বিসি রায় রোডে টেলিফোন ভবনের সামনে। ছবি: বিকাশ মশান।
এক সময়ে যে শহর বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে দেশের মধ্যে সেরা হয়ে দিল্লি থেকে পুরস্কার এনেছিল, সেই শহরের আনাচে-কানাচে এখন জঞ্জালের স্তূপ। বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় পুরসভা শহরের একটি ফাঁকা এলাকায় বর্জ্য ফেলত। বাসিন্দাদের বাধায় তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে শহরের বর্জ্য রয়ে যাচ্ছে শহরের ভিতরেই। ভুগছেন বাসিন্দারা। কবে এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাবেন পুরবাসী, জানাতে পারেনি পুরসভা।
বছর সাতেক আগে কেন্দ্রীয় ‘জহরলাল নেহরু ন্যাশানাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পের আওতায় কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু হয় দুর্গাপুরে। কাজের পরিসর এতটাই বিস্তৃত ছিল যে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার দুর্গাপুর পুরসভাকে সেরার পুরস্কার দেয়। দ্বিতীয় হয় পুণে। সেই সময়েই কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ার কাজও শুরু হয় জেএনএনইউআরএম এবং একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ লগ্নিতে। ২০১০ সালে কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। সেখানে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে সার, বিশেষ ধরনের ইট তৈরির ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই সমস্যা দেখা দেয় কেন্দ্রটিতে। কখনও ঠিকাকর্মীরা নিয়মিত বেতন না পাওয়ার অভিযোগ তুলতেন। কখনও আবার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা অভিযোগ করত, যে পরিমাণ বর্জ্য প্রয়োজন, তা পুর এলাকা থেকে আসে না। ফলে, কেন্দ্রটি চালিয়ে লাভ হচ্ছে না। এ দিকে, লক্ষ লক্ষ টাকা বিদ্যুতের বিল বাকি পড়তে থাকে। শেষে গত বছর ৬ জুলাই ওই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেয় দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। তখন থেকে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটি।
এ বার বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে, সে নিয়ে সমস্যায় পড়ে পুরসভা। ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামের সম্প্রসারিত অব্যবহৃত অংশে বর্জ্য ঢালা শুরু হয়। বর্জ্যের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় আপত্তি ওঠে শহরবাসীর তরফে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শহরের বিভিন্ন ফাঁকা এলাকায় বর্জ্য ফেলতে শুরু করে পুরসভা। কিন্তু বাসিন্দাদের আপত্তিতে কোথাও স্থায়ী ভাবে সে কাজ করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত ১৫ এপ্রিল থেকে ফের বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি চালু করার ব্যাপারে সম্মত হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাটি। কিন্তু ২৫ এপ্রিল সেখানে বড়সড় আগুন লাগে। দমকলের ৬টি ইঞ্জিন কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনলেও কেন্দ্রটি আর চালু হয়নি। এ বার পুরসভা স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি কার্যত অগ্রাহ্য করেই বর্জ্য ঢালার জন্য বেছে নেয় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেসরকারি ওষুধ কারখানা ও বর্ধমান-আসানসোল রেললাইনের মাঝের ফাঁকা অংশটিকে।
কিন্তু ২৪ জুলাই সকালে পুরসভার গাড়ি বর্জ্য ঢালতে গেলে বাধা দেন স্থানীয় মহিলারা। প্রায় কুড়িটি গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। পুরসভার আধিকারিকদের মধ্যস্থতায় সে দিন শেষ পর্যন্ত বর্জ্য ঢালতে দেওয়া হয়। কিন্তু পর দিন থেকে আর বর্জ্য ফেলার জায়গা জোটাতে পারেনি পুরসভা। ফলে, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্সের শহরের ইতিউতি জমছে জঞ্জালের স্তূপ। বেনাচিতি হোক বা সিটি সেন্টার অথবা বিধাননগর। ছবিটা সব জায়গায় এক। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দুগর্ন্ধে নাকে রুমাল চাপা দেওয়ার ছবি এখন শহরের সর্বত্র। বাড়ি-বাড়ি জঞ্জাল সংগ্রহ করার পরে তা শহরের যেখানেই সামান্য ফাঁকা জায়গা মিলছে, সেখানে ঢেলে দিচ্ছে পুরসভার গাড়ি। আবর্জনা খুব বেশি হলে তা ভাগ করে একাধিক জায়গায় ফেলা হচ্ছে। রাজ্যের অন্যতম বড় শহর দুর্গাপুরের প্রধান মাথাব্যথা এখন বর্জ্য ফেলার জন্য স্থায়ী জায়গার বন্দোবস্ত করা। বাসিন্দারা বলছেন, “প্রথম-প্রথম অসহ্য মনে হত। এখন দেখে-দেখে সয়ে যাচ্ছে!”
পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ কী? কোনও নির্দিষ্ট উপায় এখনও বের করে উঠতে পারেনি পুরসভা। সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ইসিএলের পরিত্যক্ত খাদান পাওয়া সম্ভব কি না সে ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে।” মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যা দিন-দিন জটিল হচ্ছে। আমরা সম্ভাব্য সব পথ খোলা রেখে বিকল্প ব্যবস্থার খোঁজ করছি। আশা করি শীঘ্র সমস্যার সমাধান হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy