এই সেই জেটি। —নিজস্ব চিত্র।
ছ’বছর ধরে তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে জেটি। অথচ নদীর পাড়ে বাঁশের মাচায় নৌকা ভিড়িয়েই চলছে পারাপার। এ দিকে, সংরক্ষণ ছাড়া অরক্ষিত পড়ে থাকতে থাকতে ফুটব্রিজের পাটাতন ভেঙে পড়েছে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। এমন হাল ভাগীরথীর উপর কাটোয়া-দাঁইহাট জেটির।
বর্ধমান ও নদিয়ার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ উন্নয়ন নিগম কাটোয়া ও দাঁইহাটে ভাসমান ওই জেটি তৈরি করে। ২০০৮ সালের ১৩ মার্চ জেটি দুটির উদ্বোধন করেন বাম আমলের তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী। উন্নয়ন নিগম সূত্রে জানানো হয়েছিল, কাটোয়ার উল্টো দিকে নদিয়ার কালীগঞ্জের বল্লভপাড়া ও দাঁইহাটের উল্টো প্রান্তে নাকাশিপাড়ার মাটিয়ারিতেও একই ভাবে ভাসমান জেটি তৈরি করে হবে। এক মাসের মধ্যে ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে অর্থ্যাৎ নদিয়ার দিকে ভাসমান জেটি লাগানো এবং লঞ্চ চালানোরও আশ্বাস দিয়েছিল তারা। ওই লঞ্চ চালানোর কথা ছিল জলপথ পরিবহণ নিগমের।
তবে এক মাস কেন, ছ’বছরেও পূরণ হয়নি ওই দাবি। লঞ্চ চালানো তো দূর, নদিয়ার প্রান্তে ভাসমান জেটিই তৈরি হয়নি এখনও। অথচ কাটোয়ার দিকে জেটি তৈরির পরে নিচু বাজার ও বড়বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মহলে সুদিন ফেরার আশা জেগেছিল। ওই ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, কাটোয়া শহরে ‘জেটি-ভাগ্য’টাই বোধহয় খারাপ। আটের দশকের শেষ দিকে কাটোয়াতে জেটি তৈরি হয়েছিল। তবে ব্যবহারের আগেই তা ভেঙে পড়ে। এ বারেও একই দশা।
শহরের নিচু বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই নদিয়ার মানুষজনের উপর নির্ভরশীল। তেমনি বড় বাজারের সব্জী ও ফলের বেশির ভাগ জোগান আসে নদিয়ার প্রান্ত থেকে। এ ছাড়াও কাটোয়া শহর থেকে মুদি দ্রব্য নৌকা করে নদিয়ায় যায় আর নদিয়ার মাটিয়ারী থেকে কাঁসা-পিতলের বাসন কাটোয়া শহরে আসে। নদিয়ার একটা বড় অংশের বাসিন্দাদের কাছেও রুটি-রুজি কাটোয়া শহর। ব্যবসায়ীদের দাবি, বছরের পর বছর নৌকায় যাতায়াত করতে করতে নদিয়ার বাসিন্দারাও বিরক্ত। এক সময় দেবগ্রাম-তেহট্ট এলাকার বাসিন্দারাও কাটোয়ার উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি না হওয়ায় তাঁরা আর কাটোয়াতে আসেন না। একরকম বাধ্য হয়েই কালীগঞ্জ ও নাকাশিপাড়া থানা এলাকার বাসিন্দাদের কাটোয়াতে আসতে হয়। ব্যবসায়ী মহলের দাবি, জেটি ও লঞ্চ চালু হলে জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি হত। ফলে এলাকারও উন্নতি হত। পাশাপাশি নিত্যযাত্রীদের যাতায়াত সমস্যাও অনেকটাই লাঘব হত।
কিন্তু ছ’বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকায় বেহাল হয়ে পড়েছে কাটোয়া ও দাঁইহাটের জেটি। জেটিতে ওঠার ফুটব্রিজের বেশিরভাগ পাটাতন নেই। ফলে দুর্ঘটনা যেন ওৎ পেতে বসে আছে। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, উদ্বোধনের এক মাসের মধ্যে জেটি চালু করার কথা বলেছিল পরিবহণ দফতর। চালু তো হয়নি উল্টে গঙ্গাসাগর মেলার সময় জেটি খুলে নিয়ে যায় পরিবহণ দফতর। পরে ভাঙা জেটি এনে লাগিয়ে দিয়েছে। কাটোয়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার প্রান্তে ভাসমান জেটি তৈরি করার জন্য বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমনকী ওই জেটি তৈরির জন্য পুরসভা ১০ লক্ষ টাকা পরিবহণ নিগমকে দেবে বলেও পুর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন।
কাটোয়া ও দাঁইহাটের সঙ্গে ত্রিবেণী থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য ভাগীরথীর দু’দিকে ৫৭টি জেটি তৈরি পরিকল্পনা নিয়েছিল পরিবহণ দফতর। বেশ কয়েকটি জায়গায় দু’প্রান্তে জেটি থাকায় তা চালুও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাটোয়া ও দাঁইহাটের উল্টোপ্রান্তে জেটি বসানো হল না কেন? পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ উন্নয়ন নিগম সূত্রে জানানো হয়েছে, নদিয়ার প্রান্তে ভাগীরথীর উপর বিশাল চর রয়েছে। বর্ষাকালে ওই চর ডুবে যায়। ফলে জেটি বসানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেজ্ঞরাও সঠিক পরামর্শ দিতে না পারায় নিগমের সমস্যা আরও বেরেছে।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে জেটিদুটির সলিল সমাধি না ঘটে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy