খাতায়-কলমে রাজ্যে বিজেপির সদস্য সংখ্যা ৬১ লক্ষ, সক্রিয় সদস্য ৬০ হাজার। কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে এঁরা থাকেন কোথায়, সাংগঠনিক বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ বার এমনই প্রশ্ন তুলেছেন বলে বিজেপি সূত্রে খবর। সূত্রের দাবি, শুভেন্দু নিচু তলায় সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টিও চিহ্নিত করেছেন।
বিধাননগরের একটি হোটেলে বুধবার রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে শুভেন্দুও ছিলেন। বিজেপি সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে জেলাশাসকের দফতরে অভিযান-সহ দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিতি কম হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। জেলা স্তরে ১০০-১৫০ লোক নিয়ে কর্মসূচি হলে ‘নেতিবাচক’ প্রভাব পড়ে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এত লোক সদস্য হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা গেলেন কোথায়! এই সূত্রেই শুভেন্দু বলেছেন, ৮০% ক্ষেত্রে টেলিফোনে বুথ কমিটি তৈরি হয়েছে। কমিটি তৈরির ক্ষেত্রে ‘জল মিশিয়ে রিপোর্ট’ না-দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেছেন শুভেন্দু। মণ্ডল, বুথ, শক্তিকেন্দ্রে দলকে আরও সক্রিয় করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু বিরোধী দলনেতা থাকায় রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির সদস্য হওয়া ছাড়া ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতিতে তিনি দলে কোনও সাংগঠনিক পদে নেই। শুভেন্দু অতীতে বার বার বলেছেন, তিনি পরিষদীয় দল দেখেন, সংগঠন দেখেন না। কিন্তু সূত্রের দাবি, এ বারের বৈঠকে দলের সংগঠন নিয়ে শুভেন্দুর মতামত শুনে এটা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে যে, সংগঠনের প্রশ্নেও তিনি এখন যথেষ্টই সক্রিয় হচ্ছেন।
বিজেপি সূত্রে খবর, কড়া অবস্থান নিয়েছেন রাজ্য বিজেপির ভারপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসলও। তিনি আগামী ৭ জুনের মধ্যে বাংলায় অন্তত ৬৫ হাজার বুথে কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপির হিসাব, বাংলার ৬৪০০ বুথ ১০০% সংখ্যালঘুপ্রধান। সেখানে কমিটি তৈরির চেষ্টা করে শক্তি ‘অপচয়’ করতে চায় না দল। বাকি বুথের মধ্যে অন্তত ১০ হাজার বুথে এখনও এজেন্ট বসানোর মতো ক্ষমতা তৈরি হয়নি বলে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় উঠে এসেছে। ওই বুথগুলিতে শক্তিবৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হবে। এই প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার বুথ বাদ দিয়েই আপাতত কমিটি গড়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে। তবে এ বার নিচু তলার রিপোর্ট নয়, বরং জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মাঠে নেমে বুথ কমিটির বিষয়টি যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, “তোতাপুরীকে শ্রীরামকৃষ্ণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রোজ কমণ্ডলু মাজেন কেন? তোতাপুরী বলেছিলেন, এটাই সংস্কার। যত মাজব, ততই পরিষ্কার হবে। বুথ কমিটি তৈরির বিষয়টিও তা-ই। এটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।”
সূত্রের দাবি, কর্মসূচির বিষয়েও বনসল নির্দিষ্ট পথ বেঁধে দিয়েছেন। তিনি রাজ্যে ‘উদ্ভূত ধর্মীয় আবেগ’কে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদ-মালদহ এবং কাশ্মীরের ঘটনা নিয়ে কর্মসূচির সঙ্গেই তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি। সেই মতো পরিকল্পনাও হচ্ছে বলে দাবি করছে রাজ্য বিজেপি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)