Advertisement
E-Paper

শান্তিতেই ভোট, দাবি রিগিংয়ে অভিযুক্ত দোলার

সকাল সকাল বুথে গিয়ে রিগিং শুরু করানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের বিরুদ্ধে। সিপিএমের অভিযোগ, এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ জামুড়িয়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রাম কমিউনিটি সেন্টারে যান দোলা। সেখানে ছিল ৭৮, ৭৯ ও ৮০ নম্বর বুথ। সিপিএমের অভিযোগ, বুথ চত্বরে পৌঁছেই দোলা সিপিএমের বিরুদ্ধে অবাধ ভোটে বাধার অভিযোগ তুলে চেঁচামেচি শুরু করেন।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০১:২৪
জামুড়িয়ার সত্তর গ্রামে গোলমালের পরে।ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

জামুড়িয়ার সত্তর গ্রামে গোলমালের পরে।ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

সকাল সকাল বুথে গিয়ে রিগিং শুরু করানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের বিরুদ্ধে। সিপিএমের অভিযোগ, এমন ঘটনা নজিরবিহীন।

এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ জামুড়িয়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রাম কমিউনিটি সেন্টারে যান দোলা। সেখানে ছিল ৭৮, ৭৯ ও ৮০ নম্বর বুথ। সিপিএমের অভিযোগ, বুথ চত্বরে পৌঁছেই দোলা সিপিএমের বিরুদ্ধে অবাধ ভোটে বাধার অভিযোগ তুলে চেঁচামেচি শুরু করেন। তা শুনে কিছু তৃণমূল কর্মী জড়ো হয়। তারা বুথের লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের বলতে থাকে, হয় তাদের সামনে ইভিএমের বোতাম টিপতে হবে, না হলে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। অভিযোগ, এর পরেই দোলা ৭৮ নম্বর বুথে ঢুকে পড়েন। পিছনে পিছনে তৃণমূলের কয়েক জন ঢুকে একের পর এক ভোট দিতে থাকে। দোলা অবশ্য অল্পক্ষণের মধ্যে বুথ ছাড়েন।

ওই বুথের সিপিএমের এজেন্ট সোমনাথ কবি, সুমিত কবি ও মানিক মণ্ডলদের অভিযোগ, “এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে আমরা বুথ ছেড়ে বেরিয়ে যাই। বসে থাকলে চোখের সামনে রিগিং দেখতে হত। প্রতিবাদ করলে মারধর করত। তাই বেরিয়ে গিয়ে বিডিও-র কাছে গোটা ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ করেছি।” ৭৮ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার অজিতনারায়ণ সিংহ অবশ্য বলেন, “বুথের ভিতরে কোনও গণ্ডগোল হয়নি।” বিডিও বুদ্ধদেব পান জানান, সিপিএমের অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ওই বুথে সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

দোলা সেনের অবশ্য দাবি, “আমি বুথে গিয়েছিলাম। সেখানে ঢুকতে গিয়ে দেখি, দুই ভোটারকে সিপিএমের ছেলেরা বাধা দিচ্ছে। তাঁরা যাতে ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করেছি। কোনও রিগিং হয়নি। আমি কোনও গোলমালও পাকাইনি। সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে।”

এ দিন সকালেই জামুড়িয়ার বেলবাঁধ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩৫ নম্বর বুথে সিপিএমের এজেন্ট অঙ্গদ বাউরিকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। ঘণ্টা দেড়েক পরেই অবশ্য অঙ্গদবাবু ফিরে আসেন। তাঁর দাবি, ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বুথ জ্যাম করা হচ্ছে দেখে তিনি প্রতিবাদ জানালে তৃণমূলের কিছু কর্মী তাঁকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে গয়েছিল। পরে তারাই ফিরিয়ে আনে। তাঁর অভিযোগ, “আমি এখন বসে বসে রিগিং দেখছি।” ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার সুজিত সর্বাধিকারী অবশ্য বলেন, “অঙ্গদবাবু ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বলেন, তিনি বুথ জ্যামের একটি রিপোর্ট লিখেছেন। তাতে সই করে দিতে হবে। তা সম্ভব নয় জানালে তিনি নিজেই বুথ ছেড়ে চলে যান। পরে আবার নিজেই ফিরে আসেন।”

এ দিন সকালেই শ্রীপুর রানা হাইস্কুলের বুথের বাইরে তিনটি বোমা ফাটানো ও তিন রাউন্ড গুলি চলেছে বলে অভিযোগ তোলেন ভোটারেরা। তৃণমূলের অভিযোগ, এ সব সিপিএমের কাজ। সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের পাল্টা দাবি, “ওখানে আমরা এজেন্ট বসাতেই পারিনি। বোমা-গুলি চালানোর ক্ষমতা আমরা পাব কোথা থেকে?”

জামুড়িয়ার শ্যামলা পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল সিপিএম। এখানে গত দু’বছরে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হয়নি বলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। জামুড়িয়ার পুরনো জামশোলেও রয়েছে অতি স্পর্শকাতর বুথ। সিপিএমের এজেন্ট বিপদ মণ্ডলকে ভোট শুরুর ঘণ্টা দুয়েক পরেই বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট স্বপন মণ্ডলের যদিও দাবি, কোনও গোলমাল হয়নি।

জামুড়িয়ার পনিহাটি ওয়ার্কশপে বিকেলে ভোট দিতে যাওয়ার পথে অভীক কবি নামে এক ভোটারকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁকে প্রথমে আকলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরে আসানসোল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি জানান, ভয়ে তাঁর বাড়ির কেউ আর ভোট দিতে যাননি। এ দিন দুপুরে জামুড়িয়ার সত্তর গ্রামে ১৭ নম্বর বুথে অজয় মণ্ডল ও নীলকণ্ঠ পাল নামে দুই তৃণমূলের রিলিভার এজেন্ট বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ গেলে ঢিল ও তির ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। তবে তাতে কেউ আহত হয়নি। এই ঘটনায় পাঁচ জনকে ধরেছে পুলিশ। ভোট মিটতেই সেখানে সিপিএমের এজেন্ট শ্যামাপদ বাউরি, বিজেপি-র এজেন্ট দয়াময় নন্দীর বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

ভোট বাক্য। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

জামুড়িয়ার কুনস্তরিয়ায় ভোট শুরুর কিছু ক্ষণ পরেই বিজেপি-র এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। রানিগঞ্জে রামকুমার খেতান হাইস্কুলে ৬৪ নম্বর বুথে সিপিএমের এজেন্টকে মারধর, অমৃতনগরে বিজেপি-র এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ রানিগঞ্জের কুমোরবাজারে যমুনাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের বুথের সামনে আটটি মোটরবাইকে চড়ে এক দল তৃণমূল সমর্থক এসে দাঁড়ান। তাঁরা বুথ দখল করতে এসেছেন, এই অভিযোগ ঘিরে বচসা বাধে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে। সাত জন পালালেও এক জনকে ধরে ফেলে বিজেপি-র লোকজন। পুলিশ এসে ওই মোটরবাইক আরোহীকে ছাড়িয়ে নিলে পুলিশের উপরে ঢিল-পাটকেল ছোড়া হয়। পুলিশ পাল্টা লাঠি চালালে দুই মহিলা পড়ে যান বলে বিজেপি-র দাবি। পুলিশ অবশ্য লাঠি চালানোর কথা মানেনি।

লোকসভা কেন্দ্রের নানা এলাকায় সন্ত্রাস ও রিগিং হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরীর। তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন অবশ্য এ দিন বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন।”

nikotpal chowdhury jamuria rigging dola sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy