Advertisement
০৭ মে ২০২৪

আক্রান্তদের কাছে বিজেপি নেতারা

প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা বিজেপির আছে। কিন্তু, হিংসাত্মক রাজনীতি তাঁরা করতে নারাজ। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার মেজিয়ার ভাড়া গ্রামে গিয়ে এ কথা বললেন বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য।

ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্তের মধ্যে মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্য ও সুভাষ সরকাররা মেজিয়ার ভাড়া গ্রামে আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন।

ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্তের মধ্যে মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্য ও সুভাষ সরকাররা মেজিয়ার ভাড়া গ্রামে আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেজিয়া শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৯
Share: Save:

প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা বিজেপির আছে। কিন্তু, হিংসাত্মক রাজনীতি তাঁরা করতে নারাজ। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার মেজিয়ার ভাড়া গ্রামে গিয়ে এ কথা বললেন বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। গত শনিবার বিজেপি ও তৃণমূলের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল এই ভাড়া গ্রাম। দু’দলেরই বেশ কিছু কর্মী ঘটনায় জখম হয়েছিলেন। বিজেপি সমর্থকদের বাড়িতেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন সেই গ্রামেই আক্রান্ত দলীয় সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করতে যান শমীকবাবু, বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রবীন চট্টোপাধ্যায়, দলের যুবমোর্চার সভাপতি অমিতাভ রায় এবং জেলা নেতৃত্ব।

শমীকবাবু সেখানে অভিযোগ করেন, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ— সব জায়গাতেই সন্ত্রাস চালাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। মেজিয়া কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কয়লা মাফিয়াদের দিয়ে নিয়ে তাঁদের কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘এর পরেও কিন্তু আমাদের কর্মীরা দমে যাননি।’’ তাঁর সংযোজন, “প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা বিজেপির রয়েছে। মানুষ সে কথা জানেন। কিন্তু, হিংসার রাজনীতি আমরা করি না।’’ এ দিন বিকেলে গ্রামে পৌছে বিজেপি-র রাজ্য দল কয়েকটি আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। শমীকবাবুদের কাছে নিজেদের ক্ষোভের কথা উগরে দেন বিজেপি কর্মী-সমর্থক পরিবারের লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার দিন পুলিশের সামনেই তাঁদের উপরে হামলা চালানো হয়েছিল। প্রথম দিকে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। পরে অবশ্য দুষ্কৃতীদের গ্রাম থেকে তাড়িয়েছে।


তাঁদের কাছে মহিলারা অভিযোগ করলেন, মারধর করে তৃণমূল কর্মীরা শাড়ি ছিঁড়ে দেয়। ছবি:অভিজিৎ সিংহ।

সংঘর্ষের ঘটনায় ধৃত বিজেপি কর্মী নিমাই বাউরির বাড়িতে গিয়ে এ দিন দেখা গেল, অ্যাসবেস্টসের ছাউনির একাংশ ভেঙে মাটিতে পড়ে রয়েছে। নুইয়ে রয়েছে গোটা ছাউনিটাই। নিমাইবাবুর স্ত্রী বন্দনা বাউরির অভিযোগ, “বাইরে থেকে শ’য়ে শ’য়ে লোক গাড়ি বোঝাই করে গ্রামে এনে আমাদের উপরে হামলা চালিয়েছিল তৃণমূল। বাড়ি ভাঙচুর করেছে। ইঁট ছুড়েছে বাড়ির ছাউনিতে। ফোন করে আমরা পুলিশকে ডেকেছিলাম। কিন্তু প্রথমে পুলিশ কিছুই করতে পারেনি। পরে অবশ্য সবাইকে গ্রাম থেকে তাড়িয়েছিল।’’ এই গ্রামেরই বিজেপি সমর্থক পরিবারের বধূ রেখা বাউরি, চম্পা রুইদাসরা বলেন, “আমরা ভয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের ঘরের ছেলেদের কথা বলবে বলে ডেকে থানায় নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করল।’’ তাঁদের ক্ষোভ, মার খেলেন তাঁদের পরিবারের লোকেরা। আবার গ্রেফতারও করা হল তাঁদের!

মারপিটের ঘটনার দিনই সাত জন বিজেপি কর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। রাতে তৃণমূলের তরফে নির্দিষ্ট অভিযোগ করা হলে আটক সকলকেই গ্রেফতার করা হয়। রবিবার রাতে বিজেপি-র তরফে পালটা অভিযোগ দায়ের করা হয় মেজিয়া ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়-সহ ২০ জনের নামে। অভিযোগ পাওয়ার পুর পুলিশ দু’জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। যে সমস্ত বিজেপি কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তাঁদের ব্লক প্রশাসনের তরফে ত্রিপল না দেওয়ায় পুলিশের কাছে ক্ষোভ করেছেন বিজেপি নেতা সুভাষবাবু। তিনি বলেন, “ঘটনার পরে চার দিন কেটে গেল। অথচ যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, প্রশাসনের তরফে তাঁদের কোনও ত্রাণ দেওয়া হয়নি। একটা ত্রিপল অবধি দেওয়া হয়নি।’’ অবিলম্বে ত্রিপলের ব্যবস্থা করার জন্য গ্রামে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। এ দিন ভাড়া গ্রামে বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিশাল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। এসকর্ট করে বিজেপি-র প্রতিনিধিদের গ্রামে নিয়ে যায় পুলিশ। দলের জেলা মুখপাত্র অজয় ঘটক, জেলা সহ-সভাপতি জীবন চক্রবর্তীরা বলেন, “রাজ্যের দল মেজিয়ায় আসায় আমাদের কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে।’’

যদিও বিজেপি নেতারা আসায় এলাকায় উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেই দাবি করছেন মেজিয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা অর্ধগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মলয়বাবু। তাঁর বক্তব্য, “ওই দিন বিজেপির প্ররোচনাতেই ভাড়া গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। পুলিশের হস্তক্ষেপে উত্তেজনা কমে পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছিল। তবে এ দিন বিজেপি বিধায়ক যে ভাষায় কথা বলে গিয়েছেন, তাতে বিজেপি কর্মীদের পরোক্ষে উস্কানি দেওয়া হয়েছে। এতে এলাকার পরিস্থিতি আরও তপ্ত হবে।’’ উল্লেখ্য ভাড়া গ্রামটি অর্ধগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। আক্রান্ত পরিবারগুলিকে ত্রিপল দেওয়ার বিষয়ে মলয়বাবু বলেন, “পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি পাঠিয়ে বাড়িগুলি খতিয়ে দেখে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Mejia trinamool police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE