প্রতীকী ছবি।
যত কাণ্ড পাঁশকুড়ায়।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের এই ব্লকে অশান্তি হচ্ছে। ব্লক অফিসের মধ্যে পূর্ব পাঁশকুড়ার সিপিএম বিধায়ক ইব্রাহিম আলিকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, প্রার্থীদের নিয়ে ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময়ে ‘আক্রান্ত’ হয়েছেন প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দাশঠাকুর। তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান, বর্তমানে বিজেপি নেতা আনিসুর রহমানকে আবার তাঁর নিজের বিএড কলেজ চত্বরেই মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
বিরোধীদের ওপর হামলার প্রতিটি ঘটনাতেই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। তৃণমূল নেতৃত্ব সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ধারাবাহিক চাপানউতোরে স্পষ্ট, নন্দীগ্রাম-খেজুরির জেলায় এ বার ভোটে সরগরম পাঁশকুড়াই।
একসময় বামেদের শক্ত ঘাঁটি পাঁশকুড়া বদল শুরু ২০০৭ সালে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সেই বছরে বামেদের হটিয়ে পুরসভা পায় তৃণমূল। ধীরে ধীরে লাল দুর্গ হয়ে ওঠে সবুজ। একচ্ছত্র আধিপত্যের মধ্যেই পাঁশকুড়ায় শাসকের অস্বস্তি ফিরে আসে গত বছর। পুরভোটে তৃণমূল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পুরপ্রধান নির্বাচন ঘিরে তৎকালীন যুব তৃণমূল জেলা সভাপতি আনিসুর এবং বর্তমান পুরপ্রধান নন্দকুমার মিশ্রের বিরোধ চরমে ওঠে। দলের নির্দেশ অমান্য করে আনিসুর পুরপ্রধান হয়ে যান। তৃণমূল তাঁকে সাসপেন্ড করে, পুরপ্রধানের পদও হারান। এরপরই আনিসুর যান বিজেপিতে। তারপর একের পর এক মামলায় নাম জড়িয়ে খুব বেশিদিন বাইরেও থাকতে পারেননি দাপুটে এই নেতা। মনোনয়ন পর্বে হামলার অভিযোগে এই মুহূর্তেও তিনি জেলবন্দি। তবু তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে,
আনিসুরই মাথাব্যথা।
প্রকাশ্যে আনিসুরের ‘প্রভাব’ তৃণমূল নেতৃত্ব মানছেন না। তবে তৃণমূলের এক সূত্রই জানাচ্ছে, আনিসুর ‘ঘনিষ্ঠ’ অনেকেই দলে রয়ে গিয়েছেন। তাঁরা এই মুহূর্তে নিষ্ক্রিয়। কিন্তু ভোটে কী করবেন, সেটাই ভাবনা। আনিসুরকে পেয়ে গেরুয়া শিবিরও চাঙ্গা। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের যে সব নেতা-কর্মী প্রতীক না পেয়ে নির্দল হিসাবে লড়ছেন, তাঁরা যোগাযোগ করছেন। বিজেপির তমলুক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নবারুণ নায়েক মানছেন, ‘‘কয়েকটি আসনে নির্দল প্রার্থীরা আমাদের সমর্থন চেয়েছেন।’’
পরিসংখ্যান বলছে, পাঁশকুড়ায় তৃণমূলের আধিপত্য অটুট। ব্লকের ২০৮টির মধ্যে ৯৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন, ৪০টির মধ্যে ১৮টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন এবং জেলা পরিষদের তিনটি আসনের মধ্যে একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে শাসকদল। বিরোধীদের আশঙ্কা, মনোনয়ন পর্বে যে হাঙ্গামা শুরু হয়েছে, তা ভোট পর্যন্ত চলবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির কথায়, ‘‘পুলিশ–প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে মনোনয়নে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। ভোটগ্রহণের সময় তৃণমূলের সন্ত্রাস বাড়বে বলেই আশঙ্কা।’’ তৃণমূলের পুরপ্রধান নন্দকুমারবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘বড় কোনও অশান্তি হয়নি। ভোটগ্রহণও শান্তিতেই হবে।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy