Advertisement
E-Paper

লড়াইটা এ বার ‘ডাঁটো’, ভালই জানে আসানসোল

পোড় খাওয়া গাল সাপুড়ে বাঁশির মতো ফুলে উঠছে। ট্রাম্পেট। মেহবুবা ব্যান্ডের ইমতিয়াজ ঈষৎ টোল খাওয়া রং-হারানো বাদ্যযন্ত্রটা মুখ থেকে নামিয়ে একটা বিড়ি ধরান। —ক্যায়সা লাগা সাব, ‘বড়ি দূর সে আয়ি হ্যায় পেয়্যার কা তোফা লায়ি হ্যায়’...! আখির ক্যান্ডিডেট তো বাহার কে-ই হ্যায় না? বিকেলে কুনুস্তোরিয়া কোলিয়ারিতে ‘দোলা দিদি’র পদযাত্রা। বায়নাটা একটু ‘লেট’-এ মিলেছে। করতাল, ড্রাম, চড়চড়ি আর ট্রাম্পেট নিয়ে সকাল থেকে প্র্যাক্টিস চলছে।

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২৫

পোড় খাওয়া গাল সাপুড়ে বাঁশির মতো ফুলে উঠছে।

ট্রাম্পেট। মেহবুবা ব্যান্ডের ইমতিয়াজ ঈষৎ টোল খাওয়া রং-হারানো বাদ্যযন্ত্রটা মুখ থেকে নামিয়ে একটা বিড়ি ধরান।

—ক্যায়সা লাগা সাব, ‘বড়ি দূর সে আয়ি হ্যায় পেয়্যার কা তোফা লায়ি হ্যায়’...! আখির ক্যান্ডিডেট তো বাহার কে-ই হ্যায় না?

বিকেলে কুনুস্তোরিয়া কোলিয়ারিতে ‘দোলা দিদি’র পদযাত্রা। বায়নাটা একটু ‘লেট’-এ মিলেছে। করতাল, ড্রাম, চড়চড়ি আর ট্রাম্পেট নিয়ে সকাল থেকে প্র্যাক্টিস চলছে।

কিন্তু সেটা ভাল করে জমল কই! মহড়া ছাপিয়ে একটা উল্লাস হুড়মুড়িয়ে এসে আছড়ে পড়ে রেল-পাড়ের মাঠে— ‘মুছে যাবে জোড়া ফুল, আসানসোলে পদ্মফুল’।

ছুটন্ত একটা মোটরবাইক মেহবুবা ব্যান্ডের লজঝড়ে শরীরগুলোর সামনে এসে দাঁড়ায়। কালো গেঞ্জি, চামড়া-আঁটা জিনস্। পিচিক করে পানের পিক ফেলে পদ্ম-সমর্থক।

—“আরে রুখ যা ইয়ার, হমারা বাবুলদা’কা আর্শীর্বাদ লে, তেরা ট্রাম্পেট মে সুর লাগ যায়ে গা...!”

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন ইমতিয়াজ। সাত গাড়ির কনভয় নিয়ে আসানসোলের অলিগলিতে মিশে যান ‘বাবুলদা’।

—লড়াইটা ইবার ডাঁটো (হাড্ডাহাড্ডি) হবেক, সিওর। হাটন রোডের মোড়ে বাজার ফেরত সরকারি কর্মীর স্বগতোক্তিতে ঘোর নিশ্চয়তা।

হাত কয়েক দূরে গম রঙের কার্গো আর সাদা কুঁচকে যাওয়া শার্ট। লম্বালম্বি কাটা কচি শশায় কামড় বসিয়ে মুম্বই থেকে ভায়া সুকিয়া স্ট্রিট বাবুল তাঁর পিক-আপ ভ্যানের ছায়ায় দাঁড়িয়ে।

--হ্যাঁ ভাই, লড়াই ‘ডাঁটো’ হবে। পাক্কা। আসানসোল আমাকে সেই সুরই শোনাচ্ছে। প্রচারে বেরোলে শহরটা ভেঙে পড়ছে। বিরোধীরা ভয় পাবে না! সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে পাড়ায় পাড়ায় অপপ্রচার শুরু করেছে।...হ্যাঁ ভাই, নেক্সট্ ডেস্টিনেশন, এ বার যেন কোথায়?

বাইশ কিলোমিটার দূরে কেন্দা পার্টি অফিসে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে দোলা সেন তাঁর ‘ডেস্টিনেশন’ অবশ্য ঠিক করে ফেলেছেন, দিল্লি।

রানিগঞ্জের আকাশে গলগল করে ঊনচল্লিশ ডিগ্রির পারদ গলছে। সাদা কামিজ-সালোয়ারে আর কতটুকুই বা ঠেকানো যায়? কপালে বিনবিনে ঘাম, ঘন ঘন মিনারেল জলের বোতল উপুড় হচ্ছে গলায়।

—দলীয় কোন্দল-টোন্দল জানি না। এখানে এসে থেকে দেখছি দলের নিচুতলার কর্মীরা জান-প্রাণ দিয়ে আমার সঙ্গে আছেন। বারাবনি থেকে কুলটি, একটুও ক্লান্তি নেই। চলুন না আমার সঙ্গে, দেখবেন ওঁদের উৎসাহ!

কিন্তু বহিরাগত বলে...?

—মুম্বই না কলকাতা, কোনটা বেশি দূর, মেপে দেখেছেন? ‘কহোনা পেয়ার হ্যায়’ বললেই কি মানুষের ভালবাসা পাওয়া যায়, রাজনীতির সুরে কথা বলতে হয় ভাই।

হুড খোলা জিপ নিউ-কেন্দা কোলিয়ারির দিকে বাঁক নেয়।

—এখন পাণ্ডবেশ্বর যাব, দিল্লিও না যাওয়ার তো কারণ দেখছি না!

দোলা ‘কনফিডেন্ট’, হাসছেন।

স্কুল ফেরত জনা কয়েক নিতান্তই বালক জিপের পাশে ছুটতে থাকে।

—দি-দি, দি-দি...ইটা কোন দিদি রে মোমোতা না-কি!

—না রে সিটা তো আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বটে!

দোলার কানে এ সব ছেঁড়া ছেঁড়া বাক্যালাপ অবশ্য পৌঁছয় না। রোড শো-এর মাথার ট্রাম্পেট-এ সুর বাঁধার চেষ্টা করছেন ইমতিয়াজ— ‘ঘর আজা পরদেশি তেরা দেশ বুলায়ে রে...।’

আপকার গার্ডেনে অনুগামী ঠাসা চেম্বারে বসে এ সব শুনে মুচকি হাসছেন, মলয় ঘটক। হাসির আড়ালে দোলার ‘দিল্লি বহুদূর’ নয় তো?

—কেন ভাই, আমি তো ক্যান্ডিডেটের পাশেই আছি। শুনুন, আমি চাইলে দোলা দিল্লি যাবেন এবং আমি চাইছি, দোলা-সেন-দিল্লি-যান।

হেসে বলছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী।

আপকার গার্ডেন থেকে ঝাড়া পঁচিশ কিলোমিটার দূরে, রানিগঞ্জের কয়লা-শ্রমিক ভবনে কিন্তু হাসি-টাসি নেই। সবাই সিরিয়াস। বাড়ির শ্রী মুছে গিয়েছে। চুনকাম নেই। বোগেনভেলিয়া শুকিয়ে গিয়েছে। তবে তাঁর ঘরে মস্ত টেবিলের ও পারে এখনও চোয়াল-শক্ত লেনিন আর সদাগম্ভীর জ্যোতিবাবু। পাঞ্জাবির হাতাটা গুটিয়ে নেন বংশগোপাল চৌধুরী।

—শুনুন, ‘কহোনা পেয়ার হ্যায়’ মুম্বইয়ের সুর। কোলিয়ারির সুরটা কিন্তু অন্য খাতে বাঁধা। আর, প্রচারে নেমেই অনেকে ভাবছেন দিল্লি যাওয়ার স্যুটকেসটা গুছিয়ে নিলেই হয়!

‘নমো’ হাওয়া তো আছে?

—ধুস, বসন্তে অমন হাওয়া দেয়। আসানসোলে কিন্তু এর পরেই জাঁকিয়ে গরম পড়বে, সে বাতাস সইবে তো!

কিন্তু সাতটা বিধানসভাতেই তো দেদার ঘাসফুল?

—ফুটতে দিন না। ঘাসফুল তো পার্থেনিয়ামের মতো, কোলিয়ারির মানুষ এড়িয়ে চলতে শিখে গিয়েছেন।

ঝিমিয়ে থাকা বাড়িটায় ফাঁকা ফাঁকা ঘর, নিভু নিভু আলো, রাজ্যপাটহীন জমিদারবাড়ির মতো।

—আমি অন্তত বহিরাগত রাজা নই, খাস কোলিয়ারির ছিলা বটে!

ট্রেড-মার্ক, কালো চায়ের ভাঁড়টা এগিয়ে দিয়ে প্রথম বার ঠোঁটে একটা হাসি ঝুলিয়ে দিচ্ছেন তিনি। চা শেষ। অ্যাম্বাসাডরের পিছনের সিট থেকে হাত নাড়লেন বিদায়ী সাংসদ।

rahul roy dola sen babul supriyo imtiyaz
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy