Advertisement
১৮ মে ২০২৪

চেহারা না পাল্টে সংস্কার শহরের প্রাচীন সেতুর

দু’শো বছর আগে বর্ধমানের রাজা তেজচন্দ রাধামন্দির তৈরি করে এলাকার নাম রেখেছিলেন রাধাগঞ্জ। সেই মন্দির ও পাশের লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে ভক্তদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাঁকা নদীর উপর এই সেতুটি তৈরি করেছিলেন। পুরোপুরি পোড়া ইটের তৈরি সেই সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে।

বর্ধমানের রাধাগঞ্জে হাত পড়েছে দু’শো বছরের পুরনো সেতুর কাজে। ছবি: উদিত সিংহ।

বর্ধমানের রাধাগঞ্জে হাত পড়েছে দু’শো বছরের পুরনো সেতুর কাজে। ছবি: উদিত সিংহ।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০১:১৩
Share: Save:

দু’শো বছর আগে বর্ধমানের রাজা তেজচন্দ রাধামন্দির তৈরি করে এলাকার নাম রেখেছিলেন রাধাগঞ্জ। সেই মন্দির ও পাশের লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে ভক্তদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাঁকা নদীর উপর এই সেতুটি তৈরি করেছিলেন। পুরোপুরি পোড়া ইটের তৈরি সেই সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে।

পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরনো সেতুটিকে আগের চেহারায় রেখেই সেটি সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে। সেতুর উপরে যাতায়াত চালু রেখেই সংস্কারের কাজ করছি আমরা।”

সেতুর সংস্কারের কাজে যুক্ত সংস্থার সাইট ম্যানেজার নিলাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ এই সেতু মেরামতির জন্য আপাতত ৪৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছেন। বাড়তি খরচ হলে সেটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। আপাতত সেতুর পিলারে সিমেন্টের জ্যাকেট পড়ানোর কাজ চলছে। সেতুর সাতটি আর্চ আকারের গঠনের উপর বসানো হবে এই ঢালাই। প্রতি পিলার পিছু ছ’টি হিসেবে সব মিলিয়ে ৪২টি ঢালাই বসানো হবে। ঢালাইয়ের ভিতরে যে ইঁট থাকছে তার উপরে রাসায়নিক মাখানো চুন-সুরকির প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে।

তবে সেতুর পাশে থাকা তৈজচন্দের নামাঙ্কিত ফলকটি অবশ্য এখন আর পড়া যায় না। বিডিএ-র দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত জানান, সেতুর ঐতিহাসিক চেহারা বজায় রাখার জন্য ফলকটিকে নতুন করে লেখা হবে। পুরো কাজটি শেষ হলে পুরনো চেহারায় আসলে একটি মজবুত সেতু দেখতে পাওয়া যাবে ওই এলাকায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭০ মিটার লম্বা ও ৯ মিটার চওড়া এই সেতুটিকে দেখতে অনেকটা কচ্ছপের পিঠের মত। প্রতিদিন এই পুরনো সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করে মালবাহী ট্রাক। দীর্ঘদিন ধরে সেই ভার বহন করে ক্রমেই জীর্ণ হয়ে পড়েছে এই সেতু।

তবে সেতু সংস্কারের কাজে হাত পড়ার পরেই শুরু হয়েছে সেতু নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক।

সেতুতে ইটের রাসায়নিক প্রলেপ দেওয়ার কাজে যুক্ত বর্ধমানের বাসিন্দা উজ্জল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ১৮২১ সালে এই সেতু তৈরি হয়েছিল। বর্ধমানের প্রয়াত তথা পুরনো ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু আব্দুল গনি খানের ‘বর্ধমানের নুরজাহান’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, তেজচন্দ রাধাবল্লভ জিউ মন্দির স্থাপনের পরেই এই সেতু তৈরি করেছিলেন। যদিও পরের দিকের ইতিহাস অনুযায়ী, ১৪ শতকের শুরুর দিকে রাধাবল্লভজিউ মন্দির স্থাপন করেছিলেন তেজচন্দের মা, বর্ধমানের রানি বিষনকুমারি। তেজচন্দ পরে ওই মন্দিরের সংস্কার করেছিলেন। আবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামের কিউরেটর রঙ্গনকান্তি জানা বলেন, “এই সেতুটির তৈরি তেজচন্দের আমলে নাও হতে থাকতে পারে। কারণ বর্ধমানের বুকে শের শাহ প্রতিষ্ঠিত কালো মসজিদ, ঔরঙ্গজেবের নাতি আজিম-উস-শানের প্রতিষ্ঠিত শাহি মসজিদ আজও মাথা তুলে রয়েছে। রয়েছে পীর বাহারাম সাক্কার সমাধি। ফলে অনুমান করা হয়, বাঁকা নদীর দুই পাড়ে মুঘলদের একটি জনবসতি ছিল। যে এলাকায় ওই সেতু অবস্থিত তার আদি নাম আলমগঞ্জ। এই নাম দেওয়া হয়েছিল ঔরঙ্গজেবের ডাক নাম আলমগির অনুসরণে। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে দু পাড়ের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য মুঘল আমলের শেষের দিকেই ওই সেতু নির্মিত হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE