Advertisement
E-Paper

বার্নপুরে লাঠি পুলিশের, কুলটিতে তৃণমূল-ফব সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ এক

ভোট দিয়ে দুপুরবেলা বুথের বাইরে বসে ছিলেন শ’খানেক মানুষ। বাড়ি না ফিরে বসে কেন? জবাব এল, “সকালে গ্রামে গিয়ে বুথে আসতে বারণ করেছিল। পুলিশ পাহারা দিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন তো আর পুলিশ নেই। মাঝে এক বার ওরা শাসিয়ে গিয়েছে। তাই জঙ্গল পেরিয়ে গ্রামে ফিরতে ভয় পাচ্ছি।” আসানসোলে জামুড়িয়ার হুবডুবি গ্রামের ওই ভোটারদের ভয় যে অমূলক নয়, তা দিনভর নানা এলাকার অশান্তি থেকেই পরিষ্কার।

সুশান্ত বণিক ও নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০২:৫৪
কুলটিতে গুলিবিদ্ধ তৃণমূল সমর্থক। —নিজস্ব চিত্র।

কুলটিতে গুলিবিদ্ধ তৃণমূল সমর্থক। —নিজস্ব চিত্র।

ভোট দিয়ে দুপুরবেলা বুথের বাইরে বসে ছিলেন শ’খানেক মানুষ। বাড়ি না ফিরে বসে কেন? জবাব এল, “সকালে গ্রামে গিয়ে বুথে আসতে বারণ করেছিল। পুলিশ পাহারা দিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন তো আর পুলিশ নেই। মাঝে এক বার ওরা শাসিয়ে গিয়েছে। তাই জঙ্গল পেরিয়ে গ্রামে ফিরতে ভয় পাচ্ছি।”

আসানসোলে জামুড়িয়ার হুবডুবি গ্রামের ওই ভোটারদের ভয় যে অমূলক নয়, তা দিনভর নানা এলাকার অশান্তি থেকেই পরিষ্কার। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ভোট দিতে বাধা, বুথ থেকে এজেন্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া, এমনকী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এ দিন।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জামুড়িয়া ও বার্নপুরে একের পর এক বুথে এ দিন রিগিংয়ের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। বার্নপুর বয়েজ হাইস্কুলের পাঁচটি বুথে এ দিন সকাল থেকেই বহিরাগতদের আনাগোনা চলছিল। দুপুরে জনা পঞ্চাশের একটি দল বুথে ঢোকার চেষ্টা করলে অশান্তি শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সিপিএম কার্যালয় থেকে জনা ত্রিশ লোক পৌঁছলে গোলমাল আরও পাকে। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা লাঠি চালিয়ে সবাইকে হঠিয়ে দেয়।

দুপুরে জামুড়িয়ার সত্তর গ্রামে তৃণমূলের দুই কর্মী প্রহৃত হন। পরে সেখানে সিপিএম এবং বিজেপি এজেন্টদের বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। রানিগঞ্জের কুমোরবাজারে বুথ দখলের চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি গোলমাল বাধে। বিজেপি-র দাবি, পুলিশ পরিস্থিতি সামলানোর নামে তাদের সমর্থকদের উপরে লাঠি চালিয়েছে। পুলিশ যদিও তা মানেনি। বিকেলে ভোটপর্ব শেষের মুখে কুলটির যশাইডি গ্রামে তৃণমূল ও ফরওয়ার্ড ব্লকের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন রামু চক্রবর্তী নামে এক তৃণমূল কর্মী।

এ দিন সকালে হুমকি না শুনে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য লাউদোহার নতুনডাঙায় মন্ডা বাদ্যকর নামে এক প্রতিবন্ধী মহিলা এবং তাঁর মা, দিদি ও জামাইবাবুর উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই মহিলাকে হুইলচেয়ার থেকে ফেলে দিয়ে তাঁর জামাইবাবুকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।

সিপিএমের ক্ষোভ, তাদের দখলে থাকা জামুড়িয়া ও পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি জানানো হলেও তা হয়নি। শাসকদল তার সুযোগ নিয়েছে। বস্তুত, এ দিন আসানসোল কেন্দ্রে হাতে গোনা কিছু বুথ ছাড়া কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, “গোটা কেন্দ্রে ৬৯টি বুথ থেকে আমাদের এজেন্টদের মেরেধরে বের করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেদার ছাপ্পা ভোট পড়েছে।” বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়রও বক্তব্য, “ছাপ্পা, বুথ দখল থেকে নীরব সন্ত্রাস কিছুই বাদ রাখেনি শাসকদল। তবু এখানে বিজেপি-ই জিতবে।” তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের যদিও দাবি, “একদম সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। গত ৩৪ বছরে তো অনেকে ভোটই দিতে পারতেন না। এখন সবাই উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন।”

বর্ধমানের জেলাশাসক তথা নির্বাচন আধিকারিক সৌমিত্র মোহন বলেন, “৮৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। মোটের উপর ভোট শান্তিপূর্ণ।”

(সহ-প্রতিবেদন: সুব্রত সীট)

sushanta banik nilotpal roychowdhury asansol jamuria lok sabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy