অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
কংগ্রেস ‘বন্দে মাতরম্’ গানকে টুকরো করে ভারতকে দেশভাগের দিকে নিয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কলকাতায় জি ডি বিড়লা সভাঘরে বুধবার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত সভায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জাতীয় স্মারক বক্তৃতা করেন তিনি। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘বন্দে মাতরম্ পুরোটা গাওয়া হবে নাকি তার দুটি স্তবক গাওয়া হবে, এই বিবাদ দেখে মন দুঃখে ভরে যায়। কংগ্রেস পুরো গান গায় না। প্রথম দু’টি স্তবক গায়। কংগ্রেসের নেতারা না থাকলে হয়তো দেশভাগ হত না।’’
এর পরেই শাহের ব্যাখ্যা, এক এক জন ইতিহাসবিদ দেশভাগের এক একটা কারণ দেখিয়েছেন। কেউ বলেছেন ব্রিটিশের নীতি দেশভাগের জন্য দায়ী। কেউ খিলাফৎ আন্দোলনকে দেশভাগের জন্য দায়ী করেছেন। কেউ আবার দোষারোপ করেছেম মুসলিম লিগের দ্বি-জাতি তত্ত্বকে। কিন্তু আসল বিষয় হল— কংগ্রেস তাদের তোষণনীতির জন্য ‘বন্দে মাতরম্’ গানকে ভেঙে টুকরো করেছিল। তারই পরিণতি দেশভাগ।
ইতিহাসবিদ এবং কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্ব এবং — কোনও পক্ষই অবশ্য শাহের এই ব্যাখ্যা মানছেন না। ইতিহাসবিদ তথা তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু বলেন, ‘‘অমিত শাহ ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষয়টিকে উল্টো করে অপব্যাখ্যা করছেন। যাতে দেশভাগের পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্যই দেশের জাতীয় নেতারা একমত হয়ে বন্দে মাতরম্-এর প্রথম দু’টি স্তবক বেছে নিয়েছিলেন যে কোনও জাতীয় সমাবেশে গাওয়ার জন্য। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, জওহরলাল নেহরু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু— সকলেই ওই সিদ্ধান্তের শরিক ছিলেন। ১৯৩৭ সালের অক্টোবরে কলকাতায় যে এআইসিসি অধিবেশন হয়, সেখানে বন্দে মাতরম্-এর প্রথম দুই স্তবক গাওয়া হয়। ওই দু’টি স্তবক বেছে নেওয়ার কারণ, সেখানে সব ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ দেশমাতার বন্দনা গাইতে পারবেন। ওই গানের তৃতীয় স্তবকে রয়েছে, ‘ত্বং হি দুর্গা’ ইত্যাদি। সেটা সর্বধর্মমতের পক্ষে গ্রহণযোগ্য না হতেই পারে।’’
আরও পড়ুন: সমঝোতা ভুলে যান, সরাসরি সঙ্ঘাত তৃণমূলের সঙ্গেই, দলকে স্পষ্ট বার্তা অমিত শাহের
শাহ অবশ্য বলেন, ‘‘বন্দে মাতরম্ কোনও ধর্মের সঙ্গে যুক্ত নয়। এখানে কাউকে খাটো করা হয়নি। কাউকে নিন্দা করা হয়নি। বঙ্কিমবাবু নিজের ভাষা এবং সংস্কৃতি অনুযায়ী দেশবন্দনা করেছেন।’’ শাহের মতে, বঙ্কিমের ওই গান এবং ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস থেকেই ‘সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদ’-এর সূচনা হয়েছে।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শাহের বঙ্কিমচর্চাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘যারা বাংলার আদর্শ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি জানে না, যাদের সংস্কৃতি শুধু বিভেদের, তাদের মুখে বঙ্কিমচন্দ্রের নাম বা কথা মানায় না। বন্দে মাতরম্ আমরা সকলেই বলি। বন্দে মাতরম আমাদের রাষ্ট্রসঙ্গীত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy