Advertisement
E-Paper

মানা সত্ত্বেও সিন্ডিকেট চলছে জামুড়িয়ায়

দলের উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে, সিন্ডিকেটের সঙ্গে কোনও নেতা-কর্মীর যুক্ত থাকা চলবে না। তা সত্ত্বেও সিন্ডিকেট চলছে তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতার মদতে, এমনই অভিযোগ উঠেছে জামুড়িয়ার শিল্পতালুকে। দিন কয়েক আগেই জামুড়িয়ার বিজয়নগরে সিন্ডিকেট চালানো নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বিজয়নগর নয়, চণ্ডীপুর, ইকড়া-সহ নানা এলাকাতেই সিন্ডিকেট চলছে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০১:০৩

দলের উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে, সিন্ডিকেটের সঙ্গে কোনও নেতা-কর্মীর যুক্ত থাকা চলবে না। তা সত্ত্বেও সিন্ডিকেট চলছে তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতার মদতে, এমনই অভিযোগ উঠেছে জামুড়িয়ার শিল্পতালুকে।

দিন কয়েক আগেই জামুড়িয়ার বিজয়নগরে সিন্ডিকেট চালানো নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বিজয়নগর নয়, চণ্ডীপুর, ইকড়া-সহ নানা এলাকাতেই সিন্ডিকেট চলছে। জামুড়িয়ায় প্রথম শিল্পতালুক গড়ে উঠেছিল ইকড়ায়। এর পরে শেখপুর, দামোদরপুর, চণ্ডীপুর, বিজয়নগর, ধসনা পেরিয়ে চাকদোলা পর্যন্ত একের পর এক কারখানা গড়ে ওঠে। আর তার পরেই সিন্ডিকেটের রমরমা শুরু।

এলাকার নানা সূত্রে জানা যায়, ইকড়ায় নিমার্ণকাজ শুরু হতেই সামগ্রী সরবরাহের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান এক দল যুবক। ন্যূনতম মুনাফায় তাঁরা সামগ্রী বিক্রি করতে চাইলে কারখানা কর্তৃপক্ষ নিতে রাজি আছেন, এই বার্তা মেলার পরে ইকড়া, শেখপুর ও চণ্ডীপুরের ১৩০ জন বাসিন্দাকে নিয়ে জামুড়িয়া শিল্পতালুকে সিন্ডিকেট শুরু হয়। কিছু দিন পরে শেখপুর, চণ্ডীপুর ও বিজয়নগরে পৃথক সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। নির্মাণকাজ শেষ হয়ে এলে কিছু কারখানা অবৈধ কয়লাও কিনতে শুরু করে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। আর এই অবৈধ কয়লা কারবারিদের কাছ থেকে প্রতি টনে ৫০ টাকা দরে লরি পিছু ন্যূনতম এক হাজার টাকা আদায় করা হতে থাকে, দাবি এলাকাবাসীর একাংশের।

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে অবৈধ কয়লা সরবরাহে ভাটা পড়ে। ইকড়া ও শেখপুরে সিন্ডিকেট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের মাস কয়েক আগে ইকড়ায় সিন্ডিকেট গঠিত হয়। এলাকা সূত্রের দাবি, এই নতুন সিন্ডেকেটের সদস্যেরা সামগ্রী কেনাবেচা করছেন না। চারকোল-সহ নানা সামগ্রী যারা কিনে যাচ্ছে, তাঁদের কাছ থেকে প্রতি টনে ২০ টাকা করে আদায় করছেন তাঁরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার এক তৃণমূল নেতা দাবি করেন, ইকড়ায় সিন্ডিকেট গঠনের সময়ে প্রচার করা হয়েছিল, জামুড়িয়ার ২৩টি ওয়ার্ডে দলের কর্মীদের লভ্যাংশ দেওয়া হবে। আদতে জনাকয়েক নেতা ছাড়া টাকা কে বা কারা পাচ্ছেন, তা কারও জানা নেই বলে তাঁর অভিযোগ।

বিজয়নগরে তৃণমূলের জামুড়িয়া ২ ব্লকের নেতা তাপস চক্রবর্তী ও সুকুমার ভট্টাচার্যের মদতে সিন্ডিকেট চলছে বলে অভিযোগ। তাপসবাবু ও সুকুমারবাবুরা যদিও ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি জানান। তাঁদের দাবি, এলাকার কিছু বেকার এক জোট হয়ে কারখানায় বাজারদরে সামগ্রী সরবরাহ করছেন। এই কাজে যুক্ত প্রায় শ’খানেক পরিবার। তাপসবাবু জানান, এই কাজটি তিন ভাগে ভাগ করেছেন তাঁরা। প্রথমত, যাঁরা বেশি বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা লভ্যাংশ বেশি পাবেন। দ্বিতীয়ত, সদস্যেরা নির্দিষ্ট সামগ্রী সরবরাহের জন্য আলাদা ভাবে কোটার মাধ্যমে সুযোগ পাবেন। কেউ নিজে সরবরাহে সক্ষম না হলে অন্য কাউকে তাঁর কোটা বিক্রি করতে পারেন। তৃতীয়ত, গ্রামের যে সব পরিবার এর সঙ্গে যুক্ত নয়, তাঁদেরও সম্পূর্ণ মুনাফার লভ্যাংশ থেকে নির্দিষ্ট অনুদান দেওয়া হয়। এ ভাবে প্রায় শ’চারেক পরিবার উপকৃত হচ্ছে বলে দাবি তাপসবাবুর। তাঁর বক্তব্য, “এটি যাতে সুষ্ঠু ভাবে না চলে তার জন্য বিজেপি এবং সিপিএম কিছু সুবিধাভোগী সদস্যকে অতিরিক্ত লাভের লোভ দেখিয়ে বিক্ষোভ করিয়েছিল। গ্রামবাসীরাই তাদের আটকেছেন।”

চণ্ডীপুরে একটি কারখানার রেল সাইডিংয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। এলাকার তৃণমূল কর্মী কাজল চৌধুরী, রাজা ঘোষেরা বলেন, “তোলাবাজির অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে কখনও ওঠেনি। আমরা গ্রামসুদ্ধ লোক নির্মাণ সামগ্রী বাজারদরে সরবরাহ করি। আমাদের সিন্ডিকেট অনেক পুরনো।” ইকড়ার তৃণমূল কর্মী হরশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় আবার সাফ বলেন, “আমি একা টাকা তুলি, এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। শহরের সব ওয়ার্ড নিয়ে দু’শোর বেশি সিন্ডিকেট সদস্য আছেন। টাকা ওঠে পদ্ধতি মেনে। তার লভ্যাংশ সমস্ত ওয়ার্ডের বেকার যুবকেরা পান।” ইকড়ায় তৃণমূলের ব্লক কোর কমিটির সদস্য অলোক দাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গঠিত হয়েছিল বলে বিরোধীদের অভিযোগ। অলোকবাবু যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “সিপিএমের আমলেই সিন্ডিকেট শুরু হয়েছিল। আমাদের দলের নির্দেশ রয়েছে, এর সঙ্গে কারও যুক্ত থাকা চলবে না।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, “দলের কেউ কেউ সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বাম আমলে সিন্ডিকেট শুরুর অভিযোগ উড়িয়ে জামুড়িয়ার সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের দাবি, “আমাদের সময়ে সিন্ডিকেট বলে কিছু ছিল না। গ্রামবাসীরা কারখানাগুলির সঙ্গে কথাবার্তা বলে দর ঠিক করে সামগ্রী সরবরাহ করতেন। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ ছিল না।” পুলিশ জানায়, সিন্ডিকেট নিয়ে কোনও অভিযোগ এখনও জমা পড়েনি। অভিযোগ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নানা কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, বাজারদরে সামগ্রী পেলে কিনতে অসুবিধা নেই। সামগ্রী সরবরাহ নিয়ে কারখানার বাইরে কোনও বিশৃঙ্খলা হলে তার দায়িত্ব তাঁদের নয়।

syndicate jamuria nilotpal roychowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy