প্রহর গোনা শেষ। প্রায় দু’মাস ধরে চলা প্রচার, তর্ক-বিতর্ক, ভোটপর্বের শেষে আজ, শুক্রবার ফল বেরোবে লোকসভা ভোটের।
জেলার তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের গণনা হবে বর্ধমানের এমবিসি ইন্সটিটিউটে, বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের গণনা হবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে এবং আসানসোল কেন্দ্রের গণনা হবে সেন্ট ভিনসেন্ট হাই অ্যান্ড টেকনোলজিতে। সকাল আটটা থেকেই শুরু হয়ে যাবে গণনা।
জেলা প্রশাসনের দাবি, ১১টার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে জয়ের পাল্লা ভারি কোন দিকে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। দুপুর ১টার মধ্যে জয়ী প্রার্থীকে ওই কেন্দ্রের নির্বাচনী আধিকারিকের তরফে শংসাপত্রও দিয়ে দেওয়া হবে। তবে আসানসোলের ক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হতে পারে। জেলার তিনটি কেন্দ্রে তৈরি হওয়া মিডিয়া সেন্টারে প্রতি ঘন্টায় পৌঁছে যাবে ভোটের ফলের আপডেট। রাউন্ডে-রাউন্ডে গণনার ফল প্রকাশিত হতে থাকবে।
জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণব বিশ্বাস রয়েছেন আসানসোল কেন্দ্রের গণনার দায়িত্বে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকার দুটি আসনের তুলনায় আসানসোলের ভোটের ফল প্রকাশিত হতে কিছুটা দেরি হতে পারে। কারণ ওই কেন্দ্রের হলঘর ও টেবিলের সংখ্যা বাকি দুই কেন্দ্রের তুলনায় কম।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে রয়েছে ১৪টি হলঘর। সেখানে ১৭২টি টেবিলে গণনার কাজ চলবে। গণনার কাজে থাকছেন প্রায় ১২০০ কর্মী। গণনা চলবে প্রায় ১৪ রাউন্ড পর্যন্ত। এখানেই গণনা করা হবে গলসি বিধানসভার উপনির্বাচনের ভোট। বিধানসভার ভোটের গণনার জন্য চারটি হল ঘরে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এমবিসি ইন্সন্টিটিউটে থাকছে ১১টি হলঘর। গণনা হবে মোট ১৪৮টি টেবিলে। সেখানেও ১৪-১৫ রাউন্ড পর্যন্ত গণনা গড়াতে পারে। ভোট গণনার কাজে বহাল হয়েছেন হাজার খানেক ভোট কর্মী। আসানসোলের সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলে রয়েছে ৮টি হলঘর। সেখানে ৯৮টি টেবিলে চলবে গণনা। এখানে গণনা গড়াবে ২০-২১ রাউন্ড পর্যন্ত। বহাল থাকছেন প্রায় ৮০০ কর্মী।
চড়া গরমে ভোট কর্মীদের রেহাই দিতে প্রশাসনের তরফে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও অস্থায়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও লাগানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ঘরে থাকছে সিসিটিভি, মোতায়েন করা হবে ক্যামেরাম্যানও।
অন্যান্য ভোট গণনার মতো বহিরাগতদের প্রবেশে কড়াকড়ি করা হয়েছে। এমনকী সংবাদমাধ্যমের লোকেদেরও হলঘরগুলির দরজা পর্যন্ত যেতে দেওয়া হবে বলে অতিরিক্ত জেলাশাসক জানিয়েছেন। তবে মিডিয়া সেন্টারে বসেই সংবাদমাধ্যম যাতে সমস্ত রাউন্ডের খবর পেয়ে যায়, তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
আসানসোলের মহকুমাশাসক তথা সহকারি রিটার্নিং অফিসার অমিতাভ দাস জানান, আজ, শুক্রবার সকাল থেকে শহরের এসবি গড়াই রোডে যান চলাচলের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখা হবে। আদালত ও বরফকল চৌমাথার কাছে দু’টি চেকপোস্ট তৈরি করা হবে। গোটা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। ভোটের ফল বেরোনোর পরে বিজয় মিছিলের উপরে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। তাই এ দিন গণনাকেন্দ্রের আশপাশে কোনও রকম জমায়েত বা মিছিলের তোড়জোড় করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনের নিষেধ ভাঙলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মহকুমাশাসক জানান। গণনাকেন্দ্র বা তার আশপাশের এলাকায় যেমন নজরদারি থাকবে, তেমনই গননা পরবর্তী পর্যায়ে লোকসভা কেন্দ্রের কোথাও যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখা হবে। ভোট মেটার পরে সালানপুর, বারাবনি, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়ার কিছু কিছু জায়গায় কমবেশি হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, গণনার পরে ওই সব এলাকায় ফের তাঁদের কর্মীরা আক্রান্ত হতে পারেন। প্রশাসন অবশ্য সব দিকে কড়া নজর রাখার আশ্বাস দিয়েছে।
এখন অপেক্ষা শুধু ইভিএম খোলার। সেই বাক্সেই লুকিয়ে রয়েছে বর্ধমান দুর্গাপুরে আট জন, বর্ধমান পূর্বের ন’জন ও আসানসোলের ১৪ প্রার্থীর ভাগ্যের চাবিকাঠি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy