Advertisement
১৬ মে ২০২৪
WB panchayat Election 2023

পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বাজতেই প্রচার পরিকল্পনা বদল মোদী-শাহদের, রাজ্য নেতাতেই ভরসা রাজ্যে

মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তিতে প্রচার কর্মসূচি শুরু হয়ে গেলেও বাংলায় তা স্থগিত রাখা হচ্ছে। আসছেন না মোদী, শাহ, নড্ডারা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বেজে যাওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত।

WB Panchayet Election 2023

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মোদী-শাহ রাজ্যে নয়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ১৬:০৪
Share: Save:

শুধু জুন মাসে নয়, জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলায় আসার কোনও পরিকল্পনা নেই। বিজেপির তরফে আগে সফর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হলেও, পঞ্চায়েত নির্বাচন না-মেটা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডারও রাজ্যে আসার সম্ভাবনা নেই। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত, গ্রামবাংলার ভোট লড়বেন রাজ্য নেতারাই। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা থাকলেও, অন্য কোনও শীর্ষ নেতা, অন্য রাজ্যের নেতা বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে অংশ নেবেন না। মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলায় যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল, তা-ও জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আপাতত নজর শুধু পঞ্চায়েত ভোটেই।

মে মাসে মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তি হয়। এই সময়ে কেন্দ্র কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী সাফল্য পেয়েছে তা তুলে ধরতে গোটা দেশেই প্রচার কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। এই রাজ্যেও বিজেপির এক হাজারটি সাংগঠনিক মণ্ডলে সভা করার কথা ছিল জুন, জুলাই ও অগস্টে। অর্থাৎ প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় কমপক্ষে তিনটি করে সভা তিন মাসে। শুধু জুন মাসেই ২৯৪টি বিধানসভা আসন এলাকায় একটি করে সভা করার কথা ছিল। কোথায় কোন নেতা যাবেন তা-ও ঠিক করা হয়ে গিয়েছিল। সেই কর্মসূচি শুরুও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় আপাতত তা স্থগিত। ভোটের পরে এই কর্মসূচি আবার শুরু করা হবে কি না, তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঠিক করা হবে বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে।

সাফল্য প্রচার কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবেই জুন মাসে মোদী, শাহ এবং নড্ডার উপস্থিতিতে রাজ্যে তিনটি সভা হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। এর পিছনে মূলত তিনটি কারণ। প্রথমত, তিনটি সভাই হওয়ার কথা ছিল শহর এলাকায়। কিন্তু গ্রামবাংলার ভোটের সময়ে তা করার কোনও অর্থ দেখছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। দ্বিতীয়ত, এখন বড় আকারে সভা করা হলে সেখানে কর্মী-সমর্থক জড়ো করা কঠিন। সভার আয়োজনের থেকেও রাজ্য নেতাদের বেশি দায়িত্ব পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা ও প্রচার। তৃতীয় একটি কারণও রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক গোটা রাজ্যে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে সফর করেছেন। এখনও কয়েক দিন চলবে তাঁর কর্মসূচি। তিনিও আলাদা করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে বিজেপিও প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সর্বভারতীয় সভাপতিকে এই সময়ে রাজ্যে আনা সমীচীন মনে করছে না। কোনও প্রথম সারির কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রীকেও আনতে চায় না বিজেপি।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনেক আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্য নেতাদেরই লড়াই। সাম্প্রতিক কালে শাহ, নড্ডা রাজ্যে এলেও পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে কিছু বলেননি। গোটা দেশের সঙ্গে বাংলাতেও এখন থেকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে নজর তাঁদের। সেটা তাঁরা প্রকাশ্য সভায় বা সাংগঠনিক বৈঠকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু এই ভোটে সেটা হবে না জেনেই প্রচার পরিকল্পনা তৈরি করেছে রাজ্য বিজেপি। রাজ্য নেতারা নিজেদের জেলায় এই সময়ে বেশি করে সময় দেবেন। একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাংসদ, বিধায়কদেরও। তবে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজের জেলার বাইরেও প্রচারে যাবেন। একই সঙ্গে পুর এলাকার নেতা বা বিধায়কদের নিজের জেলাতেই প্রচার বা সাংগঠনিক কাজকর্মের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে ঠিক করেছে গেরুয়া শিবির।

মোদীর ন’বছরের ‘সাফল্যগাথা’ প্রচারের ‘মহা জনসম্পর্ক’ কর্মসূচি তবে পুরোপুরি বাতিল ঘোষণা হচ্ছে না রাজ্যে। গেরুয়া শিবিরের যা পরিকল্পনা তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটে গেলে পুজোর আগে পর্যন্ত সেই অভিযান ফের শুরু হবে। আপাতত পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারেই জোর দেওয়া হবে। সেই কারণে, ‘মহা জনসম্পর্ক’ কর্মসূচির অন্তর্গত যে যে সভা গ্রামাঞ্চলে হওয়ার কথা ছিল সেগুলি হবে। তবে বেশি বড় সভা করার লক্ষ্য নেই বিজেপির। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই কর্মসূচি বাদ যাচ্ছে এমন ভাবার কারণ নেই। গ্রামে ভোটের সময়ে আমাদের পঞ্চায়েত এলাকায় সময় বেশি দিতে হবে। এই সময়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার যে কর্মসূচি ছিল তা তো হবেই।’’ কিন্তু মোদী সরকারের কাজকর্মের প্রচার কি করা হবে? সুকান্ত বলেন, ‘‘কেন হবে না? ওটাই তো আমাদের সম্পদ। দেশে যা যা হয়েছে তার থেকে তো বাংলা বাদ নয়। তবে কিছু কিছু প্রকল্পের সুবিধা বাংলার মানুষ পাননি। গ্রামের মানুষের জন্য বিজেপি সরকার কী কী করেছে সেটার সঙ্গে কী ভাবে তৃণমূল চুরি করেছে, রাজ্য সরকারের প্রশ্রয়ে দুর্নীতি চলেছে, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হয়েছে সে সব কথাই তো সাধারণকে বোঝানো হবে।’’ সুকান্তের দাবি, গ্রামের মানুষ সব জানেন। এখন শুধু নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়াটাই কাজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE