Advertisement
E-Paper

স্বস্তি তৃণমূলে, বেসামাল বিজেপি

জেলা বিজেপির অন্দরে জল্পনাটা উড়ছিল কিছুদিন ধরেই। জেলা পুলিশ কর্তা ও শাসক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে গোপন ‘রফা’-র কথাও রটছিল। পাকা খবর মিলল শুক্রবার! নিহত সাগর ঘোষের ছেলে হৃদয় ঘোষ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এতদিনের অভিযোগ থেকে সরে এলেন!

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০২:০১

জেলা বিজেপির অন্দরে জল্পনাটা উড়ছিল কিছুদিন ধরেই। জেলা পুলিশ কর্তা ও শাসক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে গোপন ‘রফা’-র কথাও রটছিল। পাকা খবর মিলল শুক্রবার!

নিহত সাগর ঘোষের ছেলে হৃদয় ঘোষ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এতদিনের অভিযোগ থেকে সরে এলেন! শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমে দিনভর এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শুধু রাজ্য নয়, জেলাজুড়ে বিজেপির সব মহলে তোলপাড় হয়েছে। শোনা যাচ্ছে শাসক দলে নাম লেখাতে পারেন, এমন বিজেপি নেতৃত্বের পর পর আরও নাম। তাঁদের অনেকেরই এ দিন প্রকাশ্যে ক্ষোভ, ‘‘কর্মী-সমর্থকদের কোনও খবরই রাখেন না জেলার নেতারা। একের পর এক মামলায় জড়িয়ে জেরবার হচ্ছেন নীচু তলার কর্মীরা-সমর্থকরা। অথচ, রাজ্য নেতৃত্ব টিভিতে মুখ দেখাতেই ব্যস্ত থাকেন জেলা সফরে এসে।’’

জেলা বিজেপির কনভেনার অজুর্ন সাহা বলেন, ‘‘কর্মী-সমর্থকদের পাশে বিজেপি নেতৃত্ব থাকে না কথাটা ঠিক নয়। সদাই শেখের মামলায় আইন পরিষেবার সাহায্যের জন্য শুক্রবারই তিন সদস্যের নেতা-কর্মী দল দিল্লি যাচ্ছেন।’’

হৃদয় ঘোষের এ দিনের সিদ্ধান্ত শুনে অনুব্রত বলেন, ‘‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল।’’ স্বাভাবিক ভাবেই, জেলায় ব্যাপক অস্বস্তিতে বিজেপি। জোর জল্পনা ছড়িয়েছে দলের অন্দরে। এহেন ডামাডোলের পরিস্থিতির মধ্যে, বিধান সভা নির্বাচনের আগে ঘর আগলানো কার্যত বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের কাছে। এমনটাই মনে করছে জেলার রাজনীতির কারবারীরা। বিজেপির জেলা নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে সমস্ত বিষয় ‘রটনা’ এবং শাসক দলের ‘অপপ্রচার’ বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন।

ঘটনা হল, শাসক দল তৃণমূলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে এবং গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় টিকিট না পেয়ে কার্যত বিক্ষুব্ধ হিসেবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দলেরই অনেকে। এমনিকি পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে বার কয়েক গণ্ডগোল বেধেছে তাঁদের মধ্যে। খুন হতে হয়েছে নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল কর্মী সাগর ঘোষকে। সেই ঘটনাকে ‘হাতিয়ার’ করে জেলায় বিক্ষুব্ধদের এক ছাতার নীচে এনে দলে টেনেছিল দুধকুমারের নেতৃত্বে বিজেপি।

যত দিন গিয়েছে, এই সাগর ঘোষ হত্যা মামলা কার্যত শাসক দল তৃণমূলের গলার কাঁটা হয়েছে। জেলা পুলিশ, সিআইডি, সিটের তদন্ত থেকে শুরু করে মামলাটি জেলা আদালত, হাইকোর্টে হয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এমনকী সাগর ঘোষ খুনের মামলার ঘটনায় জেলা আদালতের শুনানিতে স্থগিতাদেশ চেয়ে এবং ওই খুনের তদন্ত সিবিআইকে দিয়ে করানোর আর্জিতে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নিহতের পরিবার। শুক্রবার নিহতের পরিবার সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তের আর্জি প্রত্যাহারের পাশাপাশি জেলা আদালতের শুনানির স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদনও প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছে। এবং তা মঞ্জুর করেছেন বিচারপতি।

এ দিন নিহতের পরিবারের সব সময়ের সঙ্গী তথা পঞ্চায়েত ভোটের পর বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিক্ষুব্ধ নেতা নিমাই ঘোষ বলেন, ‘‘আর্থিক সামর্থ্য নেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। শুধু তাই নয়, দলের কাছে থেকে সেই মতো সহযোগিতা এবং পাশে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। অনেক কর্মী জেলে আছেন। তাদের জন্য এবং আইনি পরামর্শও এবং সহায়তার জন্য দল ভাবছে না। তাই নিহতের পরিবার তাদের আর্জি সুপ্রিম কোর্টে প্রত্যাহার করেছে। স্বাভাবিক কারণে যারা পাশে দাঁড়াবেন, সেই দিকেই যাবে।’’

একই সুর হদয়েরও। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানান হৃদয় ঘোষকে নিয়ে জেলা তৃণমূলের অন্যতম সহ-সভাপতি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় দেশের শীর্ষ আদালতে গিয়েছিলেন। এমনকী দিনভর হৃদয় তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ রাখলেও, অনেকের সঙ্গে মলয়বাবুর ফোনেই কথা বলছেন। সেই নেতার দাবি, এতেই স্পষ্ট হৃদয় ঘোষ নিজের ‘বাড়িতে’ ফিরছে। একটু স্পষ্ট করে বললে তৃণমূলে ফিরছে হৃদয় ঘোষ এবং তার সঙ্গীসাথীরা। দিল্লি থেকে ফোনে হৃদয় বলেন, ‘‘আর্থিক সামর্থ্য নেই। পরিবারের কথা চিন্তা ভাবনা করেই, সিবিআই তদন্তের আর্জি থেকে সরে দাঁড়ানো এবং নিম্ন আদালতের শুনানি প্রক্রিয়ার স্থগিতাদেশ চেয়ে আর্জিও প্রত্যাহার করেছি।”

দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ নিয়ে বিজেপির জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা এ দিন বলেন, “শাসক দল তৃণমূলের অপপ্রচার করছে। মাঝে যেমনটা রটিয়েছিল, তেমনটাই রটনা হচ্ছে।” কেন দল বিজেপি ছাড়ছেন হৃদয়বাবু? অর্জুনবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘দল পাশে দাঁড়ানোর পরেও যদি কেউ যায়, তাদেরকে তো জোর করে ধরে রাখা যায় না। তবে দল নয়, তারা অন্য কিছু পাওয়ার জন্যও তৃণমূলে যাচ্ছেন। ভুল বুঝতে পারবেন।’’ প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি তো দলে নেই। তবে বিভিন্ন দল থেকে কর্মী সমর্থক নেতারা এসেছিলেন। কিন্তু দল তাদেরকে ধরে রাখতে পারেনি। কি আর করা যাবে। আমি আর কি বলতে পারি?”

কী বলছেন অনুব্রত?

বেশ খোশ মেজাজেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এ দিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। বলেন, “আমরা এক সঙ্গে দল করেছি। পরিবারে মতানৈক্য থাকতেই পারে। ঘরের ছেলে। ঘরে ফিরছে।” সাংবাদিকদের ভিতর থেকে প্রশ্ন উড়ে আসে, ‘‘কোনও চাপ দেওয়া হয়েছে? বিরোদীরা অভিযোগ করছেন, ‘কোনও রফা হয়েছে’।

জেলা সভাপতির সংক্ষিপ্ত উত্তর, “আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি। আইনকে ভক্তি করি!’’

bjp on backfoot parui bjp birbhum bjp parui cbi hriday ghosh retreat hriday ghosh bjp hriday ghosh cbi hriday ghosh backfoot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy