E-Paper

সংরক্ষণের লক্ষ্যে মাছরাঙা সপ্তাহ পালনে পাখিপ্রেমীরা

পক্ষীপ্রেমী সংগঠন ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র দ্বিতীয় সম্মেলনে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যে হেতু জুলাই মাছরাঙাদের প্রজনন কাল, তাই এ বার থেকে প্রতি জুলাই মাসের তৃতীয় রবিবার থেকে শুরু করে টানা সাত দিন মাছরাঙা সপ্তাহ হিসাবে পালন করবেন তাঁরা।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ০৯:২০
অরুণাচলে ব্লাইথ্‌স কিংফিশার।

অরুণাচলে ব্লাইথ্‌স কিংফিশার। ছবি: অধিরূপ ঘোষ।

জলের পাশে গাছের ডালে অথবা জলের উপরে কোনও খুঁটিতে চুপটি করে বসে সে। এক মনে কী যেন ভাবছে। আচমকা জলে ডুব। চোখের পলকে ঠোঁটে মাছ নিয়ে উড়ে যায় সে— মাছরাঙা। মাছেভাতে বাঙালির রাজ্যে প্রায় সর্বত্র বিদ্যমান এই পাখিটির একটি প্রজাতি (হোয়াইট-থ্রোটেড কিংফিশার ওরফে সাদা-বুক মাছরাঙা) আমাদের রাজ্যপাখিও বটে। শুধু তা-ই নয়। এ দেশে মাছরাঙার ১২টি প্রজাতির সবক’টিই দেখতে পাওয়া যায় এই বাংলায়— উত্তরে ডুয়ার্স থেকে দক্ষিণে সুন্দরবন পর্যন্ত ছড়িয়ে তার আবাসস্থল। তাই সংরক্ষণের প্রশ্নে এই রাজ্যপাখিকে সামনে রেখে প্রতি বছর ‘মাছরাঙা সপ্তাহ’ পালন করতে চলেছেন এ রাজ্যের পাখিপ্রেমীরা।

শনিবার এ রাজ্যের পক্ষীপ্রেমী সংগঠন ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র দ্বিতীয় সম্মেলনে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যে হেতু জুলাই মাছরাঙাদের প্রজনন কাল, তাই এ বার থেকে প্রতি জুলাই মাসের তৃতীয় রবিবার থেকে শুরু করে টানা সাত দিন মাছরাঙা সপ্তাহ হিসাবে পালন করবেন তাঁরা। সেই মতো আজ, রবিবার থেকেই মাছরাঙা সপ্তাহের সূচনা হচ্ছে।

ওই সংগঠনের সদস্য, পেশায় চিকিৎসক কণাদ বৈদ্য জানাচ্ছেন, রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বিদ্যমান মাছরাঙা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেই এমন উদ্যোগের কথা তাঁদের মাথায় আসে। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে মাছরাঙার ১২টি প্রজাতিরই দেখা মেলে। তাদের মধ্যে চারটি লাল তালিকাভুক্ত, একটি প্রজাতি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী শিডিউল ওয়ান গোত্রে পড়ে (অর্থাৎ বাঘ, হাতির সমপর্যায়ে)। রাজ্যপাখি হওয়া সত্ত্বেও ইতিমধ্যেই হয়তো একটি প্রজাতিকে (ব্লাইথ্‌স কিংফিশার) আমরা প্রায় হারিয়ে ফেলতে বসেছি। উনিশ শতকে এই প্রজাতির দেখা মিললেও বর্তমানে এ রাজ্যে এর প্রায় দেখাই মেলে না। তবে অরুণাচলে এর দেখা পাওয়া যায়। তাই মাছরাঙাকে সামনে রেখে সংরক্ষণের লক্ষ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে চাইছি আমরা।’’

কী ভাবে? সংগঠনের সেক্রেটারি সুজন চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, জলাভূমি থেকে তৃণভূমি, উপকূলীয় অঞ্চল থেকে তরাই এলাকা— এ রাজ্যের সব জায়গাই কোনও না কোনও প্রজাতির মাছরাঙার আবাসস্থল। ‘‘তাই যে কোনও জায়গার বাসস্থানগত সমস্যা হলেই মাছরাঙার বেঁচে থাকায় সমস্যা হতে পারে। অথচ রাজ্যে ক্রমশ জলাভূমি বুজিয়ে নির্মাণ, কলকারখানা তৈরির পরিমাণ বাড়ছে। নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে মাছরাঙাদের।’’— বলছেন সুজন। তাই এ দিনের সম্মেলন থেকে তাঁদের প্রস্তাব, এর পর থেকে বছরভর স্কুলে বা গ্রামেগঞ্জে পাখি চেনানোর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাছরাঙা নিয়ে থাকবে আলাদা আলোচনার সুযোগ, যাতে ক্রমশ রাজ্যপাখিকে নিয়ে উৎসাহ বাড়ে জনমানসে, বাড়ে সচেতনতা।

তবে শুধু মাছরাঙাই নয়। এ দেশে বিভিন্ন পাখিদের ক্রমহ্রাসমান সংখ্যার জন্য কী কী কারণ দায়ী, তা নিয়ে আলোচনা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথা সংরক্ষণবিদ, বার্ডলাইফ এশিয়া কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আসাদ রফি রহমানি। তিনি জানান, পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ দেশের ১৪৬টি প্রজাতির পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সেই সংখ্যা দ্রুত গতিতে কমে আসছে। ধীরে প্রজনন, বিশেষ আবাসস্থলের উপরে নির্ভরশীলতা তো আছেই, সেই সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন ও দূষণ, বায়ুকল, বৈদ্যুতিক তার, নদী থেকে বালি খনন, প্লাস্টিক দূষণ, তেল ছড়িয়ে পড়া, বাস্তুতন্ত্রগত ফাঁদ, পথকুকুরের হামলা, বাসস্থানে বহিরাগত কোনও প্রজাতির ঢুকে পড়া-সহ বহু কারণে এ দেশে কমছে পাখির সংখ্যা। তিনি বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় কোনও পাখির প্রজাতির আনাগোনা কমলে আগে স্থানীয়েরা প্রশ্ন করতেন, অমুক পাখি কোথায় গেল বলুন তো? কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম তেমন প্রশ্ন করে না। কারণ, তারা এলাকায় সেই পাখি দেখেইনি, ফলে তার সংখ্যা হ্রাস নিয়েও চিন্তিত নয়। তাই পাখিদের নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে তারা সমস্যাটা চিহ্নিত করতে পারে।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে অরুণাচল-উত্তরবঙ্গের হর্নবিল পাখি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পক্ষী সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেন গবেষক ও পাখিপ্রেমীরা। কথা হয় রাজ্যের ‘বার্ড অ্যাটলাস’ নিয়েও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kingfisher Birds

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy