চলছে বাওকুল চাষ। পূর্বস্থলীতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
লাভের আশায় ধান, পাটের গতানুগতিক চাষ ছেড়ে বিকল্প চাষে ঝুঁকছেন বহু চাষি। কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের দাবি, বিকল্প চাষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষিরা ঝুঁকছেন আখ আর বাওকুল চাষে।
মহকুমার অনেক চাষিদেরই দাবি, ধান, পাট, আলুর মতো চাষে জমি তৈরি, কীটনাশক, খেতমজুর-সহ নানা প্রয়োজনীয় খরচ প্রায় লাফ দিয়ে বাড়ছে। অথচ লাভ সেভাবে বাড়ছে না। এমনকী কোনও কোনও বছর তো লোকসানও হয়। এই অনিশ্চয়তা কাটাতেই বছর চারেক আগে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের চাষিরা নিজেদের জমিতে বাওকুলের চাষ শুরু করেন। বাজার ভাল থাকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ওই কুল চাষ। বর্তমানে বগপুর, দোগাছিয়া, শ্রীরামপুর, মোয়াইল, পূর্বস্থলী, কালেখাঁতলা-সহ নানা জায়গায় প্রায় দেড়শো বিঘে জমিতে ওই চাষ হয়। চাষিরা জানান, ৭৫ থেকে ১০০ গ্রাম ওজন হয় একএকটা কুলের। মিষ্টি, শাঁসযুক্ত এই ফলের চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন পুজোতেও।
বাওকুল মূলত থাইল্যান্ডের, তবে বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ইউনির্ভাসিটি ওই কুলের প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন নাসার্রিতেও ওই কুলের চারা মেলে। সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ নাগাদ চারা বসানো হয়। শীত পড়তেই ফলন শুরু হয়। সাধারণত একটা গাছে চার থেকে পাঁচ বছর ফল হয়। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বাওকুল চাষি সফিকুল মোল্লা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে গাছের ক্ষতি না হলে বিঘা প্রতি দশ হাজার টাকারও বেশি লাভ হয়। আর জোগানের থেকে চাহিদা বেশি থাকায় বাজার নিয়েও ভাবতে হয় না। মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিকাশি ব্যবস্থা ভাল এমন উঁচু জমিতে ওই চাষ ভাল হয়। প্রথম দু’বারের তুলনায় পরের তিন বছর ফলন কিছুটা কমে।
বাওকুলের পাশাপাশি পূর্বস্থলীর দুটি ব্লকে আখের চাষও বেড়েছে বেশ খানিকটা। এমনকী পাশের দুই জেলা নদিয়া, মুর্শিদাবাদের অনেকেও গতানুগতিক চাষ ছেড়ে সারা বছরই আখ চাষ করছেন। চাষিদের সুবিধায় পূর্বস্থলী ১ ব্লকে গোয়ালপাড়া এলাকায় আখ বাজারও তৈরি হয়েছে। বাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় সামসারা ও দেশি, এই দু’ধরণের আখই মূলত চাষ হয়। হলুদ রঙের সামসারা আখে খরচ কিছুটা বেশি হলেও লাভও হয় বেশি। দেশি আখের দাম যেখানে শ’পিছু ৪০০-৫০০ টাকা। সেখানে সামসারার দাম ১০০০-১২০০ টাকা। ধাত্রীগ্রাম, গুপ্তিপাড়া, কালনা, সাতগাছিয়া, জামালপুর, জাহান্নগর, সমুদ্রগড়, বাঘনাপাড়া-সহ নানা এলাকায় ওই চাষ হয়। বছরভর চাহিদা থাকলেও ছট পুজো বা অন্যান্য উৎসবে চাহিদা বেড়ে যায় প্রায় তিনগুন। পাইকারি ব্যবসাদারদেরও দাবি, লাভ ভাল হওয়ায় আখের চাষ বাড়ছে। প্রশাসনের উচিত বাজরের পরিকাঠামো উন্নত করা। এ বছর জেলার সেরা চাষি হয়েছেন নাসির শেখ। পানাগড়ের মাটি উৎসবে সরকারের তরফে পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, “ঠিকঠাক আখ চাষ করলে বিঘা প্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা অবদি লাভ হয়।”
বিকল্প চাষ হিসেবে বাওকুল ও আখ চাষের ব্যপকতার কথা স্বীকার করেছে মহকুমা কৃষি দফতরও। দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “পূর্বস্থলীর দুই ব্লক ছাড়া অন্যত্রও ওই চাষ সম্ভব। বিকল্প চাষ যত বাড়বে ততই উপকার পাবেন কৃষকেরা।”
তবে চাষিদের আশঙ্কা একটাই, এখনও জোগানের তুলনায় চাহিদা কম হওয়ায় বাজারদর ভাল, কিন্তু মহকুমা জুড়ে চাষ শুরু হলে বাজার মিলবে কীভাবে? মহকুমা কৃষি দফতর অবশ্য জানিয়েছে, কালনার লিচুতলা ও পূর্বস্থলীর নিমতলা এলাকায় দুটি বড় পাইকারি বাজার তৈরি হচ্ছে। বাজার খুলে গেলে বহু চাষিই সেখান থেকে ফল বিক্রি করতে পারবেন। সহ-কৃষি আধিকারিক নিলয় করের দাবি, “এখনও পর্যন্ত বাওকুল ও আখের যা চাহিদা রয়েছে সেই তুলনায় বাজারও রয়েছে। পরবর্তীতে উৎপাদন বেড়ে গেলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy