ভাঙচুরের পরে বিজেপির পথ অবরোধ কালনায়। নিজস্ব চিত্র।
কলেজে এবিভিপিকে মনোনয়ন তুলতে না দেওয়ার জন্য রাস্তা আটকানো ও বিজেপি অফিসে হামলার অভিযোগ উঠল কালনায়। শুক্রবার শাসকদল ও তার ছাত্র সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা এ নিয়ে অশান্তি ছড়ায়। শুধু কালনা নয়, এবিভিপিকে মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুরেরও বেশ কিছু কলেজের বিরুদ্ধে। টিএমসিপি যদিও কোনও বাধা দেওয়ার কথা মানতে চায়নি।
বিজেপির অভিযোগ, কালনায় তাদের কার্যালয়ে তৃণমূলের হামলায় ১১ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুই ছাত্রী-সহ তিন জনের এ বার মনোনয়নপত্র তোলার কথা ছিল। আহতদের মধ্যে চার জনকে কালনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ দিন এই কলেজে টিএমসিপি ছাড়া অন্য কেউ মনোনয়ন জমা দেয়নি। একতরফা মনোনয়ন জমা পড়ার পরে এই কলেজে আর ছাত্র সংসদ ভোটের প্রয়োজন হবে না।
সম্প্রতি কালনা মহকুমাশাসকের অফিসে কলেজ ভোট নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে টিএমসিপি এবং এবিভিপি-র প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন। সেখানেই টিএমসিপি জানতে পারে কালনা কলেজে এ বার প্রার্থী দেবে এবিভিপি। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা কলেজে ভোটের প্রস্তুতি শুরু হওয়ার পরেই দলের নেতারা জানিয়ে দেন, প্রার্থীপদ নিয়ে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না। সে কারণে কোন ব্লক থেকে কত জন প্রার্থী হবেন, তা জানিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে ধাত্রীগ্রাম এলাকায় তৃণমূলের একটি সভা ছিল। তৃণমূলের একাংশ কর্মীদের দাবি, সেখানে হাজির জেলার এক মন্ত্রী বলেন, “কোন কোন নেতা কাল কলেজ প্রাঙ্গণে যাচ্ছে না, তার তালিকা তৈরি করুন। আমি তাতে চোখ বোলাব।” তৃণমূল সূত্রে খবর, এর পরেই এ দিন সকাল থেকে কলেজ ভোট নিয়ে তৎপর হতে দেখা যায় দলের নেতাদের। কলেজের আশপাশে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের কালনা ১ ব্লকের সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহরায়, সাধারণ সম্পাদক সেলিম শেখদের। বেলা ১১টা থেকে মনোনয়নপত্র জমা না পড়া পর্যন্ত ছাত্রনেতাদের নানা নির্দেশ দিতে দেখা যায় তাঁদের। নানা এলাকা থেকেও ম্যাটাডরে চড়ে হাজির হন তৃণমূলের কর্মীরা।
এবিভিপি-র অভিযোগ, বেলা সাড়ে ১০টা থেকে কলেজ যাওয়ার নানা রাস্তা দখলে নেয় তৃণমূল এবং টিএমসিপি নেতা-কর্মীরা। অলিগলিতে বেঞ্চ পেতে বসে পড়তেও দেখা গিয়েছে তাঁদের। একটি রাস্তায় টিএমসিপি রাজ্য সহ-সভাপতি সন্দীপ বসুর নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বাজনা নিয়ে হাজির ছিলেন। দুপুর ১২টা নাগাদ টিএমসিপির ত্রিশ জন মনোনয়ন পর্ব শেষ করে কলেজ ছাড়েন। তার আগে বেলা ১১টা থেকে বিজেপির তেঁতুলতলা অফিসের সামনে জড়ে হন তৃণমূলের বেশ কিছু কর্মী। এবিভিপির দাবি, ওই অফিসে তাদের কয়েক জন সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ আচমকা সেখানে ঢুকে পড়ে তৃণমুলের বড় একটি দল। বেধড়ক মারধর, ভাঙচুর করা হয় এবিভিপি এবং বিজেপি নেতা-কর্মীদের। বিজেপির অন্যতম জেলা সম্পাদক সুশান্ত পাণ্ডে, আর এর নেতা অমিত মণ্ডল-সহ কয়েক জন গুরুতর আহত হন। ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ কলেজ থেকে কিলোমিটার দুয়েক দূরে নিভুজি মোড়ে বিজেপি এসটিকেকে রোড অবরোধে করে। এসডিপিওর নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে।
এবিভিপি কর্মী মৌসুমী দে-র অভিযোগ, “আমাদের সংগঠনের কুড়ি জন মনোনয়নের জন্য যখন কলেজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হয়। হামলার পরেও আসেনি পুলিশ।” বিজেপির জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিকের বক্তব্য, “ভয় পেয়েই তৃণমূল নেতারা এ ভাবে আমাদের অফিসে ঢুকে হামলা চালাল।” আহত এবিভিপি নেতা কার্ত্তিক সাহার মন্তব্য, “আমাদের রুখতে মহকুমার তাবড় তৃণমূল নেতাদের নামতে হল। এতেই স্পষ্ট ওরা ভয় পাচ্ছে।”
তবে তণমূল নেতারা বিজেপি অফিসে হামলার কথা মানতে চাননি। ব্লক সভাপতি উমাশঙ্করবাবু বলেন, “এলাকায় এবিভিপির সংগঠন বলতে কিছু নেই। তাই কলেজে প্রার্থী দিতে পারেনি। আমরা কোনও বাধা দিইনি।” সেলিম শেখের আবার বক্তব্য, “বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মারপিট-ভাঙচুর হয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের জড়ানো ঠিক নয়।” টিএমসিপির রাজ্য-সহ সভাপতি সন্দীপবাবু বলেন, “বাইরে কী হয়েছে জানি না। তবে কলেজে টিএমসিপি ছাড়া অন্য কোনও সংগঠন প্রার্থী দেয়নি।”
কাটোয়া কলেজেও তৃণমূলের বাধার অভিযোগ করেছে এবিভিপি। তাঁদের দাবি, তৃণমূল বহু জায়গায় কলেজের পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়েছে। তবে তৃণমূল তা মানতে চায়নি। এই কলেজের ৮টি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি টিএমসিপি। তাঁদের দাবি, ছাত্র পরিষদের বাধায় সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেননি তাঁরা। অবশ্য অভিযোগ মানেনি ছাত্র পরিষদ। শুক্রবার পুলিশের পাহারায় ওই কলেজের ৪২টি আসনের জন্য ১৯৮টি মনোনয়ন জমা পড়ে। অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে এসএফআই। এবিভিপি ১২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছে এসএফআইও। সংগঠনের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে-র দাবি, মানকর ও চন্দ্রপুর বাদে প্রতিটি কলেজেই মনোনয়ন পত্র তোলার জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু টিএমসিপি-র সন্ত্রাসের জেরে তা সম্ভব হয়নি। একমাত্র কাটোয়া কলেজে ২৯টি মনোনয়ন তুলেছেন তাঁরা। যদিও টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতেই এসএফআই এখন মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
পুলিশের অবশ্য দাবি, জেলা জুড়ে নির্বিঘ্নেই মনোনয়ন তোলা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “প্রতিটি কলেজে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। মনোনয়ন পত্র তুলতে না পারার বা পুলিশের সামনে মারধরের কোনও অভিযোগ মেলেনি।”
আজ, শনিবার বর্ধমান শহরের রাজ কলেজ সহ সমস্ত কলেজে ও গলসিতে মনোনয়ন পত্র তোলার দিন। পুলিশি নিরাপত্তা পেলে মনোনয়ন পত্র তুলতে পারা যাবে বলে আশা এসএফআইয়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy