Advertisement
১৭ মে ২০২৪

যন্ত্র এলেও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টার

ভেন্টিলেশন, এন্ডোস্কোপি থেকে অ্যানাস্থেসিয়া— অনেক কিছুর দামি যন্ত্র বছরখানেক ধরে অনাময়ে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। বর্ধমান শহর লাগোয়া বামবটতলার দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে এই হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার গড়ে তোলার জন্য প্রায় তিন কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্র কিনেছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৬
Share: Save:

দামি যন্ত্র কেনা হয়ে গিয়েছে। পরিদর্শন হয়েছে বেশ কয়েক বার। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশালিটি অনাময় হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার চালু হয়নি এখনও।

ভেন্টিলেশন, এন্ডোস্কোপি থেকে অ্যানাস্থেসিয়া— অনেক কিছুর দামি যন্ত্র বছরখানেক ধরে অনাময়ে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। বর্ধমান শহর লাগোয়া বামবটতলার দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে এই হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার গড়ে তোলার জন্য প্রায় তিন কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্র কিনেছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। রাজ্য ও কেন্দ্রের স্বাস্থ্য দফতরের দল বারবার পরিদর্শন করে গেলেও ট্রমা সেন্টার কবে চালু হবে, সে ব্যাপারে সবাই দিশাহীন। এ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষও মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

প্রায় ন’বছর আগে এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ট্রমা সেন্টার তৈরির জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার চুক্তি করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী, সোনালি চতুর্ভুজের অন্তর্গত এক্সপ্রেসওয়ে বা ২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে প্রতি ২০০ কিলোমিটার অন্তর একটি করে লেভেল ২ ট্রমা সেন্টার তৈরি করার কথা কেন্দ্রের। যার পরিচালনার ভার থাকবে রাজ্যের উপরে। ওই চুক্তি মোতাবেক বাম আমলেই ঠিক হয়, অনাময় হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার চালু করা হবে। ২০০৯ সালের ১৯ মে কেন্দ্র প্রথম পর্যায়ে বর্ধমান মেডিক্যালের হাতে ৮০ লক্ষ টাকা তুলে দেয়। সেই টাকায় অনাময় হাসপাতালের এক পাশে ট্রমা সেন্টারের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়।

ট্রমা সেন্টারের পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষের রিপোর্ট পাওয়ার পরে ২০১২ সালের ৪ মে কেন্দ্র আধুনিক যন্ত্র কেনার জন্য ৩ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। তার মধ্যে প্রায় তিন কোটি টাকার যন্ত্র কিনে ফেলেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ওই সব দামী যন্ত্রগুলি বেশ কয়েক মাস ধরে অনাময়ে পড়ে রয়েছে। বাকি টাকার যন্ত্র কেনার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের একটি সংস্থাকে বরাতও দেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

তবু ট্রমা সেন্টারটি চালু হচ্ছে না কেন? স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, লেভেল ২ পর্যায়ের ট্রমা সেন্টার তৈরির জন্য অস্থি, অ্যানাস্থেটিস্ট, শল্য ও স্নায়ু রোগের চিকিৎসক বাধ্যতামূলক। বর্ধমানের ট্রমা সেন্টারের জন্য ওই সব বিভাগের তিন জন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদের অনুমোদন মিলেছে। এ ছাড়াও রেডিওলজিস্ট, ল্যাব-টেকনেশিয়ান দু’জন করে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও সুইপার নেওয়ার অনুমোদন মিলেছে। ট্রমা সেন্টারে সর্বক্ষণ চিকিৎসক থাকা জরুরি। সে কথা মাথায় রেখে ৮ জন আরএমও রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও ৪০ জন নার্স দেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

সম্প্রতি কেন্দ্রের চার জনের এক প্রতিনিধি দল ট্রমা সেন্টারের পরিকাঠামো দেখে যান। তাঁরা দেখেন, অস্ত্রোপচারের ঘরে অ্যানাস্থেসিয়া করার দামী যন্ত্র পড়ে রয়েছে। বাক্সবন্দি হয়ে রয়েছে এন্ডোস্কোপি-ল্যাপরোস্কোপির আধুনিক যন্ত্র। একই অবস্থা ভেন্টিলেশন থেকে স্নায়ুর শল্য চিকিৎসার উন্নত যন্ত্রগুলির।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সুপার উৎপল দাঁ কেন্দ্রের ওই দলটিকে জানান, পরিকাঠামোগত ভাবে ৯৫-৯৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা অন্য কর্মীর অভাবে ট্রমা সেন্টারটি চালু করা যাচ্ছে না। যা শুনে কেন্দ্রের ওই দলের প্রধান, দিল্লির স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক উৎসুক দত্ত তাঁদের জানান, গোটা দেশেই ট্রমা সেন্টারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্য ও কেন্দ্রকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE