Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের মুখে চলছেই কয়লা, সরব বিরোধীরা

ভোট বৈতরণি পেরোতে সম্বল সেই পুরনো হাতিয়ার। কয়লাঞ্চলে কান পাতলে ভোটের আগে শোনা যাচ্ছে এমন কথাই। বাম আমলে অবৈধ কয়লা কারবারকে সামনে রেখে সিপিএম এই খনি-শিল্পাঞ্চলে দেদার ভোট কুড়োত বলে টানা অভিযোগ করে এসেছে বিরোধীরা। এ বার ভোট টানতে সেই পন্থা নেওয়ার আঙুল উঠেছে বর্তমান শাসকদলের দিকে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০১:০১
Share: Save:

ভোট বৈতরণি পেরোতে সম্বল সেই পুরনো হাতিয়ার।

কয়লাঞ্চলে কান পাতলে ভোটের আগে শোনা যাচ্ছে এমন কথাই।

বাম আমলে অবৈধ কয়লা কারবারকে সামনে রেখে সিপিএম এই খনি-শিল্পাঞ্চলে দেদার ভোট কুড়োত বলে টানা অভিযোগ করে এসেছে বিরোধীরা। এ বার ভোট টানতে সেই পন্থা নেওয়ার আঙুল উঠেছে বর্তমান শাসকদলের দিকে। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বেআইনি কয়লা কারবারে কিছুটা হলেও যে রাশ টানা হয়েছিল, লোকসভা ভোটের আগে শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে তা খানিকটা আলগা করা হয়েছে বলেও খনি অঞ্চলের বাসিন্দা ও বিরোধীদের একাংশের দাবি। কয়লা কারবার যে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, জামুড়িয়ার পরিহারপুরে অবৈধ খাদানে নেমে ছ’জনের প্রায় দেড় দিন আটকে থাকার ঘটনাতেও তা সামনে এসেছে। যদিও তৃণমূল নেতারা কয়লা কারবারে মদত দেওয়ার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন।

বাম আমলের বিরোধী দলগুলির দাবি অনুযায়ী, এই শতকের গোড়ার দিক থেকেই ভোটের সময়ে কয়লা মাফিয়াদের কাজে লাগাতে শুরু করে সিপিএম। স্থানীয় সিপিএম নেতার হাত ধরে খণ্ডঘোষে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে কলেজ গড়ার জন্য চেক তুলে দিতেও দেখা গিয়েছিল কয়লা মাফিয়া কালে সিংহকে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে জামুড়িয়ায় তৃণমূল নেতা রবীন কাজিকে গাড়ি চাপা দিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে কয়লা মাফিয়া দিনু বাউড়ির বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, এখন কয়লা মাফিয়ারা বর্তমান শাসকদলের দিকে ঝুঁকেছে। বারাবনিতে পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছেন এমন এক জন, যাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি কয়লা কারবারের নানা মামলা রয়েছে। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, জামুড়িয়ায় দু’টি বুথের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এমন এক জনকে, যিনি পরিচিত কয়লা মাফিয়া।

এলাকাবাসীর দাবি, আসানসোল দক্ষিণ এলাকায় ভালুকসোদা-হাতিবাগান ও ডামরা জঙ্গলে অবৈধ কয়লা খনন ও পাচার চলছে। এবি পিট এলাকা, কালিপাহাড়ি চুনভাট্টির পাশে ডাবলিয়া, জামুরিয়ার সাতগ্রাম শ্মশানের কাছে অবৈধ খননের অভিযোগে দিন দশেক আগে জীতেন, বাবন নামে কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। তাতে অবশ্য খনন বন্ধ হয়নি বলে এলাকাবাসীর দাবি। সাইকেল ও গরুর গাড়িতে কয়লা এনে লরিতে বোঝাই করে পাচার হচ্ছে বিভিন্ন প্রান্তের ইটভাটা থেকে ছোট কারখানায়। নিউকেন্দার বাহাদুরপুর, ভুরি, ফরফরি ও সিঙ্গারন নদীর গা ঘেঁষে কয়লা খনন চলছে। জামবাদ, পরাশিয়া ৫ নম্বরে খোলামুখ খনিতে কয়লা কাটা চলছে। সেখানে কোলিয়ারির বৈধ কয়লাও চুরি করে এনে মজুত করছে চোরেরা। পুলিশ ও এলাকার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সব এলাকায় ‘কয়লা চালানো’র দায়িত্বে রয়েছে বাপি নামে এক ব্যক্তি।

এলাকা সূত্রে আরও খবর, পরিহারপুরের কয়লা পৌঁছে যাচ্ছে কৈথিতে এক ইটভাটায়। সেখান থেকে পাচার হচ্ছে নানা এলাকায়। বীজপুরে চলছে পাঁচটি ডিপো। নর্থ সিহারশোল খোলামুখ খনি, কাটাগড়িয়ার অবৈধ খনি থেকে সাইকেল, গরুরগাড়িতে কয়লা পাচার হচ্ছে। পিওর সিহারশোল, রানিসায়র, রনাই, নারায়ণকুড়িতে বন্ধ হয়ে য়াওয়া খোলামুখ খনিতে কয়েকশো লোক প্রতি দিন কয়লা কেটে পাচার করছে দামোদর পেরিয়ে বাঁকুড়ার মেজিয়ায়। কুলটির আলডি, বড়িরাতেও খনন চলছে। বকবান্দি, বনবিষ্ণুপুর, মাঝিয়াড়া থেকে আসানসোল জিটি রোডে ভোরের দিকে কয়লা পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

এ ছাড়া সিন্ডিকেট তৈরি করে কয়লা কারবার চালানো হচ্ছে বলেও খনি অঞ্চলে বিরোধী দলগুলি ও বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। এই সিন্ডিকেট স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা চালাচ্ছেন বলে দাবি। পাণ্ডবেশ্বরের ভালুকা, খোট্টাডিহি খোলামুখ খনি চালুর আগে সকাল সকাল চুরি হয়ে পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ। রাতেও সাইকেল, গরুর গাড়িতে কয়লা পাচার হচ্ছে। কাপিষ্টা, জামগ্রাম, রসুলপুর জঙ্গল, নুনিয়াবুড়ির জোড়ের ধারে অবাধে এই কাজ হচ্ছে।

অবৈধ খাদান যে বন্ধ হয়নি, তা মেনে নিয়েছেন ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়। তিনি বলেন, “বেআইনি খনন বন্ধের জন্য আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। পুলিশ যখন সাহায্য চায়, তা করা হয়।” আসানসোলের বিদায়ী সাংসদ তথা সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, “যে কয়লা কোলিয়ারি ফেলে দিত, সেটা গরিব গ্রামবাসীরা নিয়ে যেতেন। সেটা বন্ধ করে শাসকদল প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, বেআইনি কয়লা খনন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আদতে তৃণমূলের কিছু নেতা কয়লা চুরিতে মদত দিয়েই চলেছেন।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন (দাশু) অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “আদতে বামেরা নিজেদের আমলের শেষ দিন পর্যন্ত কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে নিয়ে চলেছে। এখন আমাদের বিরুদ্ধে এ সব ভুয়ো অভিযোগ তুলছে।”

আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের বক্তব্য, “যখনই বেআইনি খনন বা পাচারের খবর মেলে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nilotpal chowdhury raniganj colliery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE