কুলটির নবিনগরে এখানেই রাস্তা তৈরি করার কথা ছিল। নিজস্ব চিত্র।
তৈরিই হয়নি রাস্তা। অথচ সেই রাস্তার নির্মাণ বাবদ ঠিকাদারকে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার বিল পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুলটিতে। এই বেনিয়মের অভিযোগে নাম জড়িয়েছে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ) এবং কুলটি পুর কর্তৃপক্ষের। কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে বেনিয়ম বলতে রাজি হননি। তবে ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছেন এডিডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সুনীল গুপ্ত।
রাস্তা না গড়েও টাকা পেয়ে যাওয়ার এই অভিযোগটি উঠেছে কুলটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ওয়ার্ডের নবিনগরে একটি সিমেন্টের ঢালাই রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সংস্থার তরফে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি একটি দরপত্র ডাকা হয়। রাস্তা নির্মাণের খরচ ধরা হয় প্রায় ২৪ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। আগ্রহী ঠিকাদারেরা দরপত্র জমা দেন। কুলটির এক ঠিকাদার প্রস্তাবিত দরের চেয়ে তিন হাজার টাকা কম দর দিয়ে কাজটি করার বরাত পান। তাঁকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এডিডিএ কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে কাজটি তিন মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু অভিযোগ, ওই ঠিকাদার সেই কাজ না করেই বিল তুলে নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, কুলটি পুরসভার সদ্য প্রাক্তন উপপ্রধান বাচ্চু রায় এই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি নিজে ১৭ এপ্রিল কুলটি পুরসভার প্যাডে সই করা চিঠিতে এডিডিএ-র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে জানিয়েছেন, নবিনগরের ওই কাজটি ঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি এই কাজের ব্যাপারে সন্তুষ্ট।
কাজ না হওয়া সত্ত্বেও বরাদ্দ টাকা ঠিকাদার পেয়ে গিয়েছেন, এ কথা জেনে ওই এলাকার বাসিন্দারা বেশ ক্ষুব্ধ। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা তৈরির জন্য মাটি কাটা হয়েছিল। কিছু অংশে ইট বিছানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাস্তা তৈরি হয়নি। ফলে, বাসিন্দাদের যাতায়াতে দুর্ভোগ কমেনি। এই বর্ষায় জল-কাদায় মাখামাখি হয়ে রয়েছে গোটা রাস্তা। তা এড়িয়ে চলতে বাসিন্দারা ঘুরপথে যাওয়া-আসা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইকবাল বলেন, “ঈদের উত্সবে আমাদের এই নোংরা রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হল।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা শিবা রায়ের বক্তব্য, “রাস্তা না বানিয়ে ঠিকাদার কী ভাবে বিল পেল? কী ভাবেই বা উপপ্রধান লিখে দিলেন বুঝলাম না!”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে উপপ্রধান বাচ্চু রায়ের দাবি, “দরপত্র ও কাজের নির্দেশনামায় রাস্তার নাম ভুল ছাপা হয়েছে। আসলে, পার্শবর্তী একটি রাস্তা তৈরির জন্য এই দরপত্র ডাকা হয়েছিল। সেই রাস্তা তৈরিও হয়ে গিয়েছে।” বাচ্চুবাবুর আরও দাবি, তিনি কোনও অন্যায় করেননি। তবে নবিনগরের রাস্তাটিও তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এডিডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সুনীল গুপ্ত অবশ্য বলেন, “এটাকে জালিয়াতি বলা যায় না। কারণ, নবিনগরের রাস্তাটি হয়নি ঠিকই। তবে পাশের একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তার পরেই ঠিকাদার বিল পেয়েছেন। তবে নবিনগরের তুলনায় এই রাস্তাটি ৫০০ ফুট কম তৈরি হয়েছে। আমি দেখছি।” কিন্তু, পাশের কোন রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে, সে প্রশ্নে নির্দিষ্ট কিছু জানাতে পারেননি সুনীলবাবু।
দরপত্রে একটি জায়গায় কাজ করার কথা বলা আছে, পরিবর্তে অন্য এক জায়গায় কাজ করা হয়েছে। এটা কী নিয়মবিরুদ্ধ নয়? এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাস্তুকারই ঠিকাদারের বিলে কী করে স্বাক্ষর করলেন? সুনীলবাবু বলেন, “আমি এই ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছি। কয়েক দিন সময় লাগবে পুরো বিষয়টি বুঝে উঠতে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy