Advertisement
২০ মে ২০২৪

দল ছেড়েছেন বহু নেতা-কর্মী, তবু হাল ছাড়তে নারাজ সন্তোষ

রাজ্যে দলের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি পূর্বস্থলীর অনেক নেতাই এখন তৃণমূলে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক জায়গাতেই মেলেনি প্রার্থী। তবুও লোকসভা ভোটে বিরোধীদের লড়াই দিতে আত্মবিশ্বাসী বর্ধমান-পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায়। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে ৫৯ হাজার ৪১৯ ভোটে নিকটতম তৃণমূল-কংগ্রেস জোট প্রার্থীকে হারিয়েছিল সিপিএম। সেই ভোটে বিজেপির ঝুলিতে এসেছিল ৭১ হাজার ভোট।

রবিবার কাটোয়ায় বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায়।—নিজস্ব চিত্র।

রবিবার কাটোয়ায় বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায়।—নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩৮
Share: Save:

রাজ্যে দলের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি পূর্বস্থলীর অনেক নেতাই এখন তৃণমূলে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক জায়গাতেই মেলেনি প্রার্থী। তবুও লোকসভা ভোটে বিরোধীদের লড়াই দিতে আত্মবিশ্বাসী বর্ধমান-পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায়।

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে ৫৯ হাজার ৪১৯ ভোটে নিকটতম তৃণমূল-কংগ্রেস জোট প্রার্থীকে হারিয়েছিল সিপিএম। সেই ভোটে বিজেপির ঝুলিতে এসেছিল ৭১ হাজার ভোট। তার মধ্যে পূর্বস্থলীর দু’টি বিধানসভা এলাকা থেকে ৩৭ হাজার ভোট পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু পরের নির্বাচনগুলিতে পূর্বস্থলী-সহ গোটা জেলাতেই তেমন সুবিধা করতে পারেনি পদ্মফুল।

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে বর্ধমান পূর্ব এলাকায় বিজেপির ভোট অনেকটাই কমে যায়। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে গোটা জেলাতেই খারাপ ফল করেছিল বিজেপি। দলের এক সময়ের কয়েক জন দাপুটে নেতা এখন তৃণমূলে। তবে বিজেপির দাবি, পুরনো কোনও অঙ্কই কাজ করবে না এ বারের নির্বাচনে। মেমারির পাল্লা ক্যাম্পের বাসিন্দা বিজেপি প্রার্থী সন্তোষ রায় গত পঞ্চায়েত ভোটে মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনের প্রার্থী হয়েছিলেন। সেখান থেকে সোজা লোকসভা ভোটের ময়দানে। এ বারের লড়াইয়ে তাঁর অন্যতম ভরসা হল এলাকার পূর্ববঙ্গীয় ভোট। বিজেপি প্রার্থীর কথায়, “আমার পূর্বপুরুষরা অনেক আগে বাংলাদেশ থেকে মেমারিতে চলে এসেছিলেন। পূর্বস্থলী ও মেমারিতে পূর্ববঙ্গের অনেক মানুষ বাস করেন। তাঁদের প্রতি আমার আলাদা অনুভূতি রয়েছে।” বিজেপি প্রার্থীর আরও দাবি, তৃণমূল ও সিপিএম কর্মীদের একটা অংশের ভোট এ বার পদ্মফুলেই আসবে।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকেই দলের হয়ে কাজ করছেন সন্তোষবাবু। ১৯৯১ সালে তিনি দলের সদস্য হন। বিভিন্ন সময়ে অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতি, জেলা কমিটির সদস্য, জেলা তফসিলি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে দলের জেলা সম্পাদক। নিজের বাড়ি লাগোয়া একটি কাঠের আসবাবের দোকানও রয়েছে তাঁর। সন্তোষবাবুর প্রচারে উঠে আসছে তাঁর পরিবারের লড়াইয়ের কথা। প্রচারে বেরিয়ে তিনি বলছেন, তাঁর বাবা সব্জি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। সন্তোষবাবুর দাবি, “আমি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি।” তাঁর আশা, নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে লড়াই করায় অতিরিক্ত সুবিধা পাবে দল। বিজেপির বর্ধমান জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিক বলেন, “গত বিধানসভায় আমাদের দলের অনেকেই সিপিএমকে হারাবার জন্য তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে বেশির ভাগ জায়গাতেই ভোট করতে দেয়নি তৃণমূল। কিন্তু এ বার কেন্দ্রে সরকার গড়ার ভোট। আমরা ভাল ফল করব।”

তবে, বিজেপির এই দাবিকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে রাজি নয় তৃণমূল। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপির বহু নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। পঞ্চায়েত সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরত্‌পুর পঞ্চায়েত বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তো বিজেপি বেশির ভাগ জায়গায় প্রার্থীই খুঁজে পায়নি। লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপি কোনও প্রভাবই ফেলতে পারবে না।” বর্ধমান-পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল বলেন, “পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় এসে প্রচুর উন্নয়ন করেছে। সেই উন্নয়নের ভিত্তিতেই মানুষ ভোট দেবে। কে কোন দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী সেটা দেখে নয়।” সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাসও বিজেপিকে ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে দেখতে নারাজ। তাঁর কথায়, “বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না।” একই কথা জানিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী চন্দনা মাঝিও।

লড়াই কঠিন। তবু হাল ছাড়ছে না গেরুয়া শিবির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE