জাতীয় সড়কের পাশে এই দোকানঘর নিয়েই অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।
সরকারি নির্দেশ অগ্রাহ্য করার অভিযোগ উঠেছে সরকারি স্বশাসিত সংস্থার বিরুদ্ধেই। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে জাতীয় সড়কের ধারে দোকানঘর গড়ার আঙুল উঠেছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) দিকে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) ঘটনার তদন্ত করে ইতিমধ্যে এডিডিএ-র কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে বেআইনি দোকানঘরে উচ্ছেদ অভিযান চালায় এডিডিএ। সেই সব ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি উদ্যোগে দোকানঘর তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয় এডিডিএ। গত কয়েক মাসে নির্মাণকাজ অনেকখানি এগিয়েছে। মোট ২৩টি দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে বলে এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু বাধ সেধেছে জেলা প্রশাসনের তরফে ১৯৯৫ সালে জারি করা একটি নির্দেশ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে জাতীয় সড়কের ধার ঘেঁষে বহু বেআইনি নির্মাণ, বিশেষ করে ধাবা, গ্যারাজ গড়ে উঠেছে। এই প্রবণতা বরাবরের। এর ফলে জাতীয় সড়কের পরিসরে বিঘ্ন ঘটে। সমস্যা তৈরি হয় গাড়ি চলাচলে। জাতীয় সড়ক ধরে সব সময় দ্রুত গতির যানবাহন চলাচল করে। রাস্তার ধার ঘেঁষে যে কোনও নির্মাণ জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়া গাড়ির চালকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। দু’পাশে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা থাকলে চালক গাড়ি চালাতে অনেক স্বচ্ছন্দ অনুভব করেন। তা ছাড়া এক বার দুর্ঘটনা ঘটলে এক্ষেত্রে বড় বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। সমস্যা রোধে ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেলা প্রশাসন নির্দেশ দেয়, তত্কালীন জিটি রোডের দু’দিকে দু’শো মিটার পর্যন্ত জমির কোনও রকম চরিত্র পরিবর্তন করা যাবে না। নির্দেশ অমান্য করা হলে তিন বছরের জেল বা এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা দু’রকম শাস্তিই হতে পারে। সরকারি নির্দেশ যে মানা হচ্ছে না তা জানিয়ে ২০০০ সালের মার্চে দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয় সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে। কিন্তু তার পরেও জাতীয় সড়কের ধার ঘেঁষে নির্মাণ বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ।
এডিডিএ-র নির্মীয়মাণ দোকানঘরগুলি সেই সরকারি নির্দেশ অমান্য করেই গড়ে তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা ২ মার্চ ঘটনাস্থলে এসে সব খতিয়ে দেখেন। তাঁরা একটি রিপোর্ট দাখিল করেছেন সংস্থার দুর্গাপুর প্রজেক্ট ডিরেক্টরের কার্যালয়ে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে সেই রিপোর্ট এডিডিএ-র কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, দোকানঘর বিলির উদ্যোগও শুরু হয়েছিল। হঠাত্ মাঝপথে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট আসায় সব থমকে গিয়েছে। পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “সরকারি নির্দেশ মানতে গেলে সব না হলেও কয়েকটি ঘর ভাঙতেই হবে। এ ভাবে সরকারি টাকায় দোকানঘর বানিয়ে তা ভেঙে ফেলা তো অর্থ অপচয়। কিন্তু এখন আর করার কিছু নেই।” এডিডিএ সূত্রে জানানো হয়েছে, পর্ষদের ‘টাউন প্ল্যানার’ প্রকল্পের নকশা অনুমোদন করার পরেই দোকানঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সব দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy