মাথায় আঘাত। বুধবার বিজেপির মিছিলে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মাথায় এসে পড়ে একটি খাবারের প্যাকেট। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
তৃণমূল যত তাদের আক্রমণ করছে, দৃশ্যত ততই উদ্যমী হয়ে উঠছে বিজেপি। লোকসভায় তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই গ্রেফতার করার পর মঙ্গলবার বিজেপি-র রাজ্য দফতর ঘেরাও করে ইটবৃষ্টি করে তৃণমূল। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, তাতে পোয়া বারো হয়েছে তাঁদের!
দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্য বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বুধবার কলকাতায় বসে ওই হিংসাত্মক আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল শুধু এ রাজ্যে আছে। কিন্তু বিজেপি কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা— গোটা দেশেই আছে। বিজেপি যদি হিংসার পথে যায়, তা হলে দিদি, আপনি কি ঘুরে বেড়াতে পারবেন?’’ কৈলাসের আরও বক্তব্য, ‘‘দিল্লিতে তৃণমূলের সাংসদরা কর্মসূচি করছেন। আমরা যদি সেটা আটকাতে চাইতাম, তা হলে কি তৃণমূল দিল্লিতে ঢুকতে পারত?’’ বিজেপি-র অন্দরের ব্যাখ্যা, তৃণমূল মঙ্গলবার তাদের ব্যাটের ডগায় বল দিয়েছিল। কৈলাস এ দিন তাতে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তৃণমূল আগ বাড়িয়ে যত এ রকম আক্রমণ করবে, ততই গেরুয়া শিবিরের সুবিধা হবে। অর্থাৎ, এ রাজ্যে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হলেও তৃণমূলের আক্রমণের জেরেই রাজ্য জুড়ে গুরুত্ব পেয়ে যাবে দল।
বিধানসভা ভোটের পর থেকে বিজেপি-কেই মূল নিশানা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিপক্ষের স্বীকৃতি পেয়ে বিজেপি-ও চাঙ্গা হয়ে উঠছে। পাশাপাশি, কংগ্রেস এবং বামেরা এ রাজ্যে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের বিরোধী রাজনীতির পরিসর ক্রমেই দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি। তবে কৈলাস এ দিন স্পষ্ট করে দেন, তা বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা হিংসার রাজনীতিতে যাবে না তাঁর দল। বিজেপি আন্দোলন চালাবে গণতান্ত্রিক কাঠামোর শর্ত মেনে।
তাপস পাল ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কেও গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। তৃণমূলের মন্ত্রীদের একটি দল এ দিন রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছেও একই দাবি জানিয়েছে। তার পাল্টা হিসাবে তৃণমূলের হিংসার বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কোর কমিটির সদস্য শমীক ভট্টাচার্য, সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ দলের নেতারাও এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। পরে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন ৩৫৬/১এ ধারায় কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠান। রাষ্ট্রপতি শাসন আমরা এখনই চাইছি না। তার আগেই যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, তাই এই অনুরোধ।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও এ দিন বিক্ষোভ-সংঘর্ষের ঘটনাগুলি নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে।
তৃণমূলের সঙ্গে যুদ্ধের আবহে বিজেপি-র কিষাণ মোর্চার মিছিলও এ দিন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে হাঁটেন দিলীপবাবু, লকেট-সহ রাজ্য নেতৃত্ব। মিছিল শুরুর সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আচমকা লকেটের মাথার উপর একটা খাবারের ভারী প্যাকেট এসে পড়ে। তাঁর যথেষ্ট আঘাতও লাগে। পরে লকেট বলেন, ‘‘মিছিলটা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য আমি ওই ঘটনা নিয়ে কাউকে কিছু বলিনি। পরে দিলীপদাকে জানিয়েছি। নিশানা করে না মারলে ও ভাবে লাগার কথা নয়।’’
তবে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দিলীপ-কৈলাসদের কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগে ইনদওরের মেয়রের পদ থেকে কৈলাসকে বিজেপি-ই সরিয়ে দিয়েছিল। ওঁর নিজেরই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।’’ তা ছাড়া ৩৫৬ ধারা প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিধানসভায় এক জন সদস্য নিয়ে ওঁরা অনেক কিছুই দাবি করতে পারেন! আমেরিকাও যেতে পারেন! যান!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy