Advertisement
E-Paper

হাম মালাই খাকে ভাগনেকা বান্দা নেহি হুঁ

আরে পাগলা, চলো মালাই মারকে! জি দাদা জরুর, লেকিন ইয়ে মেরি তরফ সে...ধাদকা ব্রিজের পাশে খোলা ড্রেন। সরু রাস্তায় ভ্যানরিকশার দাপট। গাড়িটা তার মধ্যেই রাস্তার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল। কত দিন দুধের সর খাইনি, জানো! ছোটবেলায় মা দিত। একটু চিনি দিয়ে...ছোট্ট গেলাস। পুরু সর উজিয়ে উঁকি দিচ্ছে মহার্ঘ দু’চামচ চিনি। তিন পুরুষের কালো ময়লা জমা বেঞ্চির চারপাশে ভিড়টা দানা বাঁধতে থাকে। কুণ্ঠা নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে দেহাতি হাতগুলো।

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০২:৪৫
বৈদ্যনাথপুরে বিক্ষোভের মুখে বাবুল। আঙুল উঁচিয়ে কথা বলছেন তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জীবন ধীবর।  ছবি: শৈলেন সরকার।

বৈদ্যনাথপুরে বিক্ষোভের মুখে বাবুল। আঙুল উঁচিয়ে কথা বলছেন তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জীবন ধীবর। ছবি: শৈলেন সরকার।

আরে পাগলা, চলো মালাই মারকে!

জি দাদা জরুর, লেকিন ইয়ে মেরি তরফ সে...

ধাদকা ব্রিজের পাশে খোলা ড্রেন। সরু রাস্তায় ভ্যানরিকশার দাপট। গাড়িটা তার মধ্যেই রাস্তার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল।

কত দিন দুধের সর খাইনি, জানো! ছোটবেলায় মা দিত। একটু চিনি দিয়ে...

ছোট্ট গেলাস। পুরু সর উজিয়ে উঁকি দিচ্ছে মহার্ঘ দু’চামচ চিনি।

তিন পুরুষের কালো ময়লা জমা বেঞ্চির চারপাশে ভিড়টা দানা বাঁধতে থাকে। কুণ্ঠা নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে দেহাতি হাতগুলো।

দাদা এক বার হাত তো মিলা লিজিয়ে...

হাল্কা গোফে সাদা মালাইয়ের ছোঁয়া নিয়ে চওড়া হাসি। হাত বাড়িয়ে দিয়ে দাদা বলছেন, আরে জনাব, হাম মালাই খাকে ভাগনেকা বান্দা নেহি হু।ঁ রাজনীতিটা যখন করতে এসেছি সব ছেড়ে, তখন একশো ভাগ দেব।

উত্তরপাড়া রেলপাড় ভায়া মুম্বই সুপ্রিয় বড়াল ‘ভাগনেওয়ালা’ না হলেও আসানসোল কেন্দ্রের এ-মুড়ো ও-মুড়ো কার্যত ‘ভেগেই’ বেড়ালেন তিনি।

সকাল সওয়া ৭টায় আসানসোলের মহীশিলা কলোনির তিনতলার ফ্ল্যাটে জুতোর ফিতে বাঁধার সময় মা দু’খানা টোস্ট এগিয়ে দিয়েছিলেন --আর একটা টোস্ট নে বাবা!

না মা, প্লিজ জোর কোরো না।

ফ্ল্যাট থেকে সোজা মহিশীলা স্কুল। কালো চাপা জিনস, সাদা হাফহাতা শর্ট শার্ট। বুক জুড়ে ছাই রঙের বাইকচালক। স্কুলে ঢুকতেই মুখে আঁচল চাপা দিয়ে আহ্লাদে ফেটে পড়লেন মধ্য বিশের তরুণী ‘ওম্মা! বাবুলদা কী লাগছো!’ নিমেষে ছিনে জোঁকের মতো ভিড়।

ও দিকে, ভোটের লাইন ক্রমে বাড়ছে। টিভিওয়ালারাও হাজির। বাইট দেওয়া চলছে। গানের দু’এক কলিও। বিরোধীরা প্রথমে ভুরু কোঁচকালেন। খানিক বাদেই চাপা অসন্তোষটা রে-রে করে তেড়ে এল। অভিযোগ, ভোটারদের প্রভাবিত করা। বাবুল বললেন, “আমি তো এখানে দাঁড়িয়ে নেই। আমাকে আটকে রেখেছে মিডিয়া আর সইশিকারিরা।” ধোপে টিকল না। তৃণমূলের এজেন্ট ও সমর্থকদের চাপে স্কুলচত্বর থেকে পুলিশ তাঁকে এক রকম বেরই করে দিল। মুচকি হেসে জনতাকে বাবুল বললেন ‘দেখলেন তো?’

প্রথম এফআইআরটা এখানেই খেলেন বাবুল।

এর পর সাদা জাইলো। দরজা বন্ধ করার আগে একটা হাঁক নির্মলদা (বিজেপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার) উঠেছো তো?

জাইলো ছুটল এডিএম বাংলোর দিকে। সেখানে হাজির জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। খানিক কথাবার্তার পরে জাইলোর সঙ্গে জুড়ে গেল লরঝরে একটা সুমো। তাতে তিন জন রাইফেলধারী পুলিশ, এক জন ভিডিওগ্রাফার, এক জন অবজার্ভার। এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ছুটতে-ছুটতে গাড়ি থামল সাতগ্রামের বাঁকে।

দেখেছো কেমন কোকিল ডাকছে! চল্লিশ দিন ধরে টানা ঘুরছি। বুঝতেই পারলাম না, বসন্তটা কখন চলে গেল... আসানসোলের মানুষকে কিন্তু ভালবেসে ফেললাম, জানো! কাল রাত ৩টের সময়ে দাঁতের ক্যাপ খুলে গিয়েছিল। এক ডাক্তারবাবুকে ফোন করলাম। অত রাতে ফোন ধরে তাঁর বিস্ময়, ‘আপনি সত্যিই বাবুল সুপ্রিয় বলছেন!’ রাতেই তাঁর বাড়ি গেলাম। অনবদ্য মানুষ। যত্ন করে ক্যাপটা লাগিয়ে দিলেন।

সাতগ্রাম হয়ে ততক্ষণে গাড়ি চাকদোলায়। দু’কলি হয়েন যাক আব্দার ভোটারদের।

হবেক, হবেক। আমি আছি, গান তো গাইবই।

আশ্বাসটুকু বুথে রেখে গাড়ি চলল নিউ কেন্দা। বিশ বছর আগে যে কোলিয়ারির তিন নম্বর পিটে আগুন লেগে সাড়ে তিন ঘণ্টায় মারা গিয়েছিলেন ৫৫ জন শ্রমিক। ছোট্ট একটা ‘মুখড়া’ গাওয়ার আবদার করে বসলেন খোদ তৃণমূল এজেন্ট। সযত্নে তা এড়িয়ে বাবুল হাসছেন, “বিরোধী বলে কি আমার গান শুনবে না? তবে এখন নয়, পরে হবে।”

পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহির বুথে অভ্যর্থনাটা হল একটু অন্য রকমের। তৃণমূলের ওই শক্ত ঘাঁটিতে বেলা পৌনে ১টার মধ্যে ভোট পড়ে গিয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ।

এত তাড়াতাড়ি এত ভোট পড়ল? নিরঞ্জন বাদ্যকার নামে এক তৃণমূল নেতা ইশারায় ভোটারদের জানিয়ে দিলেন, চুপ! একটিও কথা নয়। মুচকি হেসে বাবুল ফের বললেন, ‘দেখলেন তো?’

মোবাইলে নিরঞ্জনের একটা ছবি তুলে ফের সামনের সিটে। তস্য সরু জলকাদা মাখা রাস্তা ধরে খানিক এগোতেই বৈদ্যনাথপুর প্রাথমিক স্কুল। মাথা নিচু করে লোহার গেট পেরিয়ে ঢুকতেই শোনা গেল, সেখানেও ভোট পড়ে গিয়েছে অধিকাংশই।

ভক্তের ভিড় আর শ্রোতাদের আবদার জোড় হাতে ফিরিয়ে বাইরে বেরোতেই মুখে গামছা জড়িয়ে তেড়ে এলেন জনা পাঁচেক তৃণমূল সমর্থক। পঞ্চায়েত সদস্য জীবন ধীবর হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে সাদা তোয়ালেতে কালো সানগ্লাস মুছে এক জন নাড়া লাগালেন, ‘বাবুল সুপ্রিয় দূর হটো! মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ!’

বাবুল দূর হটলেন।

ঘড়িতে প্রায় ৩টে। অন্ডাল মোড়ে গাড়ি থামল। সকালের সরচিনি কখন হজম হয়ে গিয়েছে। ভাত জোটেনি। প্লাস্টিকের ভাঁড়ে দই আর শালপাতায় বোঁদে। লাঞ্চ শেষ। কিন্তু ও কি? গাড়ি থেমে গেল কেন?

দাঁতটা আবার ঝামেলা করছে গো... অন্ডাল স্টেশন রোডে খুঁজতে খুঁজতে ফ্যান্সি মার্কেটের দোতলায় ডেন্টাল ক্লিনিক।

বিকেল তখন সওয়া ৫টা।

ছাপ্পা-রিগিংয়ের যে কোনও চেষ্টার টুঁটি কামড়ে ধরার দিনভর লড়াইটা ততক্ষণে শেষ।

rahul roy babul supriyo asansol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy