অশান্ত ভাঙড় সামলাতে পুলিশ বাহিনী।—নিজস্ব চিত্র।
বিদ্যুতের পাওয়ার গ্রিড বসানোকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ভাঙড়। গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ, পুলিশের উপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। উল্টো দিকে পুলিশের বিরুদ্ধেও উঠল গুলি চালানোর অভিযোগ। গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। তাঁদের মধ্যে একজনের নাম আলম মোল্লা। আর একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের গুলিতে কারও মৃত্যুর খবর প্রসাশনিক সূত্রে স্বীকার করা হয়নি।
অশান্ত ভাঙড় সামলাতে গত ২৪ ঘণ্টা ধরে ব্যর্থ চেষ্টাই করে গিয়েছে প্রশাসন। প্রচুর পুলিশের পাশাপাশি র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স নামিয়েও কোনও কাজ হয়নি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে ভাঙড় যান রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক আব্বুর রেজ্জাক মোল্লা। যে পাওয়ার গ্রিড বসানোকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলের সূত্রপাত, গ্রামবাসীরা না চাইলে তা হবে না— রেজ্জাককে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো এই বার্তাও কোনও কাজে আসেনি। তিনি ঘুরে আসার পরেও পরিস্থিতি যে কে সেই রয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন বলেই জানিয়েছে পুলিশ।
পরিস্থিতি সামলাতে এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী।—নিজস্ব চিত্র।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। এমনিতে বিদ্যুতের একটি পাওয়ার গ্রিড বসানোকে কেন্দ্র করে গত ছয় মাস ধরে এলাকায় আন্দোলন চলছে। জমি-জীবিকা-বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি ওই আন্দোলনের উদ্যোক্তা। সোমবার সন্ধ্যায় ওই কমিটির দুই সদস্যকে সিআইডি আটক করে নিউটাউন থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, রাতেই ওই সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই আটকের প্রতিবাদে ওই রাতেই রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেন জমি রক্ষা কমিটির সদস্যেরা। অবরোধ করা হয় হাড়োয়া-লাউহাটি রোড। ভাঙড়ের টোনা, বাদামতলা, খামারহাটি-সহ বিভিন্ন এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়। রাতে পুলিশ সেই অবরোধ তুলতে গেলে মারমুখী হয়ে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। কয়েক জন পুলিশ কর্মীকে মারধরও করা হয়। পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে রাতেই ছ’জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন
শ্রীনু খুনে দিলীপ-যোগ ওড়াল ধৃত
ওই ছ’জনকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের ওই সমস্ত জায়গায় গাছের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ এলে ফের তাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। এর পরে ডিআইজি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ ভরতলাল মিনা বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় যান। শুরু হয় পুলিশি টহলদারি। কিন্তু, পরিস্থিতি কোনও ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসেনি। যদিও ধৃত ছ’জনকে এ দিন বারুইপুর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিন দুপুরে ভাঙড়ে যান রেজ্জাক মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘ভাঙড়ের মানুষ যদি পাওয়ার গ্রিড তৈরিতে বাধা দেন, তা হলে তা করা হবে না। মুখ্যমন্ত্রী তেমনই নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব।’’ এ দিন উত্তর গাজিপুরে তৃণমূল অফিসে গ্রামবাসীদের বক্তব্য শোনেন রেজ্জাক। কিন্তু, তার পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
রাস্তা আটকে রেখেছেন গ্রামবাসীরা।—নিজস্ব চিত্র।
গোটা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ মিলিত ভাবে তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কমব্যাট ফোর্স নামানো হয়। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পরে আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) অজয় রানাডে এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বিশাল বাহিনী নিয়ে কাশীপুর থানায় পৌঁছন। কিন্তু, তাতে কোনও কাজ হয়নি।
এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক হাজার গ্রামবাসী রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। গ্রামবাসীরা লাঠি নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করতে থাকে। কয়েক জায়গায় বোমাবাজি করা হয়েছে বলে পুলিশের অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মূলত কাশীপুর থানায় বাহিনী জমায়েত করা হয়েছিল। কয়েক হাজার গ্রামবাসী সেই পুলিশ বাহিনীকেও ঘিরে ফেলে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হতে থাকে। গ্রামের ভিতরে পুলিশের গাড়ির উপর হামলা চালানো শুরু হয়। পুলিশের গাড়ির উপর চড়াও হন গ্রামবাসীরা। ২০ জন পুলিশকর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর। জখম পুলিশকর্মীরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy