Advertisement
E-Paper

বন্‌ধেই অনড় থেকে শক্তি যাচাইয়ে গুরুঙ্গ

এর আগে তিনি হাঁক দিলে খাসতালুকে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যেত। এ বারে কিন্তু কেউ হলফ করে বলতে পারছেন না, বুধবার পাহাড় পুরোপুরি অচল থাকবে।জানেন না এমনকী খোদ বিমল গুরুঙ্গও। বরং তিনি জানেন, বন্‌ধে অনড় থাকলে ঘরে-বাইরে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০০

এর আগে তিনি হাঁক দিলে খাসতালুকে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যেত। এ বারে কিন্তু কেউ হলফ করে বলতে পারছেন না, বুধবার পাহাড় পুরোপুরি অচল থাকবে।

জানেন না এমনকী খোদ বিমল গুরুঙ্গও। বরং তিনি জানেন, বন্‌ধে অনড় থাকলে ঘরে-বাইরে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা। বিশেষ করে যেখানে এই বন্‌ধকে মঙ্গলবারই বেআইনি বলে ঘোষণা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। দু’টি মামলার একত্রে শুনানির পরে প্রধান বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে বলে, বন্‌ধের দিন নাগরিক অধিকার যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, তা নিশ্চিতকরা হোক।

রাজ্য প্রশাসন অবশ্য আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু করেছিল। সোমবারই নবান্ন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জিটিএ-তেও হাজিরা আবশ্যিক করা হয়। পাহাড়ের তিন শহরে নিজের তিন মন্ত্রীকেও পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হাইকোর্টের নির্দেশ আসার পরে যে প্রশাসন যে জোর আরও বাড়াবে, সেটা এর মধ্যেই আঁচ করতে পারছেন মোর্চা নেতারা।

পাহাড়ে এক কোম্পানি সিআরপি মোতায়েন হয়েছে। বাড়তি এক হাজার পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছে নানা থানায়। তিন মন্ত্রী গৌতম দেব, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও জেমস কুজুর মিটিং-মিছিল করে দিয়েছেন। রাজ্য পুলিশের এডিজি উত্তরবঙ্গ এন রমেশবাবু এবং ২ জন ডিআইজি, কলকাতার প্রথম সারির কয়েক জন আইপিএস অফিসারও দার্জিলিঙে পৌঁছেছেন।

সরকারি সূত্রের খবর, হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি জেলা পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক জন একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে গুরুঙ্গের হাতে ধরানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু, রাত পর্যন্ত নির্দেশ মেলেনি বলে মোর্চার দাবি। দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘‘দার্জিলিঙে বন্‌ধের নামে জনজীবন বিপর্যস্ত করার চেষ্টা হলে পুলিশ-প্রশাসনকে আইনি পদক্ষেপ নিতে বলেছে হাইকোর্ট। আমরা সেই মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’’

এই অবস্থায় বন্‌ধে অনড় থাকাটা কি গুরুঙ্গের কাছে কিছুটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হয়ে গেল? একে তো বন্‌ধ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মনোভাব। সঙ্গে তৃণমূলের উত্থান। তারউপরে হাইকোর্টের নির্দেশ আর প্রশাসনের নজরদারির মধ্যে জোর করে বন্‌ধ করা সম্ভব হবে না।
আর চার বছর আগের মতো গুরুঙ্গ ‘বন্‌ধ’ উচ্চারণ করলেই যে দোকানপাট, অফিস-কাছারি ঝাঁপ ফেলে দেবে, এই অবস্থাও এখন নেই। সেটা মানছেন মোর্চা নেতারাও। বরং পুজোর মুখে আচমকা বন্‌ধের ডাকে কিছুটা ক্ষুব্ধই পাহাড়ের ব্যবসায়ীরা। তা হলে?

পাহাড়ে বিরোধী নেতাদের অনেকেই মনে করেন, কথায়-কথায় বন্‌ধ ডাকতে অভ্যস্ত গুরুঙ্গ এখন বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে গিয়েছেন। জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, অতীতে টানা বন্‌ধ ডাকায় বিরক্ত হয়ে পাহাড়ের আমজনতা রুখে দাঁড়িয়েছিল সুবাস ঘিসিঙ্গের বিরুদ্ধে। সেই সুযোগ নিয়ে বন্‌ধের বিরোধিতা করেই তখন মসনদে বসেছিলেন এই গুরুঙ্গ। এখন সেই মোর্চা প্রধানই প্রশ্নের মুখে। তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকেরা বলছেন, তৃণমূল নেতৃত্বের চাপে ক্রমাগত কোণঠাসা হয়ে এখন এক বার নিজের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে নিতে চাইছেন গুরুঙ্গ। তাই এখনও তাঁর কথায় ওঠবস করেন গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেলের (জিএলপি) যে ৪ হাজার সদস্য, বন্‌ধের বাজারে তাঁদের কাজে লাগাতে চাইছেন তিনি। আর বুঝতে চাইছেন, নিজের জমি কত শক্ত। তাই গুরুঙ্গ বন্‌ধের ডাকে এখনও অনড়।

অথচ বন্‌ধ করতে পথে নামার অর্থ আদালত অবমাননা। এমনিতেই মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় চার্জশিট ঝুলছে ঘাড়ের উপরে। তার সঙ্গে এই মামলাও যদি যোগ হয়, তা হলে কী করা হবে— এই নিয়েও মঙ্গলবার আলোচনা হয় মোর্চার মধ্যে। পরে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র বিনয় তামাঙ্গ বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ আমরা হাতে পাইনি। পেলে আলোচনায় বসে পদক্ষেপ ঠিক করব।’’ পাশাপাশি বলেন, ‘‘আপাতত এটা বলতে পারি— যত বাধাই আসুক, বুধবার ১২ ঘণ্টার পাহাড় বন্‌ধ হচ্ছে। তবে আমরা কোথাও জবরদস্তি করব না।’’ আর মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ প্রধানের দাবি, ‘‘পাহাড় যে আমাদের সঙ্গে, সেটাই এ বারের প্রতীকী বন্‌ধে আবার স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’

Mamata Banerjee Bimal Gurung Bandh at Hills
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy