ছবি: সংগৃহীত।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকৃত ছবি ফেসবুকে পোস্ট করায় অভিযুক্ত প্রিয়াঙ্কা শর্মাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, মুক্তি পেয়েই তাঁকে লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর বিকৃত ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য হাওড়ার বিজেপি যুব মোর্চার নেত্রী প্রিয়াঙ্কা শর্মাকে গ্রেফতার করা হয়। গত শুক্রবার আদালত তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠায়। জামিনের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কার ভাই রাজীব শর্মা। তার গ্রেফতারির সঙ্গে বাক্-স্বাধীনতার অধিকারের প্রশ্নও তোলেন প্রিয়াঙ্কার আইনজীবী নীরজ কিষেণ কউল। কিন্তু বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি সঞ্জীব খন্না সাফ জানিয়ে দেন, তাঁরা প্রিয়াঙ্কাকে জামিনে মুক্তি দিতে রাজি। কিন্তু তার জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।
কউল বাক-স্বাধীনতার প্রশ্ন তোলায় বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাক্-স্বাধীনতার অধিকার প্রশ্নাতীত। কিন্তু তাকে কি অন্যের অধিকার লঙ্ঘন করতে দেওয়া যায়? বাক্-স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার অন্য ব্যক্তি কী ভাবে তা গ্রহণ করছে, তার উপরও নির্ভর করছে। যদি অন্য ব্যক্তির খারাপ লাগে, তা হলে ক্ষমা চাইতে হবে, দুঃখপ্রকাশ করতে হবে, না হলে কয়েক দিন জেলে কাটাতে হবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রিয়াঙ্কার ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিতে অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ছবির মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা দেখিয়ে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনি কি এ ভাবে যে কারও ছবিতে যে কারও মুখ বসিয়ে দিতে পারেন?’’
পুলিশের সাইবার সেল অবশ্য সোমবারই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এই মামলার ক্লোজার রিপোর্ট পেশ করে রেখেছিল। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার আইনজীবী বা বিজেপি নেতাদের কাছে সেই তথ্য ছিল না। ফলে সুপ্রিম কোর্টে তাঁরা ক্ষমাপ্রার্থনায় রাজি হয়ে যান। বিচারপতিরা প্রথমে শর্ত দিয়েছিলেন, ক্ষমা চাইলে তবেই জামিনে মুক্তি মিলবে। কিন্তু পরে তা বদলে বিচারপতিরা জানান, মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রিয়াঙ্কার আইনজীবী যুক্তি দেন, তিনি ওই ছবি তৈরি করেননি। সেটি পোস্ট করেছেন মাত্র। তার জন্য তাঁকে জেলে পোরা হয়েছে। এমন অনেকেই শেয়ার করছেন। বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কে তৈরি করেছে, আর কারা প্রচার করছে, তাতে কিছু এসে যায় না। আপনি ধরা পড়েছেন। আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’’ কউল বলেন, ২৫ বছরের একটি মেয়েকে যদি জামিনে মুক্তি পাওয়ার জন্য ক্ষমা চাইতে হয়, তা হলে বাক্-স্বাধীনতার অধিকারে ধাক্কা লাগবে। তা ছাড়া গ্রেফতারের আগেই তিনি পোস্টটি মুছে দিয়েছিলেন। এটি শুধুমাত্র কার্টুন, রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক ছবি ছিল। বিজেপি নেতাদের নিয়েও কত রকম কার্টুন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই ধরনের গ্রেফতারির ঘটনা আগে কোথাও ঘটেনি।
বিচারপতি সঞ্জীব খন্না বলেন, ‘‘নির্বাচন চলছে। উনি একজন বিজেপি নেত্রী। ফলে ওঁর পোস্ট বিপক্ষ শিবির অন্য ভাবে দেখতেই পারে। যদি আপনার কোনও নেতা হত, তা হলে আপনারও খারাপ লাগত। দুঃখপ্রকাশ করতে কি কোনও সমস্যা রয়েছে? আপনার কাজে অন্য কারও খারাপ লাগলে, ক্ষমা চেয়ে নিলে কেউ ছোট হয়ে যায় না। এটা আইনত ভুলের প্রশ্ন নয়। উনি একজন রাজনৈতিক দলের নেত্রী। সাধারণ নাগরিক হলে কোনও সমস্যা হত না। রাজনৈতিক কর্মীদের ক্ষেত্রে বাক্-স্বাধীনতার সংজ্ঞা ভিন্ন।’’
কউল আপত্তি তুলে জানান, ‘‘কেন ওঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে? আগামিকাল যে কাউকে গ্রেফতার করা হবে একটা মিম শেয়ার করার জন্য। তার পর জামিনের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে।’’ বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, তাঁরা শুধু এই ঘটনাতেই ক্ষমাপ্রার্থনার নির্দেশ দিচ্ছেন। আইনি বিষয়ের মধ্যেও ঢুকছেন না। প্রিয়াঙ্কাকে কোন আইনের কোন ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে বাক্-স্বাধীনতার অধিকারে হস্তক্ষেপ হয়েছে কি না, তার ফয়সালা পরে হবে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করা হয়েছে। রাজ্য সরকারি সূত্রের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট জামিনে মুক্তি দেওয়ার আগেই মামলা গুটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যার অর্থ, রাজ্যই বাক্-স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
আজ বিজেপি-র মঞ্চ থেকে যুব মোর্চার নেত্রী পুনম মহাজন বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে। তা চিন্তার বিষয়। সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ প্রিয়াঙ্কাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার জন্য। কিন্তু ক্ষমা চাইতে বলার ফলে বাক্-স্বাধীনতার উপরে প্রশ্নচিহ্ন এসে পড়বে।’’ দলের নেতা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কত কিছু হচ্ছে। আমাদের নেতাদের নিয়ে কত কিছু হচ্ছে।’’ কংগ্রেস নেতারা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ছবি শেয়ার করার জন্য কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের নেত্রী দিব্যা স্পন্দনার উপরে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়েছিল। মণিপুরের সাংবাদিককে জেলে পোরা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy