বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একটু খানাপিনার ইচ্ছে। কিন্তু পকেটে পাঁচশো’র নোট। চলবে?
বন্দর এলাকায় কাল মার্কস সরণির এক পানশালার ম্যানেজারকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি মাথা নিচু করে একমনে নোট গুনতে ব্যস্ত। পাঁচশো-হাজারের কয়েকটা বান্ডিল সাজানো সামনের টেবিলে। মাথা নিচু করেই উত্তর দিলেন, ‘‘নোট জাল না হলে মিলবে।’’
শুধু তা-ই নয়। সঙ্গে কিছু ‘অফার’ও মজুত। বার-ম্যানেজার জানালেন, তিনশো টাকার বেশি বিল হলে পাঁচশোর খুচরো পাওয়া যাবে। বিল সাতশো ছাড়ালে হাজার টাকার খুচরো দেওয়া হবে।
বন্ধুর সঙ্গে ঢুকে পড়া গেল। শনিবার রাত আটটা। পানশালার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। ছোপ ধরা টিউবলাইটের ম্যাড়মেড়ে আলো। ততোধিক নোংরা কয়েকটা টেবিলে এঁটো গ্লাস-প্লেট পড়ে রয়েছে। আনাচে-কানাচে কয়েকটি টেবিলে কিছু খদ্দের।
প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের ঘোষণার পরে বাড়িতে যা পাঁচশো-হাজার ছিল, কুড়িয়ে-বাড়িয়ে ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়েছিলাম। তার মধ্যে ছিল ২০০৫-এর আগের পাঁচটা পাঁচশো (সিলভার স্ট্রাইপ)। ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয়, ওই নোট বদলানোর সময়সীমা গত ৩০ জুন শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ছাড়া পাল্টানো যাবে না।
পাঁচটা নোটের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কে লাইন দিতে হবে ভেবে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আর একটা উপায়, চোরা পথে ২০% বাট্টা দিয়ে ভাঙানো। বন্দর এলাকার এক ব্যবসায়ী বন্ধুকে ফোনে ধরলাম। বন্ধু বললেন, ‘‘চিন্তা নেই। উপায় আছে। চলে এসো।’’
সেই মতো শনিবার ভরসন্ধেয় বন্ধুর দোকানে হাজিরা। কী উপায়? বন্ধুর জবাব, ‘‘চলো দেখাচ্ছি। আমরা তো গত তিন দিন পাঁচশো-হাজার ভাঙিয়েই মদ খাচ্ছি।’’
তিনি-ই নিয়ে গেলেন কার্ল মার্ক্স সরণির পানশালাটিতে। ওঁর ফোন পেয়ে আরও ক’জন ব্যবসায়ী বন্ধু এসে জুটলেন। সকলে মিলে ঘণ্টা দুয়েক ধরে খানা-পিনা। মোট বিল দাঁড়াল চার হাজার চারশো। আমার পাঁচটি নোট-সহ মোট ন’টি পাঁচশোর নোট কাউন্টারে জমা দেওয়া হল। ম্যানেজার একশো টাকা ফেরত দিতে গেলে বন্ধু হেসে বললেন, ‘‘কিপ দ্য চেঞ্জ।’’
বাইরে এসে আমার খাবার খরচ বাদ দিয়ে সকলে মিলে আমাকে ফেরত দিলেন বাইশশো টাকা। একশো-পাঁচশো মিশিয়ে।
আমার জন্য রির্জাভ ব্যাঙ্কের গেরো ঘুচল। বস্তুত বন্দর তল্লাটে সব পানশালা একই নিয়মে চলছে। এক বার-মালিকের বক্তব্য: পাঁচশো-হাজার টাকা না-নিলে কারবার লাটে উঠবে। ‘‘ক’দিনের তো সমস্যা। পাঁচশোর নতুন নোট চলে এলেই সব বিলকুল ঠিক হয়ে যাবে,’’ প্রত্যয়ী মন্তব্য তাঁর। ওঁরাই জানালেন, এখন যে সব পাঁচশো-হাজার নেওয়া হচ্ছে, সব প্যান নম্বর সমেত ব্যবসার অ্যাকাউন্টে জমা করা হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরনো নোট জমা দেওয়া যাবে। তাই ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত খদ্দেররা পাঁচশো-হাজারে বিল পেমেন্ট করতে পারবেন আয়াসে।
কিন্তু ওই সিলভার স্ট্রাইপের নোট জমা করা যাবে কি না, করলেও কী ভাবে, তার কোনও উত্তর মেলেনি। তাড়াহুড়োয় বার ম্যানাজার নোটের সাল যাচাই করতে ভুলেছেন কিনা, সেটাও জানা যাচ্ছে না। আয়কর দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কোথাও যাতে বাতিল পাঁচশো-হাজারের নোটে লেনদেন না হয়, সে দিকে নজরদারি দরকার। ‘‘কিন্তু নজর এড়িয়ে ব্যবসা চললে কিছু করার নেই,’’ বলছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy