Advertisement
E-Paper

দুর্ঘটনা বারবার, তবু নজরদারি নেই ব্যারাজে

বড় বড় হরফে লেখা সচেতনতামূলক বোর্ড টাঙানো রয়েছে সামনেই। তবুও স্নান করতে নেমে বারবার তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে দুর্গাপুরের দামোদরের ব্যারাজে। রবিবারও নিষেধের চোখরাঙানি অগ্রাহ্য করে ওই একই জায়গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে গেল চার কলেজ পড়ুয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০১:৪৬
ব্যারাজের এই সব জায়গায় স্নানে নেমেই ঘটে দুর্ঘটনা। ছবি: বিকাশ মশান।

ব্যারাজের এই সব জায়গায় স্নানে নেমেই ঘটে দুর্ঘটনা। ছবি: বিকাশ মশান।

বড় বড় হরফে লেখা সচেতনতামূলক বোর্ড টাঙানো রয়েছে সামনেই। তবুও স্নান করতে নেমে বারবার তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে দুর্গাপুরের দামোদরের ব্যারাজে। রবিবারও নিষেধের চোখরাঙানি অগ্রাহ্য করে ওই একই জায়গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে গেল চার কলেজ পড়ুয়া।

ছুটির দিনে সকালেই অটো ভাড়া করে ব্যরাজের দিকে বেরিয়ে পড়েছিল ১১ বন্ধু। সাঁতার না জানলেও জলে ঝাঁপাতে দ্বিধা করেনি দলের শুভম নামে বছর বাইশের এক কলেজ পড়ুয়া। কিন্তু মাঝ জৈষ্ঠ্যেও দামোদর যে কতটা গভীর তা আন্দাজ করতে পারেনি তারা। স্নান করতে নেমে আচমকা তলিয়ে যেতে শুরু করে শুভম। বন্ধুকে বাঁচাতে জলে ঝাঁপায় আরও তিন জন। শুভমকে টেনে জলের বাইরে আনতে পারলেও দামোদরের চোরা স্রোত থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারেনি ওই তিন জন। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় শুভমেরও।

ওই ছাত্রদের দেহ উদ্ধারের কাজে পুলিশকে সাহায্য করে বীরভানপুর এলাকারই কয়েকজন যুবক। তাঁধের মধ্যে বাবন দাঁ, জগু দাঁ, রাজু মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর মুখোপাধ্যায়েরা জানান, এর আগেও একাধিকবার এ কাজ করেছেন তাঁরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্কুল বা কলেজ পড়ুয়ারাই এমন কাণ্ড ঘটায় বলে তাঁদের দাবি।

শোকার্ত।—নিজস্ব চিত্র।

তাঁরাই জানান, ওই জায়গায় ব্যারাজের লক গেট থেকে বেশ কিছুটা নীচে জল পড়ায় জলের চাপে বালি সরে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জলের রঙ দেখে বুঝতে পারেন কোথায় জলের গভীরতা কতটা। তবে নতুন কারও পক্ষে বাইরে থেকে তা বোঝা সম্ভব নয়। এছাড়া অনেক সময়ে জলে তোরা স্রোত থাকে, যা উপর থেকে দেখে ঠাহর করা যায় না। ফলে সাঁতার না জানা অনেকেই ব্যারাজের স্নান করতে নেমে প্রাণ হারান। বাবন, জগুরা বলেন, “আমাদেরই দুর্ভাগ্য যে তরতাজা ছেলেগুলোকে ওই অবস্থায় উদ্ধার করতে হয়।”

কিন্তু এমন দুর্ঘটনা তো এই প্রথম নয়। গত বছরের ১৭ অগস্টও ব্যরাজের জলে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক যুবকের। পুলিশও জানায়, এর আগে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে ব্যারাজের ওই অংশে। মৃতদের অধিকাংশই কলেজ পড়ুয়া বা যুবক। তাঁদের বেশিরভাগই জলের গভীরতা বুঝতে না পেরে স্নান করতে নামে। অনেকে সাঁতারও জানে না। আবার সাঁতার জানা থাকলেও অনেকেই চোরা স্রোত থেকে বেরোতে পারে না।

সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, বোর্ড টাঙানো থাকা সত্ত্বেও যখন একাধিকবার এমনটা ঘটছে, তখন প্রশাসনের তরফে সর্বক্ষণ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয় না কেন? ডিভিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, লকগেটের নীচের অংশে নামা যে বিপজ্জনক তা জানিয়ে বোর্ড লাগানো আছে ঠিকই কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা কেউ মানছেন কিনা তা সর্বক্ষণ নজরদারি করার পরিকাঠামো তাদের নেই।

দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরি সেনগুপ্তের মতে, সচেতনতার অভাব এবং অপরিণত মনোভাবের জন্যই বারবার এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, “সবসময় নজরদারির ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব। তাছাড়া কে স্নান করতে নামবেন আর কে নামবেন না তাও বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল।” তবে দ্রুত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বসে কিছু একটা ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক। তিনি বলেন, “এভাবে বারবার মৃত্যুর ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। দেখি, কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”

durgapur barrage drown death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy