Advertisement
E-Paper

পেট ভরিয়ে পাশে থাকছেন ওঁরা

ভাতের ব্যবস্থা করে দেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। শুধু সুনিয়া বেগম নন, তার মতো আরও অনেকেরই ভরসা এখন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৩:১৪
হাসপাতালের সামনে খাবার বিলি করছেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের সামনে খাবার বিলি করছেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। নিজস্ব চিত্র

স্বামী ‘বন্দি’ হায়দরাবাদে। শ্বশুর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি। একাই ঘুরে ঘুরে খাবার খুঁজছিলেন বীরভূমের মহম্মদবাজারের সুনিয়া বেগম। কিন্তু ‘লকডাউন’-এর জেরে হাসপাতালের বাইরের সব পাইস হোটেল, দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। ক্যান্টিনে খেতে গিয়েও দামে পোষায়নি। শুকনো মুড়ি খেয়েই দিন কাটছিল তাঁর। ভাতের ব্যবস্থা করে দেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। শুধু সুনিয়া বেগম নন, তার মতো আরও অনেকেরই ভরসা এখন তাঁরা।

ওই চালকদের দাবি, সারা বছর রোগীদের পরিবারের থেকেই ভাত জোটে তাঁদের। এখন প্রতিদান দেওয়ার সময়। এক মাস ধরে প্রতিদিন শ’পাঁচেকেরও বেশি লোককে রান্না করা খাবার বিলি করছেন তাঁরা। পাশে দাঁড়িয়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা পরিষদের মেন্টর উজ্জ্বল প্রামাণিকেরা। স্বপনবাবুর কথায়, ‘‘মহৎ উদ্যোগ। ওই চালকদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানোই আছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুরুতে কয়েকজন মিলে তহবিল গঠন করেন। অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের বিষয়টি জানানো হয়। তাঁরাও পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বর্ধমান পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সুশান্ত প্রামাণিকের সঙ্গে বৈঠক করার পরে, ৩ এপ্রিল থেকে হাসপাতালের এক নম্বর গেটের ‘অ্যাম্বুল্যান্স ও মারুতি চালক অ্যাসোসিয়েশন’-এর ৪০ সদস্য রোগীর পরিজন-সহ এলাকার গরিব মানুষদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিলির কাজে নেমে পড়েন। পরে অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের আরও একটি সংগঠন রোগীর পরিজনদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে শুরু করে।

অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা জানান, এক দিন মুরগির মাংস দেওয়া হয়েছিল। তবে বেশির ভাগই ভাত, সয়াবিন, ডিম, আলু-পটল, ঢেঁড়শের তরকারি দেওয়া হয়। সকাল ৬টা থেকে হাসপাতালের ওই গেটের পাশে তাঁরাই রান্না শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে খাবার বিলি শুরু হয়। অ্যাম্বুল্যান্স চালক শেখ বাবলু, শেখ কুরবান, তাপস মহান্তদের দাবি, “আগের মতো না হলেও কিছু রোজগার হচ্ছে। সেখান থেকেই কেউ দু’শো, কেউ দু’হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে তহবিল গড়ি। অ্যাম্বুল্যান্সের মালিকেরাও সাহায্য করেন। এতে শান্তি পাচ্ছি।’’ অ্যা

অ্যাম্বুল্যান্স মালিক শেখ চাঁদু, শেখ সানি, কৌশিক মাঝিল্যারাও বলেন, “নগদ টাকা দিইনি। কেউ চাল, কেউ আনাজ, কেউ আলু দিয়ে সহযোগিতা করছি।’’ অ্যাম্বুল্যান্স ইউনিয়নগুলির নেতা, বিদায়ী কাউন্সিলর সুশান্ত প্রামাণিক বলেন, “আমাদের পাড়ার সহৃদয় ব্যক্তি থেকে খোসবাগানের ব্যবসায়ীরা সাহায্য করে চলেছেন। কিন্তু মূল খরচটা করছেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরাই। লকডাউন যত দিন চলবে, তত দিন যাতে এই ব্যবস্থা থাকে তার জন্য বলা হয়েছে।’’

জামালপুরের রফিক সাউ, বর্ধমানের সড্ড্যা গ্রামের বিভা প্রামাণিকদের কথায়, “বাড়ির লোক হাসপাতালে ভর্তি। কয়েকদিন ধরে এখানেই রাত কাটাচ্ছি। অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা না থাকলে, না খেতে পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তাম।’’

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত বলেন, “অভুক্তদের পেটে খাবার জোগাচ্ছেন ওঁরা। এর চেয়ে ভাল কাজ এখন আর কী হতে পারে!’’

Ambulance Drivers Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy