Advertisement
E-Paper

পথে ফেলে বাসুদেবের পেটে বাঁশ

থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে সিপিএম নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এমনকী বাঁশের ঘা থেকে রক্ষা পেলেন না ৭৬ বছরের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪৯
সৌজন্য: পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে আহত বাসুদেববাবুর খোঁজ নিতে এলেন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। ছবি: সুজিত

সৌজন্য: পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে আহত বাসুদেববাবুর খোঁজ নিতে এলেন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। ছবি: সুজিত

গোলমালের আশঙ্কা ছিলই। তাই জেলাশাসকের কাছে নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েই মনোনয়ন দিতে গিয়েছিলেন পুরুলিয়ার সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু নিরাপত্তা দেওয়া দূর অস্ত্, থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে সিপিএম নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এমনকী বাঁশের ঘা থেকে রক্ষা পেলেন না ৭৬ বছরের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াও। কপাল ফাটল সিপিএমের এক এরিয়া কমিটির বর্ষীয়ান সদস্যেরও। শুক্রবার এমন ঘটনারই সাক্ষী থাকল পুরুলিয়ার কাশীপুর। তবে রাতে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি থাকা বাসুদেববাবুর সঙ্গে দেখা করতে যান দলের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।

বস্তুত, মনোনয়ন পর্ব শুরুর পর থেকেই কাশীপুর ব্লক অফিস কার্যত তৃণমূলের লোকেরা ঘিরে রেখে বিরোধীদের বাধা দিচ্ছিল, মারধর করছিল বলে অভিযোগ। সে জন্য সিপিএম নেতৃত্ব ঠিক করেছিলেন, শুক্রবার তাঁরা পঞ্চায়েতের তিনটে স্তরের সমস্ত প্রার্থীদের নিয়ে কাশীপুরে মনোনয়নপত্র তুলতে যাবেন। বাসুদেববাবু, সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় প্রমুখ বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে শুক্রবার তাঁরা যাতে নির্বিঘ্নে ব্লক অফিসে ঢুকতে পারেন, সে জন্য স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাঁরা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার ছিটেফোঁটাও পাননি বলে অভিযোগ।

এ দিন সকাল থেকেই কাশীপুর ব্লক অফিসের অদূরে তৃণমূলের পার্টি অফিসের সামনে বিরাট জমায়েত করেছিল দলের লোকজন। অভিযোগ, সে সময়ে ওই দলীয় অফিসে ছিলেন এলাকার বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ব্লক অফিসে ঢুকে সিপিএমের কিছু কর্মী মনোনয়নপত্র তোলার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেরা তাঁদের ব্লক অফিসের সামনেই সামান্য মারধর করে ফিরিয়ে দেয়। পরে সিপিএমের লোকজন জমায়েত করে কাশীপুর বাজারে এরিয়া কমিটির অফিসে। সেখানে আসেন বাসুদেববাবু। ঠিক করেন, সবাই মিলে মিছিল করে ব্লক অফিসে যাবেন।

পার্টি অফিস থেকে মিছিল বেরোয়। সামনেই ছিলেন বাসুদেববাবু, জেলা কমিটির সদস্য সত্যনারায়ণ বাউড়ি, কাশীপুর উত্তর এরিয়া কমিটির সদস্য সুকুমার গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। কাশীপুর থানা ছাড়িয়ে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে পঞ্চকোটরাজ হাইস্কুলের সামনে মিছিল পৌঁছতেই তৃণমূলের পার্টি অফিস থেকে রে রে করে দুষ্কৃতীরা মিছিলের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

অভিযোগ, মাটিতে ফেলে লাঠি পেটা করা হয় সত্তরোর্দ্ধ সত্যানারায়ণবাবুকে। লাঠির আঘাতে কপাল ফাটে এরিয়া কমিটির সদস্য বছর সত্তরের সুকুমারবাবুর। বাঁশ দিয়ে বেশ কয়েকবার বাসুদেববাবুর পেটে মারা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের লোকেদের আক্রমণে সিপিএমের মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তারই মধ্যে কিছু দলীয় কর্মী আহত নেতাদের উদ্ধার করে পাশে সরিয়ে নিয়ে যান। ততক্ষণে থানার সামনে রাখা বাসুদেববাবুর গাড়িও দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর করে।

সিপিএমের দাবি, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলায় ওই তিন নেতা ছাড়াও অন্তত দলের প্রায় ৫০ জন কর্মী কমবেশি চোট পেয়েছেন। বাসুদেববাবু পরে বলেন, ‘‘সকালেই তৃণমূলের মারমুখী লোকেদের ব্লক অফিসের কাছে দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ শুধু নিষ্ক্রিয় থেকে ওই সমাজ বিরোধীদের হামলার জন্য মদত দিয়েছে।’’ যদিও পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাসের দাবি, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয়। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ দ্রুত পৌঁছেছিল বলে বড়সড় ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। থানায় অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

ঘটনা হল, সিপিএমের মিছিলে যখন হামলা চলছে, সেই সময়ে কাশীপুর থানায় উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও অভিজিৎ চৌধুরী, কাশীপুরের ওসি পার্থ ভুঁইঞা-সহ জনা তিরিশেক পুলিশ কর্মী। অন্য দিকে ব্লক অফিসেও ছিলেন জনা পঁচিশেক পুলিশ কর্মী। অথচ কয়েক মিনিট ধরে হামলা চললেও, কোনও পুলিশ কর্মীকে সেখানে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। এতেই পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আহত বাসুদেববাবুকে দুপুরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে। অক্সিজেন চালিয়ে তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলছে। বাকি দুই জখম বর্ষীয়ান নেতাকে প্রথমে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁদের বাঁকুড়ার একটি নার্সিংহোমে পাঠানো হয়।

উচ্চরক্তচাপ, সুগার-সহ বেশ কিছু জটিল রোগে বাসুদেববাবু দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। দলের রাজ্য সম্মেলনের আগে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভিন্‌ রাজ্যে তাঁকে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। খুব সম্প্রতি কিছুটা সুস্থ হতেই দলের কাজে নেমে পড়েছেন। তাই বাসুদেববাবুর উপরে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। তাঁর উপরে দলীয় কর্মীদের হামলার অভিযোগ শুনে অস্বস্তি লুকোতে পারছেন না তৃণমূলের কিছু জেলা নেতাও। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘বাসুদেববাবুর মতো বর্ষীয়ান নেতার উপরে এই ধরনের হামলা মোটেই কাঙ্খিত নয়।’’

রাতে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে গিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বাসুদেববাবুর সঙ্গে দেখা করেন। কী হয়েছে তা জানতে চান। তাঁর কোথায় কোথায় চোট লেগেছে বাসুদেববাবু তা জানান। লাল গোলাপের তোড়া এগিয়ে দিয়ে দলের যুব সভাপতি সুশান্ত মাহাতো বাসুদেববাবুকে বলেন, ‘‘আমাদের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আপনার আরোগ্য কামনা করে ফুল পাঠিয়েছেন।’’

ঘটনার পরে বাসুদেববাবুর অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘এ দিনের হামলা স্থানীয় বিধায়কের নেতৃত্বে হয়েছে।’’ যদিও বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে। সিপিএম-সহ সমস্ত বিরোধীরা বরং মিছিল করে এসে আমাদের পার্টি অফিসে হামলা চালিয়েছে।’’ রাতে শান্তিরামবাবুকে জানতে চাওয়া হয়, এক জন বিধায়কের বিরুদ্ধে হুড়ার পরে কাশীপুরে ফের হামলার অভিযোগ কেন উঠল? মন্ত্রী বলেন, ‘‘কী পরিস্থিতিতে ঘটনাটি ঘটল, দেখছি।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল ওদের স্বভাবসিদ্ধ করেছে। তবে এই সন্ত্রাসের মদতদাতা হলেন জেলাশাসক। কারণ, তাঁকে কাশীপুর অবরুদ্ধ হয়ে আছে বলে জানিয়েছিলাম। মনোনয়নের জন্য নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। জেলাশাসক আশ্বস্ত করেছিলেন। তারপরেও নৃশংস হামলা হল কী করে?’’ জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় অবশ্য বলছেন, ‘‘কাশীপুরে সিপিএমের উপরে হামলার বিষয়ে ঠিক জানা নেই। কিছু হয়ে থাকলে তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করুক।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 Basudeb Acharia CPM TMC বাসুদেব আচারিয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy