বিমল গুরুঙ্গের নেতৃত্বে দার্জিলিংয়ের জিমখানা ক্লাবের জমি বেদখল হওয়ার ঘটনা গড়াল নবান্ন-রাজভবন দ্বৈরথে। ১০৮ বছরের পুরনো ওই ক্লাবের জমিতে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ। সেখানে পাইন ট্রি নামে একটি হোটেল ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গিয়েছে। অপর একটি হোটেলের নির্মাণ কাজও চলছে বেআইনি ভাবে। নবান্নের প্রশ্ন, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি জিমখানা ক্লাবের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার জমি মোর্চা দখল করল কী ভাবে? রাজভবনে চিঠি পাঠিয়ে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত জানতে চেয়েছেন, ক্লাবের সভাপতি হিসেবে রাজ্যপাল এই বিষয়ে অবগত ছিলেন কি না? তাঁর অনুমতি নিয়ে ওই দুই হোটেল নির্মাণ হয়েছে কি না?
রাজ্যের তরফে এই খোঁচা খেয়ে রাজভবনও দায় ঝেড়ে ফেলার কৌশল নিয়েছে। শুক্রবার রাজভবনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘রাজ্যপাল পদাধিকারবলে ওই ক্লাবের সভাপতি। কিন্তু দৈনন্দিন ক্লাব প্রশাসন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নন। তা ছাড়া, যে সময় ওই জমি জবরদখল হয়েছে, তখন বর্তমান রাজ্যপাল এ রাজ্যে আসেননি। তা সত্ত্বেও জেলাশাসকের চিঠি পেয়ে নবান্নকেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল।’’ ওই মুখপাত্র জানান, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক দফতর কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা এখনও জানায়নি। যদি জমির জবরদখল হয়ে থাকে, তা হলে রাজ্য সরকারকেই তা ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
দার্জিলিং জেলা প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, জিমখানা ক্লাব মূলত খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য নির্দিষ্ট। দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত প্রায় ২ একর জমির উপরে গড়ে ওঠা এই ক্লাব। এই হেরিটেজ ক্লাবে যে কোনও রকম নির্মাণের জন্য সরকার ও পরিচালন পর্ষদের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু সেই কাগজপত্র এখনও পর্যন্ত হোটেল পরিচালকরা দেখাতে পারেননি।
আরও পড়ুন: গাঁধী হত্যার তদন্ত? মত নেবে কোর্ট
জেলা প্রশাসন জেনেছে, হোটেল নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। হোটেল দু’টির মালিকানাও বেনামে তাঁর কিনা, তা নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জেলাশাসক বলেন, ‘‘কে ওই হোটেলের মালিক তার খোঁজ চলছে। কী ভাবে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের জমি দখল হল, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
তবে শুধু জিমখানা ক্লাবই নয়, মহাকাল মার্কেটের কাছে ‘জয় কমপ্লেক্স’ এবং ‘রিঙ্ক মল’ এর মালিকানা নিয়েও প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। গুরুঙ্গের অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়া ছেলের নামও জয়। ফলে ওই মল আদতে মোর্চা সভাপতির বলেই গুঞ্জন। আবার বিমলের ঘনিষ্ঠরাই যে রিঙ্ক মলের মালিক, তা-ও বলেন পাহাড়ের অনেকে। এ সব সত্যি কিনা, সেটা এখন তদন্ত করে দেখতে চায় সরকার।