Advertisement
E-Paper

সেতুর নতুন নামকরণে নষ্ট ইতিহাস, দাবি গবেষকদের

১৯২ বছরের পুরনো এক সেতুর নতুন নামকরণ নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে বর্ধমান শহরে। আলমগঞ্জ ও বোরহাটের মাঝের প্রাচীন সেতুটি আগে লোকমুখে আলমগঞ্জ বা রাধাগঞ্জ সেতু নামে পরিচিত ছিল। সম্প্রতি বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ (বিডিএ) ওই সেতুটির সংস্কার করে। তার পর সেতুটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘চৈতন্য সেতু’। এই নামকরণ নিয়েই আপত্তি তুলছেন বর্ধমানের ইতিহাস গবেষকদের একাংশ।

রানা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৮
এই ফলক ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

এই ফলক ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

১৯২ বছরের পুরনো এক সেতুর নতুন নামকরণ নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে বর্ধমান শহরে।

আলমগঞ্জ ও বোরহাটের মাঝের প্রাচীন সেতুটি আগে লোকমুখে আলমগঞ্জ বা রাধাগঞ্জ সেতু নামে পরিচিত ছিল। সম্প্রতি বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ (বিডিএ) ওই সেতুটির সংস্কার করে। তার পর সেতুটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘চৈতন্য সেতু’। এই নামকরণ নিয়েই আপত্তি তুলছেন বর্ধমানের ইতিহাস গবেষকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, চৈতন্যদেব কোনও দিন বর্ধমানে এসেছিলেন বলে ইতিহাসগ্রাহ্য প্রমাণ নেই। তাই ওই সেতুর লোকমুখে প্রচলিত পুরনো নামই বহাল রাখা উচিত। এই বিষয়ে নীরোদবরণ সরকার, গিরিধারী সরকার ও সঞ্জীব চক্রবর্তী নামের তিনজন ইতিহাস গবেষক চিঠি পাঠিয়েছেন বিডিএ-র কাছে। যদিও বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের কর্তাদের পাল্টা যুক্তি, চৈতন্যদেবের সময় থেকেই বাংলার নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল। তাই তাঁর নাম ব্যবহার করে ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো হয়নি।

সেতুর নতুন নামকরণ নিয়ে যাঁরা আপত্তি তুলছেন তাঁদের দাবি, বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদ বাহাদুর ওই সেতুটি তৈরি করেছিলেন। সেই সময় থেকেই লোকমুখে সেতুটির নাম হয়ে যায় রাধাগঞ্জ সেতু। কেউ কেউ আবার এই সেতুর নাম দিয়েছিলেন আলমগঞ্জ সেতু। প্রমাণ দিতে গিয়ে তাঁরা বর্ধমানের ইতিহাস নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইয়ের কথা বলেছেন। যেমন, বর্ধমানের প্রয়াত ইতিহাস গবেষক আবদুল গনি খানের লেখা ‘বর্ধমানরাজ’ বইতে বলা হয়েছে, “বাঁকা নদীর দক্ষিণ দিকে সাধারণের যাতায়াত হেতু মহারাজাধিরাজ তেজচাঁদ বাহাদুর একটি সুউচ্চ পাকা পুল তৈরি করান।” এই বইয়ের তথ্য অনুযায়ী সেতুটি স্থাপিত হয়েছিল ১৮২১ সালে। নীরোদবরণ সরকার তাঁর ‘বর্ধমান রাজ ইতিবৃত্ত’ নামক বইতে দাবি করেছেন, “বর্তমান আলমগঞ্জ সেতু নামে পরিচিত সেতুটি প্রকৃতপক্ষে রাধাগঞ্জের সেতু।”

‘সংবাদপত্রের সেকালের কথা’ নামের একটি পুরনো সংবাদের সংকলনের ১৭৮ পাতায় একটি খবরে লেখা হয়েছে, “শ্রীশ্রীযুত মহারাজা তেজশচন্দ্র রায় বাহাদুর আপন বাটীর পশ্চিমে নতুন এক গঞ্জ করিয়াছেন...। ঐ গঞ্জের নাম রাধাগঞ্জ। ঐ গঞ্জের দক্ষিণে বঙ্কেশ্বরী নামে নদী আছে। সেই নদী পার হইবার কারণ পাকা এক পুল প্রস্তুত করাইতেছেন।” ১৮১৯ সালের ১৭ জুলাই এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল।

ইতিহাস গবেষক গিরিধারী সরকার ও সঞ্জীব চক্রবর্তী জানান, ওই সেতুতে আগে একটি ফলক ছিল। সেখানে লেখা ছিল যে, এলাকাবাসীর যাতাযাতের সুবিধার জন্য রাজা তেজচাঁদ বাহাদুর এই সেতুটি নির্মাণ করেন। তবে সেই ফলকে সেতুর কোনও নিদিষ্ট নাম ছিল না। তাঁদের অভিযোগ, নতুন সংস্কারের পরে সেতুর পুরনো ফলকের বেশির ভাগই নতুন তৈরি সিমেন্টের ফুটপাথে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে রাজা তেজচাঁদ বাহাদুরের নাম লেখা পুরনো ফলকটিকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে রাখার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

যদিও সেতুর পুরনো ফলকটিকে ঢেকে ফেলবার অভিযোগ অস্বীকার করে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “এই অভিযোগের ভিত্তি নেই। চৈতন্যদেবের জীবনীকারেরা বর্ধমানের মানুষ। আমরা সেতুর পুরনো ইটগুলিকে সংরক্ষণ করে সংস্কার করেছি।”

chaitanya setu rana sengupta alamgunge to borehat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy