প্রচারে নার্গিস বানো ও রুনু দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথম দাবিই হল উড়ালপুল।
হবে নাই বা কেন, বাসিন্দাদের বক্তব্য— রেলশহর অন্ডালে ঢুকতে গেলে সংকীর্ণ ওই ‘রেল ট্যানেল’ দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় কই?
রানিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী নার্গিস বানো মানছেন, ‘‘আর পাঁচটা দাবি তো রয়েছেই। কিন্তু, প্রচারে গেলেই বারেবারেই নানা প্রশ্ন উঠে আসছে ওই ট্যানেল নিয়ে।’’ তিনি যোগ করছেন, ‘‘এই ট্যানেলের দুটি মুখ থাকলেও একটি মুখ দিয়ে বড় গাড়ি চলতে পারে না। বাসিন্দারা মনে করছেন উড়ালপুল এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।’’ অন্য দলের প্রার্থীরাই মানছেন — ‘‘ওটাই একমাত্র দাওয়াই।’’
শুধু কি রেল ট্যানেল? উখরায় দমকল কেন্দ্র, শঙ্করপুর মোড়ে উড়ালপুল, উখরা বাজারে শৌচালয়-সহ একগুচ্ছ দাবি উঠছে রানিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের ঘিরে। বিধিভঙ্গের কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় বার্তাও দিয়ে রাখছেন তাঁরা। উখরা বণিক সংগঠনের সদস্য সীতারাম বার্নোয়াল জানান, উখরা বাজার বহু প্রাচীন। ৫৬টি গ্রামের মানুষের প্রধান বাজার এটাই। এত গুরুত্বপূর্ণ বাজারেও নেই কোনও শৌচালয়। বয়স্ক ও মহিলাদের অসুবিধায় পড়তে হয়।
উঠে আসছে দমকল কেন্দ্রের দাবিও। সব দলীয় প্রার্থীর কাছেই সে দাবি রেখেছেন স্থানীয়েরা। সীতারামবাবুর কথায়, ‘‘এখানে আগুন লাগলে ভরসা সেই রানিগঞ্জ বা দুর্গাপুর। বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কিছু করার থাকবে না। অত দূর থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসতে আসতেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।’’
বণিক সংগঠনের নিদান, দমকল কেন্দ্র করার আগে বাজার এলাকার সংযোগকারী রাস্তার ক্রসিংগুলো থেকে বিদ্যুৎবাহী ও টেলিফোনের তার সব সরিয়ে দিতে হবে। কেননা, তারগুলো এমন ভাবে লাগানো আছে, যার জেরে আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন বাজারে ঢোকানোই যাবে না। বিড়ম্বনা রয়েছে শঙ্করপুর মোড়ের রেলগেট নিয়েও। সেখানে উড়ালপুল জরুরি। কারণ শুধু উত্তরবঙ্গের সঙ্গে অন্যতম ট্রেন যোগাযোগই নয়, ইসিএল-এর এক বড় অংশের কয়লা পরিবহণের রাস্তা হিসাবে এই রেলপথ ব্যবহার করা হয়। রেলগেট এলাকায় যানজটও হয়। ফলে ক্ষোভ রয়েছে এখানেও।
বাজপেয়ি মোড় শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসাবে পরিচিত। এখানে কোনও যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই। গ্রীষ্মে, বর্ষায় সব থেকে বেশি অসুবিধায় পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের। উখরা দাস পাড়া থেকে মুসলিম পাড়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা পাকা করার দাবিও রয়েছে। মধুডাঙা থেকে দক্ষিণখণ্ড রাস্তায় গণ-পরিবহণের কোনও পরিকাঠামোই নেই। মদনপুর থেকে অন্ডাল রেলশহর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় যোগাযোগের জন্য বাস পরিষেবার হালও খারাপ। আরও বেশি বাসের ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছেন স্থানীয়েরা।
তৃণমূল প্রার্থী নার্গিস বানোর আক্ষেপ, ‘‘উখরার জল নিয়ে জনে জনে বলতে হচ্ছে জল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। পাইপ লাইন পাতার কাজও প্রায় শেষ। শুধু রেললাইনের নীচ দিয়ে দুটি জায়গায় পাইপ লাইন পাতার অনুমতি দিতে রেল দেরি করায় নির্ধারিত সময়ে জল পৌঁছে দিতে পারলাম না!”
সিপিএম প্রার্থী রুণু দত্ত জানান, কাজোড়ায় জল সঙ্কট থেকেই গিয়েছে। তিনি বলেন, “কাজোড়ার মানুষ এ নিয়ে তৎপর হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরাই এই এলাকায় জলের ব্যবস্থা করেছিলাম। তবে তাতে সুরাহা মেলেনি। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আমরা খনি এলাকায় জল সমস্যা মেটাতে এলাকাগত ভাবে ছোট ছোট জল প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে ছিলাম। ক্ষমতায় ফিরলে প্রকল্পগুলো দ্রুত রূপায়িত হবে।”
বিজেপি প্রার্থী মনীশ শর্মাকে সম্প্রতি রানিগঞ্জের বাবুপুর নেপালি ধাওড়া সংলগ্ন এলাকারা বাসিন্দারা ঘিরে ধরে জানান, কোলিয়ারির ভূগর্ভ থেকে ফেলে দেওয়া জল একটি নর্দমা দিয়ে বয়ে যায়। সেই জল তাঁরা ব্যবহার করতে বাধ্য হন। পাইপ লাইনে পরিস্রুত পানীয় জল দেওয়ার দাবি ওঠে। মনীশবাবুকে ঘিরে এলাকাবাসী সাফ জানিয়ে দেন, তাঁরা দল দেখবেন না। যিনি বা যে দল জল এনে দেবে, তাঁকেই ভোট দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy