Advertisement
২০ মে ২০২৪

গান দিয়ে গোনা শুরু, তাল ঠুকে শেষে বাজিমাত

লক্ষ লোকের সভায় নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “মুঝে পার্লামেন্ট মে বাবুল চাহিয়ে।” ডাকে সাড়া দিল আসানসোল। শুক্রবার ঘড়িতে তখন সকাল ৬টা ৫৫। আবাসন থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। হাতে এক পিস্ টোস্ট। সাদা গাড়িতে চেপে বসার ফাঁকে বললেন, “এত সকালে ব্রেকফাস্ট খেতে পারি না।” বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে গাড়ি ছুটল সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলে।

বেলা গড়িয়ে তখন সাড়ে ৩টে। সরকারি ভাবে ঘোষণা তখনও হয়নি। তবে দলের এজেন্টদের কাছে সবিস্তার ফলাফল দেখে বাবুল সুপ্রিয় বললেন, “এ বার আমি ভিকট্রি দেখাতেই পারি।” শুক্রবার আসানসোলের সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলে ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।

বেলা গড়িয়ে তখন সাড়ে ৩টে। সরকারি ভাবে ঘোষণা তখনও হয়নি। তবে দলের এজেন্টদের কাছে সবিস্তার ফলাফল দেখে বাবুল সুপ্রিয় বললেন, “এ বার আমি ভিকট্রি দেখাতেই পারি।” শুক্রবার আসানসোলের সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলে ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:০৭
Share: Save:

লক্ষ লোকের সভায় নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “মুঝে পার্লামেন্ট মে বাবুল চাহিয়ে।” ডাকে সাড়া দিল আসানসোল।

শুক্রবার ঘড়িতে তখন সকাল ৬টা ৫৫। আবাসন থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। হাতে এক পিস্ টোস্ট। সাদা গাড়িতে চেপে বসার ফাঁকে বললেন, “এত সকালে ব্রেকফাস্ট খেতে পারি না।” বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে গাড়ি ছুটল সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলে।

আধ ঘণ্টা পরে যখন স্কুলের গেট দিয়ে গণনাকেন্দ্রে ঢুকছেন, দেখা হয়ে গেল অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দোলা সেনের সঙ্গে। হেসে কুশল বিনিময় দু’পক্ষেরই। ভিতরে ঢুকে বাবুল চষে ফেললেন গণনাকেন্দ্রের সব ক’টি হলে। খোঁজ নিলেন দলের সব এজেন্টের। তার পরে বেরিয়ে এলেন স্কুলের কোর্ট ইয়ার্ডে। এর পরে খোশমেজাজে কখনও চিত্র সাংবাদিকের কাছ থেকে ক্যামেরা চেয়ে নিয়ে ছবি তোলা, কখনও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে রইলেন বাবুল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়ের ব্যবধান যত বেড়েছে, গান-আড্ডায় আরও মশগুল হয়েছেন তিনি।

সকাল ৮টা নাগাদ কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রাণী মিশ্রকে ঢুকতে দেখেও এগিয়ে যান বাবুল। এক প্রস্ত সৌজন্য বিনিময়। ঘোরাঘুরির ফাঁকে বললেন, “বৃহস্পতিবার অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছিলাম। রাতে ধাবায় খেয়েছি আর মোবাইলে মেয়ের গান শুনেছি। গণনাকেন্দ্রে একটি বেঞ্চে বসে পড়ে এক সময়ে বললেন, “৪০ দিন ধরে আসানসোলে পড়ে রয়েছি। এত কোলাহল, এত মাইক, এত স্লোগান, চারদিক গমগম। এখন একটি গান গাইতে ইচ্ছে করছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওই লাইনগুলো মনে পড়ছে“কোলাহল তো বারণ হল/ এ বার কথা কানে কানে/ এ বার হবে প্রাণের আলাপ।” তার পরেই আবার এক বার দৌড়লেন গণনাকেন্দ্রের ভিতরে।

খানিক পরে বেরিয়ে আসতেই আবার মুখোমুখি দোলার। হাসিমুখে দোলার দাবি, তিনি চাপে পড়ে গিয়েছেন, “মনে হচ্ছে একটু চাপেই পড়ে গিয়েছেন।” প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চলে যেতেই গণনাকেন্দ্রের মেডিক্যাল ক্যাম্পে হাঁটা দিলেন বাবুল। নিচু গলায় বলেন, “সত্যি চাপে পড়েছি? মনে হয় না।” ডাক্তার পরীক্ষা করে যেই জানালেন, রক্তচাপ ১২০/৮০, বাবুল বলে ওঠেন, “এতো একমদ স্বাভাবিক!”

সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ গণনাকেন্দ্রের জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রথম ভেসে উঠল‘বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় বড়াল ৩৬৭০ ভোটে এগিয়ে।’ দলের এক কর্মী সঙ্গে সঙ্গে বাবুলের জন্য লাল চেয়ার এনে দিলেন। প্রার্থী হেসে বলেন, “সিপিএমের চেয়ারই এনে দিলেন। ওদের তো পিছনে ফেলে এসেছি।” ঠিক এক ঘণ্টা পরে এক লক্ষ ছাড়ায় বাবুলের প্রাপ্ত ভোট। চোখেমুখে আনন্দ, কিন্তু ভ্রু খানিকটা কুঁচকে। বললেন, “বাড়িতে খবরটা দিতে পারছি না। মোবাইল যে বাইরে নিয়ে রেখেছে।” প্রতিবেদক মোবাইল বাড়িয়ে দিলে ফোন করলেন মেয়ে শর্মিলিকে। বললেন, “শুনেছ, এক লক্ষ পেরিয়েছি।” উল্টো দিক থেকে জবাব, “টিভিতে দেখছি তো।” তার পরে কিছুক্ষণ স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেন রাজনীতিতে নেমেই বাজিমাত করা গায়ক-প্রার্থী।

দিনভর ঘুরে বেড়ালেন গণনাকেন্দ্রে। ব্যবধান জানতে ঘুরেফিরে বারবার এলে মিডিয়া সেন্টারে। দোলা সেন আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরী আসেননি গণনাকেন্দ্রে। বেশ খানিকক্ষণ থেকে চলে যান কংগ্রেস প্রার্থীও। সকলের নজরে তাই ছিলেন বাবুলই। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ গাড়িতে বসে লাঞ্চ সারলেন। এর পরে ব্যবধান যত বেড়েছে গানের সুর পাল্টেছে বাবুলের গলায়। জয় যখন প্রায় নিশ্চিত তখন গাইছেন, “মন বলে চাই চাই, চাই গো।”

দুপুর ২টো নাগাদ যখন ব্যবধান ৭৩ হাজার, গণনাকেন্দ্রে বিজেপি নেতা-কর্মীদের তুমুল উচ্ছ্বাস শুরু। ভিড় বাড়ছে দেখে পুলিশ গণনাকেন্দ্রের দোতলায় নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের ঘরে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দেয় বাবুলকে। বিকেল ৩টে ১০ নাগাদ যখন সেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন বাবুল। তখন তিনি ৭০২৬০ ভোটে এগিয়ে। ৩১৯ ভোটের একটি ইভিএমে গণনা শুধু বাকি। বাবুল বলেন, “জয় উৎসর্গ করলাম তাঁদের, যাঁরা অনেক সন্ত্রাসের মুখেও দলের ঝান্ডা বেঁধেছেন, দেওয়াল লিখেছেন।” মদ্যপ অবস্থায় প্রচারের অভিযোগ, অস্ত্র আইনে মামলার প্রসঙ্গ উঠলে বাবুল বলেন, “ও সব পিছনে ফেলে এসেছি। এখন আর এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।”

বাবুলের জয় যত নিশ্চিত হওয়ার পথে এগিয়েছে, আসানসোলের রঙ তত গেরুয়া হয়েছে এ দিন। কেন্দ্রের নানা প্রান্তে আবির খেলায় মেতেছেন বিজেপি কর্মীরা। সন্ধ্যায় শহরের নানা প্রান্তে বাজি পুড়িয়ে উৎসব করেন তাঁরা।

প্রার্থী হয়ে আসানসোলকে আর্জি জানিয়েছিলেন, “কহো না প্যার হ্যায়।” কেন্দ্রে পৌঁছে বলেছিলেন, “মুশকিল আসান করতে চাই ‘সোল’ দিয়ে।”

আসানসোলের হৃদয় জিতে বাবুল এ বার পার্লামেন্টে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

babul supriyo asansol susanta banik vote result
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE