দুই গ্রামের দুই মহিলা। দু’জনেই বিজেপি প্রার্থী। একজন অন্তঃসত্ত্বা, অন্যজন তিন সন্তানের মা। লড়াইয়ের জেদ অবশ্য দু’জনের একই রকম। দু’জনেরই অভিযোগ, মনোনয়ন প্রত্যাহারে ‘চাপ’ আসছে। কিন্তু মাথা নোয়াননি কেউই। ভয়ে আছেন পরিজনেরা। অথচ প্রার্থীই তাঁর স্বামীকে অভয় দিচ্ছেন, ‘‘ঘর ছাড়ব, তবু স্যারেন্ডার হবনি।’’
দু’টি ক্ষেত্রেই চাপের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। আর প্রশাসনের আশ্বাস, সব প্রার্থীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে।
ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম ব্লকের বড়খাঁকড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়ডাঙা বুথে বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন বছর তেইশের সীমা বধুক। বছরখানেক বিয়ে হয়েছে চাষি পরিবারে। স্বামী পঙ্কজও চাষবাস করেন। অন্তঃসত্ত্বা সীমা শনিবার স্বামীর সঙ্গে গোপীবল্লভপুরে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। অভিযোগ, বাড়ি থেকে বেরোনোর পরে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় তৃণমূলের লোকজন। সীমার শ্বশুরমশাই নবীনবাবুকে নিয়ে তারা গাড়িতে গোপীবল্লভপুরে রওনা দেয়। সীমাদেবীর কথায়, “শ্বশুরমশাইকে গাড়ি থেকে নামতে দেখি। সঙ্গে কয়েক জন তৃণমূল নেতা-কর্মী। আমাকে দেখেই ওরা তাড়া করে। স্বামীর হাত ধরে উল্টোদিকে ছুটতে শুরু করি।”
সীমার দাবি, ‘‘ছুটতে ছুটতেই ওদের বলি, নির্বাচনে দাঁড়ানো গণতান্ত্রিক অধিকার। মনোনয়ন প্রত্যাহার করব না। পরে বিজেপির কার্যালয়ে ঢুকে পড়ি। আমাদের লোকজনের পাল্টা তাড়ায় তৃণমূলের লোকেরা চম্পট দেয়।’’ সীমার শ্বশুর বলছিলেন, “বৌমা নাছোড়, ভোটে লড়বেই।” ঘটনায় অভিযোগ জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রে তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি অবশ্য বলেন, “আমাদের কেউ ওদের কোনও প্রার্থীকে মনোনয়ন তোলাতে যাননি।”
গড়বেতা ২ অর্থাৎ গোয়ালতোড় ব্লকের জগারডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ নম্বর আসনের বিজেপি প্রার্থী সরস্বতী মুর্মুও লড়াকু। দলীয় কার্যালয়ে বসে সরস্বতীর অভিযোগ, ‘‘আমাদের মালিবাঁধি গ্রামে উন্নয়ন হয়নি। আমি এ সব বলতেই হামলা করেন তৃণমূলের কয়েকজন। পাড়ার কলে জল নেওয়া বন্ধ করে দেয়। রেশনের মালপত্রও পাইনি। বন্ধ করে দেওয়া হয় জবকার্ডের কাজ।’’ তবে ভয় পাননি তিন সন্তানের মা সরস্বতী। স্বামীকে অভয় দিয়েছেন। দুই ছেলেকে রেখে একমাস আগে ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন দলীয় কার্যালয়ে।
সরস্বতী জানিয়েছেন, গোড়াতেই পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সুরাহা হয়নি। কেন পদক্ষেপ করল না প্রশাসন? মেদিনীপুর (সদর) মহকুমা শাসক দীননারায়ণ ঘোষের আশ্বাস, ‘‘অভিযোগ সত্যি হলে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’ আর গড়বেতার তৃণমূল বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘গ্রামের কেউ বাইরে আছে শুনিনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy