বহু বছর আগে বর্ধমান রাজ পরিবারের তরফে উপহার মিলেছিল পাথরের সিংহবাহিনী মূর্তি। তারপর থেকে নিত্য পুজো, ভোগ, আরতি নিয়ম হয়ে গিয়েছিল মঙ্গলকোটের দেবগ্রামের চক্রবর্তী পরিবারে। কিন্তু শরত্কাল এলেই ছোট ওই মূর্তিতে পুজোর আনন্দ মিটত না বাড়ির সদস্যদের। সমাধান খুঁজতে যিনি ওই মূর্তি উপহার পেয়েছিলেন, সেই তারিণপ্রসাদ চক্রবর্তীর দুই ছেলে খড়-মাটি দিয়ে গড়ে ফেললেন একচালার দুর্গা প্রতিমা। বানালেন মাটির ঘরও। সেই শুরু। তিনশো বছর ধরে খড়ের চাল আর মাটির দেওয়ালের ওই ঘরেই চলছে চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজো।
বাড়ির সদস্যেরা জানান, রোজই ৫২ পদের ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। সঙ্গে থাকে পাঁঠার মেটে ও ফুসফুসের বিশেষ রান্না। ওই রান্না ছাড়া ভোগ দেবীর মুখে রোচে না বলে তাঁদের বিশ্বাস। আর বছরে একবার বাপের বাড়ি আসা উমাকে আপ্যায়নে কোনও ঘাটতি রাখতে চান না চক্রবর্তী বাড়ির সদস্যেরা। ওই পরিবারের এক সদস্য সুব্রত চক্রবর্তী জানান, মাটির হাঁড়িতে পাঁঠার মেটে ও ফুসফুস রান্না করে দেবীকে ভোগ দিতে হয় সপ্তমী থেকে নবমী, তিন দিনই। তবে পেঁয়াজ বা রসুন দিয়ে নয়, লঙ্কা চিরে, আদা, জিরে দিয়ে পাঁঠার মেটে ও ফুসফুস রান্না করা হয়, যা চক্রবর্তী বাড়িতে ‘মহাভোগ’ বলে পরিচিত। এ ছাড়া পুজোর ক’দিন পায়েস, চাটনি, টক, ১৬ রকম ভাজা-সহ ৫২ রকম পদের রান্না করে দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যেরা জানান, দেবীর ভোগ রান্নার জন্য মাটির বিশেষ পাত্র বরাত দেওয়া হয়। পুজোর ক’দিন ওই পাত্রে ভোগ রান্না করার পরে দেবী মূর্তি বিসর্জনের সঙ্গে মাটির পাত্রগুলিকেও জলে ভাসিয়ে দেওয়ার রীতি রয়েছে।
বর্ধমান-সিউড়ি রোডের ধারে দেবগ্রামের ওই বাড়ির পূর্বপুরুষ তারিণবাবু বর্ধমানের রাজ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা যায়। রাজ পরিবারের তরফেই তাঁকে পুজোর উত্সাহ দেওয়া হয়। দেওয়া হয় পাথরের দুর্গামূর্তি। বাড়ির সদস্যেরা বলেন, “পুজোর সময় একচালার মূর্তি তৈরি হলেও পাথরের ওই সিংহবাহিনীই আমাদের কুলদেবী।” মূর্তিটিকে প্রকাশ্যে আনাও হয় না। পরিবারের সদস্যদের দাবি, দুর্গাপুজোর সময় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান চক্রবর্তী বাড়িতে আগে হয়, তারপর গ্রামের অন্য বাড়ি বা বারোয়ারিতে হয়। এখনও গ্রামের ওই পুজোকে ঘিরে কলকাতা-বেঙ্গালুরু থেকে আত্মীয়স্বজনরা ছুটে আসেন। বছরের অন্য সময়ে আসতে না পারলেও পুজোর সময় প্রতি বছর অন্তত ৮০ জন সদস্য বাড়িতে হাজির হন। এ ছাড়াও সপ্তমী ও নবমীর দিন গ্রামের পাড়াপড়শিদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর রেওয়াজ এখনও চালু রেখেছে চক্রবর্তী পরিবার। ওই পরিবারের যুবক প্রত্যুষ চক্রবর্তী বলেন, “ওই দু’দিন প্রায় ৪০০ জনের পাত পড়ে আমাদের বাড়িতে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy