৮৫ বছরের অশ্বিনী বন্দ্যোপাধ্যায়, ৮০ বছরের স্বর্ণলতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান, পুরুষানুক্রমে পুজোই আমাদের দুই পরিবারের সৌহার্দ্যের ঐতিহ্যের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy