Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গণইস্তফা অব্যাহত, চলছে রোগী বাঁচানোর চেষ্টাও

বাঁকুড়া মেডিক্যালের ২১ জন চিকিৎসক গণইস্তফা দেন এ দিন। সেখানে বহিবির্ভাগ বন্ধ ছিল। মেদিনীপুর মেডিক্যালের পরিস্থিতিও জটিল। সেখানে এ দিন ইস্তফা দেন হাসপাতালের ২৬ জন চিকিৎসক।

চিকিৎসায় ব্যস্ত। ফাইল চিত্র।

চিকিৎসায় ব্যস্ত। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০৩:৫১
Share: Save:

জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে। অধিকাংশ জায়গায় বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় অব্যাহত রোগীদের হয়রানি। গণইস্তফা দেওয়া, চলছে তা-ও। তবে সে সবের মাঝে কোথাও কোথাও রোগীর প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া লড়াইয়ের ছাপও রাখছেন ডাক্তারেরা। রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে— বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে শনিবার আন্দোলন এবং পরিষেবা পর্ব চলেছে এ ভাবে।

বাঁকুড়া মেডিক্যালের ২১ জন চিকিৎসক গণইস্তফা দেন এ দিন। সেখানে বহিবির্ভাগ বন্ধ ছিল। মেদিনীপুর মেডিক্যালের পরিস্থিতিও জটিল। সেখানে এ দিন ইস্তফা দেন হাসপাতালের ২৬ জন চিকিৎসক। শিশু বিভাগের ১১ জন ডাক্তারের সকলেই ইস্তফা দিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তবে জরুরি বিভাগে পরিষেবা সচল ছিল, বহির্বিভাগও খোলা ছিল। কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শ’খানেকের মধ্যে ৪০ জন চিকিৎসক এ দিন পদত্যাগ করেন। তবে রাত পর্যন্ত কোনও পদাধিকারী পদত্যাগ করেননি। কোনও রকমে জরুরি বিভাগ চললেও, বাকি কোনও বিভাগে ডাক্তার ছিলেন না। বহির্বিভাগ ছিল তালাবন্ধ। রোগীরা ফিরে গিয়েছেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজেও বর্হিবিভাগ বন্ধ। সেখানে ৬১ জন চিকিৎসক ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশ করে কলেজের অধ্যক্ষ সুহৃতা পালের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

ছবিটা আলাদা নয় উত্তরবঙ্গের। মালদহ মেডিক্যালে বর্হিবিভাগ বন্ধ। আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে কলেজের অন্দরমহলেও। অভিযোগ, মেডিক্যালের ওয়ার্ডগুলিতে ঠিক মতো চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে না। সেখানে শুক্রবার ৩৬ জন চিকিৎসক গণইস্তফা দিয়েছেন বলে খবর। যদিও এ দিনও প্রত্যেকে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে রোগীদের দুর্ভোগ চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেও। অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি কমে গিয়েছে। যাঁরা ভর্তি রয়েছেন, তাঁরাও থাকতে চাইছেন না চিকিৎসা পরিষেবা যথাযথ মিলছে না অভিযোগে। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবার বর্হিবিভাগ এ দিন খোলা ছিল। তবে রোগীদের একাংশের অভিযোগ, সকাল ৯টা থেকে বর্হিবিভাগ খোলা থাকার কথা হলেও, একাধিক ইউনিটে চিকিৎসকেরা প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে আসেন। ফলে, রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ মানেননি। জলপাইগুড়ি জেলার সাত ব্লকের বিএমওএইচ ও ব্লকের চিকিৎসকরা মিলিয়ে মোট ৩০ জন এ দিন গণইস্তফা দিয়েছেন।

মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে, কালো ব্যাজ পরে ডাক্তারেরা চিকিৎসা করেছেন রায়গঞ্জ মেডিক্যাল, বর্ধমান মেডিক্যাল এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের হাসপাতালগুলিতে।

তবে প্রতিবাদের বাইরে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টার ছবিও মিলেছে। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমা এবং হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগ খুলেছে। বর্ধমান মেডিক্যালে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে সিনিয়র চিকিৎসকেরা জরুরি ভিত্তিতে ছুটি নেবেন না। এ দিন সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসকদের গাড়ি রাখার জায়গায় টেবিল-চেয়ার পেতে বহির্বিভাগের রোগী দেখা শুরু করেন হাসপাতালের সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তারেরা। যত দিন না এনআরএস-কাণ্ডের সমাধানসূত্র মিলবে, তত দিন তাঁরা এ ভাবেই রোগী দেখবেন বলে দাবি ওই ডাক্তারদের।

স্বাস্থ্য-সঙ্কটের মধ্যেই শনিবার এক অন্য ছবি দেখা গিয়েছে শালবনি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। ‘ম্যানুয়াল ভেন্টিলেশন’-ব্যবস্থা তৈরি করে বিষধর সাপের ছোবল খাওয়া এক যুবকের প্রাণ বাঁচালেন চিকিৎসকেরা। এ দিন সকালে বোতেরাম টুডু নামে ওই যুবককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে আনেন পরিজনেরা। প্রমাদ গনেন চিকিৎসকেরা। কারণ, শালবনিতে ‘ভেন্টিলেশন’-এর ব্যবস্থা নেই, নেই ‘পোর্টেবল ভেন্টিলেটর’। সে ব্যবস্থা রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল। কিন্তু মেদিনীপুর নিয়ে যেতে যেতে বিপদ হতে পারে! সে পরিস্থিতিতে ডাক্তারেরাই ব্যবস্থা করেন ‘ম্যানুয়াল ভেন্টিলেশন’-এর। চিকিৎসায় সাড়া দেন বোতেরাম। অবস্থা স্থিতিশীল হতে দুপুরে তাঁকে মেদিনীপুরে সরানো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, ‘‘শালবনির চিকিৎসকেরা ভাল কাজ করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE