Advertisement
E-Paper

ডাইনি নিয়ে কুসংস্কার দূর করতে শিবির

ডাইন বা ডাইনি অপবাদ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে জেলার দক্ষিণ দামোদরের গ্রামগুলিতে। শাস্তি হিসেবে কখনও করা হচ্ছে গ্রামছাড়া, কখনও আবার নেমে আসছে জরিমানার খাঁড়া। মেমারি, আউশগ্রাম, জামালপুর, কাঁকসা, খণ্ডঘোষ, রায়নায় পরপর এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জেনেছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৮

ডাইন বা ডাইনি অপবাদ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে জেলার দক্ষিণ দামোদরের গ্রামগুলিতে। শাস্তি হিসেবে কখনও করা হচ্ছে গ্রামছাড়া, কখনও আবার নেমে আসছে জরিমানার খাঁড়া। মেমারি, আউশগ্রাম, জামালপুর, কাঁকসা, খণ্ডঘোষ, রায়নায় পরপর এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জেনেছে পুলিশ। কুসংস্কার দূর করতে জেলা পুলিশের তরফে গ্রামে সভা করার উদ্যোগ হয়েছে। সম্প্রতি রায়নার নতুনগ্রামে এমন একটি সভা হয়েছে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার জানান, ডাইন বা ডাইনি চিহ্নিত করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া বা মোটা অঙ্কের জরিমানার ঘটনা অনেক সময়েই পুলিশের কাছে পৌঁছয় না। তিনি বলেন, “আমাদের অনুরোধ, কাউকে ডাইনি বলে চিহ্নিত করা হলে তিনি বা তাঁর বাড়ির লোকেরা যেন পুলিশকে জানান। এর সঙ্গে এই কুসংস্কার দূর করতে পুলিশ আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে শিবির করে প্রচার চালাবে।”

সম্প্রতি নতুনগ্রামে যে সভা হয় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণবাবু ছিলেন। সেখানে আদিবাসী শিক্ষক-শিক্ষিকা, আদিবাসী সংগঠনের নেতাদের দিয়ে সাঁওতালি ভাষায় এই কুসংস্কাররে কুফল সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। মঞ্চে সাঁওতালি ভাষায় একটি নাটকও অভিনীত হয়। নাটকে দেখানো হয়, গ্রামের মোড়লের ছেলে এক মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় তিনি বিষয়টি গ্রামের মানুষকে জানান। তার শোধ নিতে মোড়ল ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা এক জানগুরুকে দিয়ে সালিশি সভা বসিয়ে ওই মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দেয়। জানগুরুকে আগেই টাকা দিয়ে বশ করেছিলেন ওই মোড়ল। এর পরে ওই মহিলার পরিবারের উপরে অত্যাচার শুরু হয়। তাঁকে জরিমানা দিতেও বাধ্য করা হয়।

স্কুলছাত্রীদের অভিনীত এই নাটক দেখে নড়েচড়ে বসেন রায়না, খণ্ডঘোষ, জামালপুর, মেমারি থেকে আসা আদিবাসীরা। দক্ষিণ দামোদর লাগোয়া গ্রামগুলিতে এ ভাবে যে ডাইন বা ডাইনি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তা স্বীকার করেনে জনা দুয়েক। রায়নার ডিগবিপুরের গোরাচাঁদ মুর্মু বলেন, “রায়না, খণ্ডঘোষ জামালপুরে আদিবাসীদের মধ্যে এই ডাইনি সংক্রান্ত কুসংস্কার চালু রয়েছে। তা দূর করতে কেউ উদ্যোগী না হওয়ায় সমাজে ওই ব্যাধি ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছে।” নতুনগ্রামের দেবু হাঁসদার অভিযোগ, “মাস দেড় আগে গ্রামের এক উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র জ্বরে মারা যায়। তখন গ্রামেরই এক ব্যক্তিকে ডাইন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই ব্যক্তিকে গ্রাম ছাড়ার ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল। তবে গ্রামের কয়েক জনের হস্তক্ষেপে তা আটকানো গিয়েছিল।” তাঁর আরও দাবি, “ছাত্রের অসুস্থতার খবর পেয়ে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু ওর পরিবারের লোকেরা তা না শুনে রায়নার এক জানগুরুর কাছে বারবার নিয়ে যায়।”

এই শিবিরের মূল উদ্যোক্তা ‘ভারত জাকা মাঝি পারগান মহল’ নামে একটি সংস্থা। সংস্থার রায়না, খণ্ডঘোষ ও জামালপুরএই তিন ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা নির্মল হেমব্রম বলেন, “আমরা গ্রামে-গ্রামে ঘুরে সংগঠনের তরফ থেকে কিছু হলেই গুণিন, ওঝা, জানগুরুদের কাছে যাওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে আমরা লাগাতার প্রচার চালাচ্ছি। কিন্তু তা করতে গিয়ে আমাদের প্রায়ই হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে।”

এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ জানান, নতুনগ্রামের ওই সভায় এক সময়ে ডাইন বা ডাইনি হিসেবে চিহ্নিত পাঁচ জনকে তাঁদের অভিজ্ঞতা বলার জন্য আনা হয়েছিল। কিন্তু কেউই সভায় মুখ খোলেননি। এসডিপিও বলেন, “ডাইনি বলে কাউকে-কাউকে চিহ্নিত করা ও তাঁর উপরে অত্যাচার চলছে বলে কিছু দিন ধরে খবর পাচ্ছিলাম। তবে শুধু পুলিশের ভয় দেখিয়ে এই কুপ্রথা রোধ করা সম্ভব নয়। চাই সামাজিক সচেতনতা। তা তৈরি করতেই এই সভা করা হয়েছে।” তবে একটি সভা করে যে সমস্যা মিটবে না, স্বীকার করেন এসডিপিও।

witchcraft superstition meetings raina
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy