টানা কয়েক দিন বৃষ্টির জেরে আমন চাষে স্বস্তি মিললেও চিন্তায় পড়েছেন সব্জি চাষিরা। এক দিকে যেমন গাছে সংক্রমণের সম্ভবনা, তেমনই তাঁদের ভাবাচ্ছে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কাও। কৃষি দফতরের তরফে সংক্রমণ রুখতে ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কালনা মহকুমায় উৎপাদিত সব্জি জেলা তথা রাজ্যের নানা এলাকায় সরবরাহ হয়। মূলত, পূর্বস্থলী এবং কালনার ১ ও ২ নম্বর ব্লকে সব্জি চাষ হয়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনায় প্রায় ৬৬৮০ হেক্টর জমি জুড়ে সব্জির চাষ হয়। এর মধ্যে শুধু পূর্বস্থলী ২ ব্লকেই রয়েছে ৩৫০০ হেক্টর জমি।
কৃষি দফতরের পরামর্শ
• ছত্রাকনাশক হিসেবে কার্বেনডিজিম এবং কপার অক্সি-ক্লোরাইড জাতীয় ওষুধ প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
• গাছের গায়ে যাতে লেগে থাকে সে জন্য ওষুধে আঠা মেশাতে হবে।
• নিচু এলাকায় গাছের গোড়ায় জমা জল দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
পারুলিয়া, কালেখাঁতলা বাজারের মত বাজারগুলিতে চাষিরা সব্জি বিক্রি করতে আসেন। এরপর ট্রাকে করে সব্জি পৌঁছে যায় জেলা তথা রাজ্যের অন্যান্য পাইকারি বাজারগুলিতে। কিন্তু দিন দশেক ধরে বাজারগুলিতে সব্জির যোগান কম। পারুলিয়া বাজার কমিটির সম্পাদক কালীশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণত ১০ ট্রাক সব্জি বাজারে আসে। এখন সেখানে সারাদিনে মোটে ১ থেকে ২ ট্রাক আসছে।” ফলে, ভাল দাম পেলেও চাষিরা সব্জির ফলন মার খাওয়ার আশঙ্কা করছেন। পূর্বস্থলীর চাষি রমেশ দলুইয়ের আশঙ্কা, “যেখানে ১০ কেজি সব্জি পাওয়ার কথা সেখানে হাতে পাচ্ছি মোটে দু’কেজি। বৃষ্টির ফলে সব্জি গাছ হলুদ হয়ে মরে যেতে পারে। সেরকম হলে সমস্যা আরও বাড়বে।”
অতি বৃষ্টির ফলে সব্জি চারা তৈরি করতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পুজোর বাজার ধরতে পারুলিয়া, মেড়তলা, কালেখাঁতলা ১ ও ২ নম্বর ব্লক এলাকার চাষিরা এই সময় থেকেই সব্জি চারা জমিতে লাগান। কিন্তু বৃষ্টির ফলে সেগুলি মরে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর বৃষ্টি শুরুর আগে মাস তিনেক শুকনো আবহাওয়া চলতে থাকায় মার খায় সব্জি গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি। এই রকম আবহাওয়ায় গাছের পরাগ মিলনের ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই কমেছে সব্জির উৎপাদন। এর সাথে হঠাৎ অতি বৃষ্টির ফলে নিচু এলাকার জমিতে জল জমে গেছে। এর ফলে সব্জি গাছগুলির গোড়ায় পচন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। মহকুমার কৃষি সহ-অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “আর কয়েক দিন টানা বৃষ্টি পড়লে ফলন আরও কমে যাবে।” পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কৃষি আধিকারিক জনার্দন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “এই সময় জমিতে ঝিঙে, পটল, করলা, উচ্ছে ইত্যাদির চারা রয়েছে। এখন যে রকম আবহাওয়া তাতে সব্জির খাঁচায় এবং জমিতে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।” ছত্রাকের হাত থেকে সব্জি গাছ ও চারা বাঁচাতে জনার্দনবাবুর পরামর্শ, “ছত্রাকনাশক হিসেবে কার্বেনডিজিম এবং কপার অক্সি ক্লোরাইড জাতীয় ওষুধ লিটার প্রতি ৫ গ্রাম স্প্রে করলে চাষিরা ভাল ফল পাবেন।”
এই অতি বৃষ্টি সব্জি চাষের পাশাপাশি আমন ধানের মরসুমকেও কয়েক দিন পিছিয়ে দিচ্ছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy