শংসাপত্রের খোঁজে ভিড় ছাত্রছাত্রীদের। নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসনিক অব্যবস্থায় মাসের পর মাস আটকে রয়েছে বহু শংসাপত্র, এমনই অভিযোগ তুললেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের তফসিলি জাতি, উপজাতি ও ওবিসি সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও শংসাপত্র মিলছে না। ফলে কলেজে ভর্তি, চাকরির আবেদনপত্র-সহ নানা জায়গায় শংসাপত্র দাখিল করতে পারছেন না তাঁরা।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, অনলাইনে আবেদন করার পরে সংশ্লিষ্ট ব্লকের ‘ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার’ অফিসে সেই আবেদনের স্বপক্ষে নানা নথিপত্র জমা দিতে হয়। যেমন, বংশে কারও শংসাপত্র রয়েছে কি না, থাকলে আবেদনকারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক কি ইত্যাদি। দফতরের আধিকারিক নথিগুলি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে সঠিক মনে করলে বিডিওর কাছে তা পাঠিয়ে দেন। এরপরে যাবতীয় নথিপত্র-সহ আবেদনপত্রগুলি চলে আসে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের শংসাপত্র সংক্রান্ত বিভাগে। সেখানেও প্রত্যেকটি নথি ফের পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি দেখা হয় আবেদনপত্রগুলি সরকারি নিয়ম মেনে করা হয়েছে কি না। এক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম ধরা পরলে আবেদন ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপরে তৈরি হয় শংসাপত্র। তাতে সই করেন মহকুমাশাসক নিজে।
তবে মহকুমার অন্য চার ব্লকে অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ার পরে কাজের গতি বাড়ালেও পূর্বস্থলী ১ ব্লকের ছবিটা অনেকটাই উল্টো। অন্তত এমনটাই দাবি ছাত্রছাত্রীদের। দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে, আগে থেকেই বহু আবেদন জমে ছিল। তারপর সম্প্রতি পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে ক্যাম্প করে আবেদন পত্র জমা নেওয়াই ওই সংখ্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় দেড় হাজারের আবেদনপত্র এখনও জমা পরে রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, আবেদন জমা দেওয়ার সাত-আট মাস পরেও সরকারি কার্যালয় থেকে শংসাপত্র মিলছে না। এমনকী বিসিডব্লু অফিস থেকে অনেকের নথিপত্র হারিয়ে যাচ্ছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। ফলে চাকরি ক্ষেত্রে, স্কুল-কলেজ-সহ নানা প্রয়োজনে অনেকে যেমন শংসাপত্র দাখিল করতে পারছেন না, তেমনি শংসাপত্রের জন্য হয়রান হতে হচ্ছে অনেককে। বহু দূর থেকে বারবার শংসাপত্র নিতে এসে তা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করছেন অনেকে। পঞ্চায়েত সমিতিগুলি থেকে জানা গিয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা বারবার এসে ফিরে যেতে হওয়ায় পঞ্চায়েত দফতরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। নথিপত্র হারানো নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে নানা প্রশ্নও করছেন। পূর্বস্থলী পারুলডাঙা এলাকার স্কুলছাত্র প্রেমানন্দ বসাকের দাবি, “আমি কালনা কলেজে পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার পছন্দের কলেজ ছিল কৃষ্ণনগর। ওবিসি শংসাপত্র থাকলে পছন্দের কলেজে ভর্তিও হতে পারতাম। অথচ বছর খানেক আগে পূর্বস্থলী ১ ব্লকে শংসাপত্রের জন্য আবেদন করলেও এখনও তা হাতে পাইনি।” শংসাপত্র না থাকায় পলিটেকনিকের র্যাঙ্ক ভাল হয় নি নবদ্বীপ কলেজের ছাত্র, পারুলডাঙা পূর্বপাড়ার বাসিন্দা অপু বিশ্বাসের। তাঁর দাবি, নথিপত্র জমা দেওয়ার পরে তাকে জানানো হয় সেগুলির খোঁজ মিলছে না। ফের নথি জমা দেওয়ার পরে এক বছর কেটে গেলেও তফসিলি জাতির শংসাপত্র পাননি তিনি। জাহান্নগরের বাসিন্দা আজাহারউদ্দিন শেখ জানান, তাঁর ওবিসি শংসাপত্রে পদবী ভুল এসেছিল। তা ঠিক করার জন্য দীর্ঘদিন ঘুরেও লাভ হয় নি।
পড়ুয়াদের সমস্যার উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গিয়েছে, গত চার বছর ধরে ওই ব্লকে স্থায়ী ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার অফিসারের পদ শূন্য। স্বাস্থ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মচারি কাজ চালালেও মাস দেড়েক আগে তিনিও অন্যত্র বদলি হয়ে যান। ফলে আপাতত জোড়াতালি দিয়েই চলছে দফতরটি। কাজ চালাতে কখনও সেচ প্রকল্প আবার কখনও ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজে নিযুক্ত সরকারি কর্মীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযোগ, নানা সময়ে নানা লোক দফতরটি দেখভাল করায় এবং তাঁদের মধ্যে পর্যাপ্ত যোগাযোগ না থাকায় নথিপত্র হারিয়ে যাচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়াটি চলছেও অত্যন্ত শ্লথ গতিতে। মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিকের কথায়, “যে সমস্ত আবেদনকারীর পরিবারের কারও শংসাপত্র নেই তাদের একটি ফর্ম দিয়ে সেখানে তিনজন সরকারি কর্মী তাকে বিশেষ শ্রেণিভুক্ত বলে চিহ্নিত করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এই প্রমাণ মেলার পরেই তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হয়। পূর্বস্থলী ১ ব্লকে এ ধরণের বহু আবেদনপত্রে সরকারী কর্মীদের সই থাকছে না। ব্লক থেকে খুঁটিয়ে না দেখেই তা মহকুমায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ওই আবেদন ফেরত গিয়ে আবার আসছে। এতেই সমস্যা বাড়ছে।”
শংসাপত্র সময়ে না মেলার সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিকও। তিনি জানান, সমস্যাটি মহকুমা প্রশাসনের গোচরে আনা হয়েছে। কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ‘কালীপুজোর পরে অন্য ব্লক থেকে অফিসার এনে ক্যাম্প করে সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্থায়ী আধিকারিকের প্রয়োজনের কথাও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy