মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগে কাটোয়ায় চলছে প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথমে ঠিক ছিল কাটোয়া বিধানসভা এলাকার দাঁইহাটে সভা করবেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু পরে ঠিক হয়, সভা হবে খাস কাটোয়ার বুকে, কাটোয়া স্টেডিয়াম মাঠে। সেখানেই আজ, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটে নাগাদ সভা করার কথা তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বেলা ২টো নাগাদ পূর্বস্থলীর সমুদ্রগড়ে সভা করে বিকেলে কাটোয়ার আসবেন তিনি। এই সভা থেকে যাবেন বর্ধমানের সভায়।
সভার কারণে কাটোয়া স্টেডিয়ামের ভাঙা গ্যালারি টিন দিয়ে ঘিরে দিয়েছিল তৃণমূল। যাতে সেখানে উঠে গিয়ে কেউ বিপদে না পড়েন। মঞ্চের পাশেই তৈরি হয়েছে হেলিপ্যাড। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্তারা জানান, সেখানে তৃণমূলনেত্রীর হেলিকপ্টার নামার সময় নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হতে পারে। তার পরে গ্যালারির সামনের টিন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, ভাঙা গ্যালারিতে দুর্ঘটনা এড়াতে থাকবে পুলিশ পাহারা।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সভার জন্য বর্ধমান জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথমে দাঁইহাট হাইস্কুলের মাঠ ঠিক করেছিল। জেলার পুলিশ কর্তারা দাঁইহাট হাইস্কুলের মাঠ পরিদর্শন করেন। কিন্তু দিন কয়েক আগে দিল্লি থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথকে ফোন করে জানান, দলনেত্রী কাটোয়া শহরের বুকে সভা করতে চাইছেন। এরপরেই তৃণমূল নেতারা কাটোয়া স্টেডিয়াম ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার সিদ্ধান্ত নেন।
যদিও স্বপন দেবনাথ প্রকাশ্যে বলছেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ও মহকুমার সদর হওয়ার জন্যই আমরা কাটোয়া শহরে সভা করছি।” তবে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, তৃণমূল নেত্রীর কাটোয়া শহরে সভা করার পিছনে কারণ পুরোপুরি ‘রাজনৈতিক’। বাম আমলেও কাটোয়া মহকুমায় শক্তিশালী ছিল কংগ্রেস। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে বর্ধমানের গ্রামীণ ও শিল্পাঞ্চল দুই এলাকাতে কংগ্রেসের সংগঠনে ধস নামলেও কাটোয়ায় এখনও কংগ্রেসের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। দলবদলের হিড়িকের মধ্যেও কাটোয়ার প্রবীণ বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সংগঠন ধরে রেখেছে কংগ্রেস। কাটোয়া পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তারা। সম্প্রতি কাটোয়া কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও টিএমসিপিকে হারিয়ে সব কটি আসনে জিতেছে ছাত্র পরিষদ। সম্প্রতি, কাটোয়া পুরসভার উপ পুরপ্রধান অমর রাম-সহ কয়েকজন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও কাটোয়া শহরে কংগ্রেস সংগঠনে উল্লেখযোগ্য চিড় ধরেনি। জেলা তৃণমূলের নেতারাও একান্তে বলছেন, লোকসভা নির্বাচনে জেলার বাকি সব বিধানসভাতেই তাঁরা ‘লিড’ পাবেন। কিন্তু কাটোয়া বিধানসভায় কী হবে সেটা বলা মুশকিল।
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে জোট প্রার্থীর সমর্থনে কাটোয়া শহরের স্টেশন বাজার চৌরাস্তা মোড়ে সভা করতে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দেখতে না পেয়ে তৃণমূলনেত্রী বক্তব্য রাখবেন না বলে জানিয়েছিলেন। পরে রবীন্দ্রনাথবাবু মঞ্চে আসার পরে বক্তব্য রাখেন তিনি। কিন্তু তারপরে ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। সেই রবীন্দ্রনাথবাবু এখন তৃণমূলের প্রতিপক্ষ। তাই, বৃহস্পতিবারের সভায় তৃণমূলনেত্রী কংগ্রেস সম্পর্কে কী বলেন তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন কাটোয়ার তৃণমূল নেতারা। দলের যুব নেতা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে জেলা নেতা মণ্ডল আজিজুলরা বলছেন, “আমরা আশা করছি, কাটোয়াতে দলনেত্রী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বলবেন। যেটা শুনে আমরা দিশা পাব। শুধু লোকসভা নয়, আগামী বছর পুর ভোটে আমাদের কী ভাবে এগোতে হবে সেটাও বুঝতে পারব।”
ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ের ছোট এই শহরে সংগঠন শক্তিশালী করার জন্য স্বয়ং দলনেত্রী সভা করতে আসলেও কাটোয়ায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চিন্তায় তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “কাটোয়া শহরের মধ্যেই দলে কয়েকটি গোষ্ঠী রয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই কাটোয়াতে তৃণমূলের সংগঠন সে ভাবে বাড়ছে না। দলনেত্রীর সভার পরে সব গোষ্ঠী এক হয়ে কাজ করলে ছবিটা বদলে যেতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy