Advertisement
E-Paper

গরমে বাজার ঝিমিয়ে, ক্ষতির মুখে পানচাষিরা

দামের সঙ্গে কমছে বিক্রি। ফলে মাথায় হাত পান চাষিদের। হাওড়া জেলায় বড় পানের আড়ত রয়েছে খলিশানি কালীতলায়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বাংলাদেশেও এই এলাকা থেকে পান রফতানি করা হয়। এ বছর অত্যধিক গরমের জন্য পানের বিক্রি তেমন নেই। ওপার বাংলাতেও একই অবস্থা। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রবল আর্দ্রতা এবং‌ তাপপ্রবাহের কারণে সকাল ১০টার পরে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ তেমন বাইরে বেরোচ্ছেন না।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০২:১৬

দামের সঙ্গে কমছে বিক্রি। ফলে মাথায় হাত পান চাষিদের।

হাওড়া জেলায় বড় পানের আড়ত রয়েছে খলিশানি কালীতলায়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বাংলাদেশেও এই এলাকা থেকে পান রফতানি করা হয়। এ বছর অত্যধিক গরমের জন্য পানের বিক্রি তেমন নেই। ওপার বাংলাতেও একই অবস্থা। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রবল আর্দ্রতা এবং‌ তাপপ্রবাহের কারণে সকাল ১০টার পরে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ তেমন বাইরে বেরোচ্ছেন না। রোদ বাড়তেই পানের দোকানে খদ্দের নেই বললেই চলে। ফলে পান শিল্পে তৈরি হয়েছে সঙ্কট। পান চাষিদের আক্ষেপ, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে তাঁরা এ রকম ক্ষতির মুখে পড়েননি।

পান চাষিরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছর এই সময়ে গড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় পানের একটি গাঁট বিক্রি হয়। (এক গাঁটে দশ হাজার পান থাকে)। কিন্তু চলতি বছরে সেই দর নেমেছে গাঁট প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা। ফলে মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। লাভ দূরের কথা, চাষের খরচ তুলতেই হিমশিম অবস্থা তাঁদের। হাওড়ার খলিশানি ছাড়াও বাগনান, আমতা, শ্যামপুর, উলুবেড়িয়ায় কয়েক হাজার মানুষ পান চাষের উপর নির্ভরশীল। বাগনানের খাদিনান গ্রামের পান চাষি সীতারাম জানা বলেন, ‘‘গত বছরে এক গাঁট পান চার হাজার টাকা করে দাম পেয়েছি। কিন্তু এ বছরে এক হাজার টাকাও পাচ্ছি না। সংসার সামলে কী করে চাষের খরচ তুলব বুঝতে পারছি না!’’ চাষিরা জানান, শীতকালে সাধারণত পানের ফলন কম হয়। কিন্তু গত মরসুমে শীত বেশি দিন ছিল না। তাই ফলন বেড়ে যায়। সেই বাড়তি ফলনের জোগান এখনও আছে। এখন অতিরিক্ত গরমে নষ্ট হচ্ছে পান।

অন্যান্য ফসল চাষের তুলনায় পান চাষে অনেক বেশি যত্ন নিতে হয়। খরচও হয় বেশি। চাষিদের থেকে জানা গিয়েছে, এই চাষ হয় বরোজে। প্রথমে খড়িকাঠি এবং বাঁশ দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলতে হয়। খড়িকাঠি দিয়েই করতে হয় ছাউনি। রোদ এবং ছায়া যাতে সমান ভাবে বরোজে ঢুকতে পারে তার জন্য এই ব্যবস্থা। সম্প্রতি উদ্যানপালন দফতরের পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে কংক্রিটের পাকা পান বরোজ তৈরি হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রেও ছাউনি হয় খড়িকাঠি দিয়ে। মাটিতে পানের বীজ পোতার পরে খড়িকাঠি বেয়ে পানের গাছ উপরে ওঠে। সেই গাছ থেকেই পান পাতা বের হয়। সেগুলি তুলে গাঁট করে চাষিরা বাজারে বিক্রি করেন। ফলে পান বরোজ এবং পান চাষ দু’টোই বেশ খরচসাপেক্ষ। চাষিদের আক্ষেপ, বাজারে পানের দাম কমে যাওয়ার বরোজ পরিচর্যার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এখন ব্যবসায়ীরা বরোজ থেকে পান কিনে দোকানে পাঠানোর আগেই পচতে শুরু করছে। সেই ক্ষতিপূরণ করতে তিনি পরে যখন বরোজে আসছেন তখন দাম কম দিচ্ছেন। কোপ পড়ছে চাষির উপরে।

শুধু আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা নয়, মানুষের স্বাদ বদলও পানের বাজার পড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন পান ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, আগে দুপুরে খাওয়ার পরে পানের বিকল্প ছিল না। যে কোনও অনুষ্ঠান বাড়ির শেষ পাতে পান ছিল আবশ্যিক। কিন্তু এখন সেই জায়গা নিয়েছে হরেক স্বাদের পান মশলা। চাষিদের ক্ষোভ, পান চাষে খরচ এবং সময় বেশি লাগলেও এই চাষকে উদ্যানপালন দফতরের আওতায় রাখা হয়েছে। সঞ্জয় মণ্ডল নামে খলিসানির এক পান ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘পান চাষ কৃষি বিভাগের অর্ন্তগত হলে চাষিরা বিমা ও ব্যাঙ্ক ঋণের সুবিধা পেতেন। পণ্য রফতানিতেও সুবিধা পেতেন।’’

রাজ্য কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, পান চাষ উদ্যানপালন দফতরের আওতায় হলেও চাষিরা সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে রফতানির বিষয়টি ঠিক করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ব্যাপারে কৃষি দফতরের কিছু করার নেই।

Beetle farmers loss Uluberia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy