শিকল পায়ে বসে মানিক দাস।—নিজস্ব চিত্র।
অর্থের অভাবে ঠিক মতো চিকিত্সা করানো যাচ্ছে না। ও দিকে, ছাড়া পেলেই তিনি চড়াও হচ্ছেন পাড়া-পড়শির উপরে। তাই মানসিক ভারসাম্যহানী এক প্রৌঢ়কে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন পরিবারের সদস্যেরা। দুর্গাপুরের ধোবীঘাট এলাকার ওই পরিবারের দাবি, প্রতিবেশীদের নালিশ শুনতে শুনতে জেরবার হয়ে বাধ্য হয়ে এই পথ নিয়েছেন তাঁরা। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) কস্তুরী সেনগুপ্তের আশ্বাস, দ্রুত ওই রোগীর উপযুক্ত চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হবে।
দুর্গাপুর ইস্পাত টাউনশিপের ঠিক পাশেই পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ধোবীঘাট। সেখানে সি ব্লকে বাড়ি মানিক দাসের। এখন বয়স প্রায় ৬০ বছর। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন দশক আগে এক বার মানসিক রোগে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিত্সার পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। ফের চার-পাঁচ বছর ধরে সমস্যা দেখা দেয়। আগে তিনি ভ্যান চালিয়ে রোজগার করতেন। সেই সময় থেকে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। দুই ছেলে কাঠের দোকানে কাজ করেন। তাঁদের দাবি, আয় সামান্য। তা দিয়ে দশ জনের সংসার চলে। কিন্তু বাবার জন্য উপযুক্ত চিকিত্সা করানোর সামর্থ্য তাঁদের নেই।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে একটি ঘরের জানালার সঙ্গে লোহার শিকল ও তালা দিয়ে পা বাঁধা মানিকবাবুর। ভাঙা তক্তার উপরে বসে আছেন তিনি। মাথার উপরে টালির চালে ফুটো। পরিবারের লোকজন জানান, ছাড়া পেয়ে নিজেই চালের টালি ভেঙে ফেলেছেন। কাছে যেতেই বললেন, “এস ভিতরে। আমি ভাল আছি।” কিছুক্ষণ পরে বললেন, “খিদে পেয়েছে। মুড়ি দাও।”
বাড়িতে ভাঙা ইটের দেওয়াল, টালির চাল, জানলায় পাল্লা নেই। মানিকবাবুর বড় ছেলে বাবন বলেন, “আমাদের রোজগার কম। কোনও রকমে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পাই। বাড়ি সারাই করতে পারি না। বাবার চিকিত্সার খরচ জোটাব কী ভাবে?” তিনি জানান, রাঁচির ‘সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’-তে চিকিত্সা চলছে। কিন্তু সেখানে নিয়মিত নিয়ে যাওয়ার খরচ জোটাতে পারেন না। তাই টানা দু’মাস বেঁধে রাখা হয়েছে মানিকবাবুকে। তা না হলে তিনি কখনও নাতিকে ধরে কুয়োয় ফেলে দিতে যান, কখনও প্রতিবেশীদের উপরে চড়াও হন। এক বার বাড়ি থেকেও পালিয়েছিলেন। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। শেষে পরিচিত এক জন হদিস দিলে নদিয়ার নবদ্বীপ থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। কয়েক বার লোকজনের হাতে বাবা প্রহৃতও হয়েছেন বলে জানান বাবনবাবু। মানিকবাবুর স্ত্রী দুর্গাদেবী বলেন, “কখন বড় বিপদ ঘটাবে, ঠিক নেই। তাই বাধ্য হয়ে বেঁধে রাখতে হয়েছে। কষ্ট হলেও মেনে নিয়েছি। আমরা নিরুপায়।”
স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ মাল বলেন, “রাস্তা দিয়ে গেলেই উনি ডাকাডাকি করেন। খুব খারাপ লাগে। প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা না নিলে ঠিক মতো চিকিত্সা হওয়া মুশকিল।” দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত জানান, এ ভাবে শিকল দিয়ে কাউকে বেঁধে রাখা যায় না। দ্রুত আদালতের মাধ্যমে ওই প্রৌঢ়কে সরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy