Advertisement
E-Paper

তাপসীর ‘খুনি’র আত্মীয় ভোটে লড়ায় ক্ষুব্ধ সিঙ্গুর, চাইছে পালাবদল

তাপসী মালিক খুনে অভিযুক্ত দেবু মালিকের ভাইপো রথীন মালিকের পরাজয় দেখতে চান বলেই এ দিন সাফ জানিয়ে দিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ।

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ১৮:৫৫
তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জন মালিক। ইনসেটে তাপসী।—নিজস্ব চিত্র।

তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জন মালিক। ইনসেটে তাপসী।—নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে ২০১১ সালে পরিবর্তনের ‘আঁতুড়ঘর’ সিঙ্গুরে ফের পালাবদলের দাবি উঠল। এবং তা পঞ্চায়েতের ভোটের দিনেই।

তাপসী মালিক খুনে অভিযুক্ত দেবু মালিকের ভাইপো রথীন মালিকের পরাজয় দেখতে চান বলেই এ দিন সাফ জানিয়ে দিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ।

হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নার ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে রথীনবাবু গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন। কিন্তু, দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের অনুগামীরা। এ দিন সকালে ভোট শুরু হতেই তাঁরা জানিয়ে দেন, রথীনবাবুকে ভোট দেবেন না। একই মত গ্রামবাসীদের একাংশের। তা হলে কি সিঙ্গুরে পরিবর্তনের হাওয়া বইবে? গ্রামবাসীদের ভাবনার প্রতিফলন ব্যালটে পড়বে কি না, তা সময়ই বলবে।

আরও পড়ুন
ভোটে হিংসা নিয়ে রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করল কেন্দ্র, সক্রিয় কেশরীও

দেখুন ভিডিয়ো

সিঙ্গুরের ৪ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূল প্রার্থী পূর্ণিমা ঘোষ (মালিক)-এর বিরুদ্ধেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জনবাবু। এ দিন তিনি বলেন, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্দল হয়েছি। যাঁরা অত্যাচার করল, এখন তারাই সব। মেয়েকে যে খুন করেছে, তার আত্মীয়ই এখন গ্রামপঞ্চায়েতে দাঁড়িয়েছেন। কী করে দল তাঁকে টিকিট দেয়! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি শ্রদ্ধা করি। এটা আমার কাছে আদর্শের লড়াই। আশা করছি মানুষের ভালবাসা পাব।”

এ দিন সিঙ্গুরে উত্তেজনা না থাকলেও, সকাল থেকেই থমথমে পরিবেশ ছিল। বিরোধীদের পতাকা রাস্তা জুড়ে। কোথাও সিপিএম, কোথাও বিজেপি, কোথাও আবার নির্দলের দেওয়াল লিখন, হোর্ডিং। সিঙ্গুরের ৪ নম্বর জেলা পরিষদে কেজিডি, বেড়াবেড়ি, সিঙ্গুর-১, বলরামবাটি, বাসুবাটি, মির্জাপুর পঞ্চায়েত রয়েছে। এর মধ্যে মনোরঞ্জনবাবুর মতো পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পদে আরও নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা তৃণমূলকর্মী হলেও, হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই নির্দল হয়েছেন। এবং আশাবাদী তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত প্রাণঘাতী হবে।

এ বিষয়ে সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কেন দেবু মালিকের ভাইপোকে প্রার্থী করা হল, তা বলতে পারব না। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমার হাতে ছিল না। আমি বিষয়টি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম। হয়তো ক্ষোভ থেকেই মনোরঞ্জনবাবু প্রার্থী হয়েছেন।”

এ দিকে বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘দেবুর দূরসম্পর্কের আত্মীয় রথীন। ওর বাবা এবং ও তৃণমূলের সমর্থক এবং সর্বক্ষণের কর্মী। মনোরঞ্জনকে ওর আত্মীয়রাই ভোট দেবে না। রথীনের জয় নিশ্চিত।’’

২০০৬ সালে সিঙ্গুরে নৃশংস ভাবে খুন হন তাপসী মালিক। সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানার জমিতে তাপসীর দেহ মেলে। পরিবারের পাশে দাঁড়ান খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলন শুরু হয় ।এই হত্যার নেপথ্যে যাদের নাম উঠে আসে, তাদের মধ্যে এক জন দেবু মালিক। মৃত্যুর পরেও আন্দোলনের মুখ হয়েছিলেন তাপসী। বামেদের গদি ছাড়া করতে তাপসীর ছবি দিয়ে সিঙ্গুরে প্রচার চলে। এক যুগ বছর পর কেন এক অভিযুক্তের ভাইপোকে প্রার্থী করতে হল, তার জবাব নেই তৃণমূলের কাছেও।

পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হয়ে সিঙ্গুরে দলের চাপ বাড়িয়েছে তাপসী মালিকের বাবা। তিনি বলেন, “দলের নির্দেশেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলা হয়। কেন জানি না।”

স্থানীয় সূত্রে খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই মনোরঞ্জনকে প্রার্থী করা হয়নি। সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়ায় জেলা পরিষদের ৪ নম্বর আসন থেকে লড়তে চেয়ে দলের কাছে টিকিট চেয়েছিলেন তাপসীর বাবা মনোরঞ্জন মালিক। গত বার পূর্ণিমা মালিক ওই এলাকা থেকে জিতেছিলেন। মনোরঞ্জনকে বুঝিয়ে মনোনয়ন তুলতে আবেদন জানায় দল। জেলা নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে বৈঠকও করে। তাঁকে টিকিট না দেওয়া নিয়ে বেচারাম মান্নার দিকেই আঙুল তুলেছেন মনোরঞ্জন। তিনি বলেন, ‘‘এটা কি ন্যায় বিচার হল? আমার মেয়ের খুনির এক আত্মীয়কে টিকিট দিল বেচারাম মান্না!’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Poll পঞ্চায়েত নির্বাচন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy