Advertisement
২০ মে ২০২৪

ভাঙছে পাড়, ভিটে ছাড়ছেন বাসিন্দারা

হঠাৎ গ্রামটিতে ঢুকে পড়লে মনে হবে এ এক নেই রাজ্যের দেশ। পড়ে রয়েছে গ্রামের আটচালা, কুঁড়েঘর। চাষ জমিতে ধানের বদলে গজিয়ে উঠেছে আগাছা। কিন্তু গ্রামের মানুষগুলো সব গেল কোথায়? প্রশ্ন করতেই গুটিকয় বাসিন্দা জানালেন, প্রায় সবাই ভাগীরথীর ভাঙনের আশঙ্কায় ভিটে ছেড়েছেন। এমনই অবস্থা পূর্বস্থলীর যজ্ঞেশ্বরপুর গ্রামের।

পূর্বস্থলীর যজ্ঞেশ্বরপুরে তলিয়ে যাচ্ছে ধানজমি। নিজস্ব চিত্র।

পূর্বস্থলীর যজ্ঞেশ্বরপুরে তলিয়ে যাচ্ছে ধানজমি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০১:৫১
Share: Save:

হঠাৎ গ্রামটিতে ঢুকে পড়লে মনে হবে এ এক নেই রাজ্যের দেশ। পড়ে রয়েছে গ্রামের আটচালা, কুঁড়েঘর। চাষ জমিতে ধানের বদলে গজিয়ে উঠেছে আগাছা। কিন্তু গ্রামের মানুষগুলো সব গেল কোথায়? প্রশ্ন করতেই গুটিকয় বাসিন্দা জানালেন, প্রায় সবাই ভাগীরথীর ভাঙনের আশঙ্কায় ভিটে ছেড়েছেন। এমনই অবস্থা পূর্বস্থলীর যজ্ঞেশ্বরপুর গ্রামের।

গত এক মাস ধরে লাগাতার ভাগীরথীর ভাঙনের যেরে গোটা গ্রামটিই তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাসিন্দারা দিন কাটাচ্ছেন রেল স্টেশন বা দূরের কোনও পরিচিতের বাড়িতে। এমনিতে গ্রামটিতে প্রায় ২ হাজার মানুষের বাস। কিন্তু বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০০তে।

মূলত কৃষিজীবী গ্রামটিতে ৪০০ হেক্টর কৃষিজমি ছিল। ভাগীরথীর ভাঙনের ফলে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ২০ বিঘা। কিন্তু এই জমিতেও চাষ করা যাচ্ছে না। কারণ গ্রামের সেচ ব্যবস্থা ভাঙনের ফলে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত বছরেও ভাঙনের ফলে অন্য একটি সেচ প্রকল্প তলিয়ে যায়। গ্রামীণ অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে অনিবার্যভাবেই। এই গ্রামের মানুষরা এখন পাশের গ্রামে খেতমজুরের কাজ করছেন।

শুধু কৃষিজমিই নয়, নদীগর্ভে চলে গিয়েছে গ্রামের রাস্তা, স্কুলবাড়ি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র। চলতি বছরে বর্ষা নামতেই নদী ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ‘ইউ’ আকারে ভেঙে পড়ছে পাড়ের মাটি। তার সাথে তলিয়ে যাচ্ছে নলিনী সূত্রধর, পরিতোষ দত্ত, সুভাষ দেবনাথদের বসত বাড়ি। যে কোনও সময় তলিয়ে যেতে পারে, পাড়ে ঝুলে থাকা গোপাল দেবনাথ, পরিমল মিস্ত্রিদের বাড়িগুলিও। ভাঙন এলাকার একশ মিটারের মধ্যে রয়েছে আরও ৫০টি বাড়ি। এই পরিস্থিতিতে গ্রাম ছাড়ছেন বাসিন্দারা। গোপালবাবুর কথায়, “ঘুমের মধ্যে যাতে তলিয়ে না যায় তার জন্য মাকে নিয়ে রেলস্টেশনে অথবা আত্মীয়দের বাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে।” নদীর পাড়ে ছোট্ট এক ঘরে থাকেন অশীতিপর বিন্দুবাসীনি দেবী। তিনি জানান, বছর তিনেক আগে ইন্দিরা আবাস যোজনা থেকে বাড়িটি তাকে তৈরি করে দেওয়া হয়, কিন্তু যেভাবে পাড় ভাঙছে তাতে হয়ত মাথাগোঁজার একমাত্র ঠাঁইটুকুও হারাতে হবে।

গত বছরের তুলনায় এ বছরে ভাঙনের তীব্রতা বেশি বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক বছরে ভাগীরথীতে লঞ্চ চলাচল ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় তীব্র গতিতে জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ছে নদীর পাড়ে। এর পাশাপাশি নদীতে জেগে উঠেছে চর। এর ফলে স্বাভাাবিকভাবেই নদী ভাঙনের পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করেন বাসিন্দারা। তবে শুধু যজ্ঞেশ্বরপুর গ্রামেই নয়, ভাঙনের দেখা যাচ্ছে পাশের গ্রাম নপাড়াতেও।

সম্প্রতি যজ্ঞেশ্বরপুর গ্রামে ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে যান পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। ঘটনাস্থল থেকেই তিনি যোগাযোগ করেন সেচ দফতরের সাথে। তপন বাবু বলেন, “গ্রাম বাঁচাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি সেচ দফতরের আধিকারিদের।” কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, গ্রামটিকে বাঁচাতে একটি বড় পরিকল্পনা জমা পড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purbasthali leaving residents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE