Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Kazi Nazrul University

শিক্ষককে নিগ্রহের নালিশ, অস্বীকার উপাচার্যের

গত ১৩ মার্চ উপাচার্য সাধনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অগণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। তার পরে, টানা ২৫ দিন ধরে চলছে অবস্থান-বিক্ষোভ।

বৃহস্পতিবার আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

বৃহস্পতিবার আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:১০
Share: Save:

উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী ফের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারলেন না। উপাচার্যকে রজনীগন্ধার মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে যান এক শিক্ষক। সে সময় ওই শিক্ষককে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। উপাচার্য অভিযোগ মানেননি। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের ঘটনা। পরে পুলিশের ঘেরাটোপে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার করা হয়।

গত ১৩ মার্চ উপাচার্য সাধনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অগণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। তার পরে, টানা ২৫ দিন ধরে চলছে অবস্থান-বিক্ষোভ।তাঁদের তিনটি দাবি, উপাচার্যকে ইস্তফা দিতে হবে। উপাচার্য হিসাবে নিয়োগপত্র দেখাতে হবে এবং রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিক্ষোভের জেরে গত ১৪ মার্চ থেকে নিজের কার্যালয়ে বসতে পারেননি উপাচার্য।

এ দিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকেন। প্রশাসনিক ভবনে তিনি তাঁর কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে বিক্ষোভ চরমে ওঠে। ইংরেজি বিভাগের প্রধান শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় উপাচার্যের গলায় রজনীগন্ধার মালা ও চন্দনের ফোঁটা পরাতে যান। সঙ্গে মিষ্টি খাইয়ে অভ্যর্থনা জানাতে যান। তাঁর সঙ্গে কয়েক জন থালা বাজাতে থাকেন।উপাচার্যকে মালা পরিয়েও দেন শান্তনু। পাল্টা সে মালা শান্তনুকে পরান উপাচার্য। শান্তনুর সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে অভিযোগ, “আমি উপাচার্যকে মিষ্টি খাওয়াতে গেলে, উনি আমাকে তা খাইয়ে দেন। মিষ্টি আমার শ্বাসনালীতে আটকে যাওয়ায় অজ্ঞান হয়ে যাই।” তাঁকে শুশ্রূষা করেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। ‘অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ সাধারণ সম্পাদক গৌতম মাইতি একটি বিবৃতি জারি করে দাবি করেছেন, শান্তনু উপাচার্যের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন। ‘অধ্যাপক সংহতি মঞ্চের’ সম্পাদক মানস জানাও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে অভিযোগ করেছেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে চাইলে ছাত্র-শিক্ষকদের বাধার মুখে পড়েন। এই ঘটনায় উপাচার্যের দ্বারা অধ্যাপক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় চূড়ান্ত ভাবে নিগৃহীত হন।’ওই বিবৃতিতে এই ঘটনার তদন্ত চাওয়া হয়েছে। যদিও উপাচার্য অভিযোগ মানেননি। তাঁর বক্তব্য, “ভিত্তিহীন কথাবার্তা। উনি আমাকে মিষ্টি খাওয়াতে চাইছিলেন। তা খেতে গেলে আমার হার্টঅ্যাটাক হয়ে যেতে পারত।”

এই পরিস্থিতিতে উপাচার্য এ সব অগ্রাহ্য করে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে যান। তবে তিনি বিক্ষোভের জেরে আর ঢুকতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার করে আনে।

এ দিন উপাচার্য ফের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি দাবি করেন, “দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের বাধায় তা করা গেল না। পড়ুয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ পণ্ড হচ্ছে।” সাধন জানান, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রয়োগের জন্য রাজ্য সরকার নির্দেশিকা জারি করেছে। সে জন্য এ দিন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তাঁর সংযোজন: “এ দিনের ঘটনার পরে আসানসোলে আমার আবাসনেএগজ়িকিউটিভ কমিটির বৈঠক করেছি। আমি যে নিজের কার্যালয়ে ঢুকতে পারছি না, তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করেছি।” এই পরিস্থিতিতে তাঁর কী করণীয়, তা উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে জানতে চাইবেন বলেও জানান। পাশাপাশি, উপাচার্যের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিয়োগের তদন্ত হোক। যদিও, আন্দোলনকারীদের তরফে ওয়েবকুপার বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সজল ভট্টচার্যের দাবি, “শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং পড়ুয়া সকলে মিলেই উপাচার্যের বিরুদ্ধে তাঁর কৃতকর্মের প্রতিবাদ করছেন। বৃহস্পতিবারও তারই প্রকাশদেখা গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kazi Nazrul University Asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE